মালাজপুরের এই ভূতমেলায় রয়েছে না বলা কিছু রহস্য... একমাত্র সাহসী ব্যক্তি হলেই এই ভূতমেলাতে যেতে পারেন

Tripoto

প্রতি বছর, মাঘ মাসের (২১ জানুয়ারি - ১৯ ফেব্রুয়ারি) ঠিক আগের পূর্ণিমার রাতে, মধ্যপ্রদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রাম মালাজপুরের আকাশ বাতাস ভরে ওঠে রক্তজল করা আর্তনাদে। শুধু আজ নয়, এ হয়ে আসছে বিগত ৩০০ বছর ধরে। সময় হয়েছে 'ঘোস্ট ফেয়ার' বা ভূতমেলার।

নিস্তব্ধ পরিবেশের মধ্যে জমাট বাঁধা অন্ধকারে রহস্যঘেরা পরিবেশ (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Malajpur, Madhya Pradesh, India by Aninda De

রাতের বেলাতে হাড়হিম করা এক দৃশ্য আমাদের সামনে, যে সকল অশুভ আত্মা মানুষজনের ভিতরে বাসা বেঁধেছে, তাদের থেকে ভূত ছাড়ানোর চেষ্টা চলছে। কয়েকজন কী করবে ভেবে না পেয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। বেশ কিছু মহিলা উসকো খুসকো চুলে অবিন্যস্তভাবে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন, তাদের আত্মীয় স্বজনরা ধরে রেখেছেন তাদের। কেউ কেউ শেকলে বাঁধা, যাতে পালাতে না পারেন। অজানা কোনও আতঙ্কে মৃগীরোগীদের মতো কেউ কেউ কাঁপছেন - কেউ উন্মাদের মতো চিৎকার করতে করতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন।

ভূত ছাড়ানোর কৌশল (ছবি রয়টার্স)

Photo of মালাজপুরের এই ভূতমেলায় রয়েছে না বলা কিছু রহস্য... একমাত্র সাহসী ব্যক্তি হলেই এই ভূতমেলাতে যেতে পারেন by Aninda De

গ্রামবাসীরা দেখছেন ভূত তাড়ানোর বিভিন্ন কৌশল (ছবি সংগৃহীত)

Photo of মালাজপুরের এই ভূতমেলায় রয়েছে না বলা কিছু রহস্য... একমাত্র সাহসী ব্যক্তি হলেই এই ভূতমেলাতে যেতে পারেন by Aninda De

মালাজপুরের মন্দিরের ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার পূজারীরা মন্ত্রোচ্চারণ শুরু করলেন। ভূত ছাড়ানোর সময় উপস্থিত। উপাচার যেখানে হবে, আস্তে আস্তে মানুষজন সর্পিল গতিতে ভিড় করতে শুরু করল। দেখে মনে হচ্ছে অশুভ শক্তি থেকে মুক্তি খুঁজছেন প্রচুর মানুষ। যাদের ওপর ভূত ভর করেছে, চুলের মুঠি ধরে তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া শুরু করলেন পূজারীরা, সঙ্গে শুরু হল বেধড়ক ঝাঁটাপেটা। পূজারীদের মতে শুধু এভাবেই নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচারিত ভূতেদের ভয় দেখিয়ে কোণঠাসা করা সম্ভব। "তোমরা করা?" পূজারীদের তরফ থেকে আত্মাদের প্রতি ভেসে আসে একের পর এক প্রশ্ন "এখানে কোথা থেকে এসেছ?"

