ঘাটের কথা লুকনো এই কলকাতা শহরের বুকে...

Tripoto
Photo of ঘাটের কথা লুকনো এই কলকাতা শহরের বুকে... 1/1 by Deya Das
ছবি সংগৃহীত

কম-বেশি ঘুরতে আমরা সকলেই ভালোবাসি। কিন্তু কখনও কখনও যখন জীবনে অবসন্নতা নেমে আসে তখন পাহাড়-সমুদ্র কিংবা মরুভূমি সেই অবসাদগ্রস্থ মনকে ঠিক করতে ব্যর্থ হয়। আর ঠিক তখনই মনে হয় কোন এক শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে বসে দু'দণ্ড প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করার কথা। পড়ন্ত বেলায় সূর্যের আলো গোধূলি লগ্নে যখন জলের উপর লালচে রঙের আঁকিবুকি কাটে, ঠিক সেই সময় নদীর ঘাটে বসে একা তা উপভোগ করার আনন্দ কিন্তু বেশ অন্যরকম। কিংবা অনেকদিন পরে কোনও বন্ধুর সঙ্গে বেরিয়ে গঙ্গার ঘাটের ধারে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়ার মজাও কিন্তু জীবনে অন্য মাত্রা এনে দেয়। ঠিক এইরকম ভাবে মন ভাল করে দেওয়ার জন্য কিছু গঙ্গার ঘাটের কথা নিয়ে আজ আমরা চলে এসেছি আমাদের একটি নতুন ব্লগে। ভাল লাগলে পুরোটা পড়বেন আর এইরকমই সুন্দর সুন্দর জায়গার সন্ধান পেতে চোখ রাখুন আমাদের ট্রিপটো বাংলার ফেসবুক পেজে (https://www.facebook.com/TripotoBangla/)।

১. প্রিন্সেপ ঘাট-

১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের সময় হুগলি নদীর তীরে এই ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান পন্ডিত জেমস প্রিন্সেপ-এর স্মৃতির উদ্দেশ্যে ডব্লিউ. ফিজগেরাল্ড তাঁর নিজস্ব নকশাকৃত প্যালাডিয়াম বারান্দা বিশিষ্ট একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন এই জায়গায়। এটি কলকাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি গঙ্গার ঘাট। প্রিন্সেপ ঘাটে ছবি ও ভিডিও তোলার জন্য বহু মানুষ ক্রমাগত ভিড় করেন। শুধু তাই নয়,এই ঘাটে অনেক বাংলা এবং হিন্দি সিনেমার শুটিং হয়েছে। এই জায়গা থেকে বিদ্যাসাগর সেতুটি দেখতে অপূর্ব সুন্দর লাগে।

২. আউটরাম ঘাট-

উনিশ শতকের শেষের দিকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন সৈন্য জেমস আউটরাম-কে উৎসর্গ করে এই ঘাটটি নির্মাণ করা হয়। বাবুঘাটের দক্ষিনে অবস্থিত এই ঘাটটি উপনিবেশিক যুগে একটি গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ বন্দর ছিল। এই ঘাট থেকে বড় বড় জাহাজ পূর্ববাংলা ও বর্মা-তে দিত। শুধু তাই নয়,এখানে অনেক মুখরোচক খাবারের দোকান রয়েছে, যেগুলো বেশ জনপ্রিয়। পাশেই রয়েছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ময়দান, মিলিনিয়াম পার্ক ইত্যাদি।

৩. বাবুঘাট-

একটা পড়ন্ত বিকেলের ছবি (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Babu Ghat, Bhadreswar, West Bengal, India by Deya Das

এটি কলকাতা শহরের সবচেয়ে প্রাচীন গঙ্গা ঘাট। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে রানি রাসমণি তাঁর স্বামী বাবু রাজ চন্দ্র দাসের নামে এই ঘাটটির নামকরণ করেন। বর্তমানে ফেরি করে এই ঘাট থেকে হুগলি নদী পার করে সবাই হাওড়া স্টেশনে পৌঁছয়।

৪. আর্মেনিয়ান ঘাট-

ছবি সংগৃহীত

Photo of Armenian Ghat, Kolkata, West Bengal, India by Deya Das

প্রাক্কালে একসময় কলকাতা আর্মেনিয়ানদের বসতি ছিল। ১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে মানভেল হাজ্জার মালিয়ান নামে এক আর্মেনিয়ান ব্যবসায়ী এই ঘাটটি নির্মাণ করেছিলেন। ঘাটটির প্রধান আকর্ষণ হল এটি লৌহের কাঠামো দ্বারা নির্মিত। এছাড়াও এই ঘাটে রয়েছে কুস্তির আখড়া।

৫. মল্লিক ঘাট-

মল্লিক ঘাটের সৌন্দর্য (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Howrah Bridge, Howrah, West Bengal, India by Deya Das

হাওড়া ব্রিজের ঠিক নিচে অবস্থিত মল্লিক ঘাটটি ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে নারায়ন চাঁদের ছেলে রাম মোহন মল্লিক স্থাপন করেন। এই ঘাটের পাশে অবস্থিত ফুলের বাজারটি প্রায় ১৩০ বছরের পুরনো এবং ধরে নেওয়া হয় এটি ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় ফুলের বাজার।

৬. চাঁদপাল ঘাট-

এই ঘাটের সৌন্দর্যও বেশ অন্যরকম

Photo of Chandpal Ghat, Strand Bank Rd, Fairley Place, B.B.D. Bagh, Kolkata, West Bengal, India by Deya Das

চাঁদপাড়া নামক ছোট একজন ব্যবসায়ীর নামে এই ঘাটটি পরিচিত। এক সময় এটি কলকাতার অন্যতম ব্যস্ত ফেরিঘাট হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। স্যার ফিলিপ ফ্রান্সিস, ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস এই ঘাটে অবতরণ করেছিলেন। চাঁদপাল ঘাট থেকে দুটি ফেরি পরিষেবা রয়েছে। একটি হাওড়া এবং অন্যটি রামকৃষ্ণপুর ও শিবপুরে যায়।

৭. জগন্নাথ ঘাট-

প্রতিদিনের ব্যস্ততার ছবি (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Jagannath Ghat, Strand Bank Road, Kolkata, West Bengal, India by Deya Das

শোভারাম বসাক নামে একজন টেক্সটাইল ব্যবসায়ী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। তারপর তিনি এই ঘাটটি নির্মাণ করেছিলেন। এই ঘাটটি মল্লিক ঘাটের কাছে অবস্থিত। ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতি অবলম্বন করে এই ঘাটটি তৈরি করা হয়েছিল।

৮. বাগবাজার ঘাট-

ঘাটের সৌন্দর্য (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Bagbazar Ghat, Bagbazar Street, Bag Bazar Colony, Baghbazar, Kolkata, West Bengal, India by Deya Das

পূর্বে রোগো মিতারের ঘাট নামে পরিচিত হলেও পরবর্তীতে রঘু মিত্র-র ছেলে গোবিন্দরাম মিত্র এই ঘাটটির নামকরণ করেন বাগবাজার ঘাট। এই ঘাটের একটি অংশ মায়ের ঘাট নামে পরিচিত, যেখানে মা সারদা নিত্যদিন তাঁর স্নানকার্য সম্পন্ন করতেন। তবে বর্তমানেও কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করার আগে বহু মানুষ এই ঘাটে স্নান করতে আসেন।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।