ঝাড়ফুঁক চলাকালীন কোনও এক সময়ে পূজারী নিশ্চিত হয়ে ঘোষণা করেন যে আক্রান্ত ব্যক্তি সত্যিই ভূতগ্রস্ত এবং যতক্ষণ না তার দেহ ও মন থেকে ভূত যাচ্ছে ততক্ষণ তাকে মারধর করা হয়। অবশেষে আক্রান্ত মানুষটি চেঁচিয়ে ওঠে "গুরু মহারাজ দেওজির জয়" এবং বোঝা যায় সব রকম অশুভ আত্মা তার দেহ থেকে নিষ্কাশিত হয়েছে। মনে করা হয় যে একবার দেহ থেকে এই আত্মারা বেরিয়ে গেল সেই আত্মারা নিকটবর্তী বট গাছে উল্টো হয়ে ঝুলে পড়ে। ভূত ছাড়ানোর পর এরকম বেশির ভাগ আত্মাই অশরীরী হয়ে এভাবে কিছু নির্দিষ্ট স্থানে আজীবনকাল আশ্রয় নেয়।

স্থানীয়দের বিশ্বাস অশুভ আত্মারা নিকটবর্তী কোনও বটগাছে আশ্রয় নেয় (ছবি সংগৃহীত)

Photo of মালাজপুরের এই ভূতমেলায় রয়েছে না বলা কিছু রহস্য... একমাত্র সাহসী ব্যক্তি হলেই এই ভূতমেলাতে যেতে পারেন by Aninda De

বার্ষিক এই অনুষ্ঠানের পিছনের প্রসঙ্গটা বুঝতে পারলে হয়তো গোটা ব্যাপারটা একটু পরিষ্কার হবে। অষ্টাদশ শতকে দেওজি মহারাজ নামক এক সিদ্ধ পুরুষ মালাজপুরে আসেন এবং কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটান, যেমন মাটি থেকে গুড় তৈরি বা পাথরকে নারকোলে রূপান্তরিত করা। আসতে আসতে তিনি নিজের অলৌকিক শক্তিবলে স্থানীয় গ্রামবাসীদের অশুভ শক্তির কবল থেকে রক্ষা করতে শুরু করেন। তার নামানুসারে মন্দির স্থাপন করা হয়, এবং কিছু পূজারী, যারা নিজেদের দেওজি মহারাজের উত্তরসূরি হিসেবে দাবি করেন, তারা আজও এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন।

অনুষ্ঠানের বিভিন্ন প্রক্রিয়া (ছবি সংগৃহীত)

Photo of মালাজপুরের এই ভূতমেলায় রয়েছে না বলা কিছু রহস্য... একমাত্র সাহসী ব্যক্তি হলেই এই ভূতমেলাতে যেতে পারেন by Aninda De

কয়েকশ বছর পার করেও মালাজপুরের গ্রামবাসী এবং পূজারীরা মিলে এই ঐতিহ্যটিকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। গোটা ব্যাপারটি কুসংস্কারগ্রস্ত হাবিজাবি মনে হলেও, এখনও প্রতি বছর হাজার হাজার সাধারণ মানুষ মালাজপুর ছুটে যান; তাদের মনে একটাই বিশ্বাস, এই গ্রামে গেলেই পাওয়া যাবে অলৌকিক শক্তিদের থেকে মুক্তির উপায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা কিন্তু তাঁদের জবানীতে দৃঢ় ভাবে জানিয়েছেন তারা কী দেখেছেন - আপাত অসুস্থ এবং ভূতগ্রস্ত মানুষজন মুহূর্তের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মনোবিজ্ঞানীরা কিন্তু এই চমৎকারের কারণ হিসেবে রোগীদের মনস্তত্বকেই দায়ী করেছেন। মানবাধিকার কর্মীরা বেশ কয়েকবছর ধরে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করার চেষ্টা করছেন কিন্তু তারা এখনও সক্ষম হননি। কুসংস্কারের কথা বাদ দিয়ে দেখলে কিন্তু এই মেলাটি প্রচন্ড জনপ্রিয় এবং এখানে ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা আপনি কিছুতেই ভুলতে পারবেন না।

( মানুষের মনের মধ্যে প্রথাগত ধারণার বিপক্ষে কিংবা অন্ধ কুসংস্কারের প্রতি আলাদা গুরুত্ব দেওয়া এই লেখার উদ্দেশ্য নয়, বাস্তবিকভাবে আমাদের সমাজে প্রচলিত শতাব্দীপ্রাচীন কাল ধরে প্রচলিত এক অনুষ্ঠানের বিবৃতি উঠে এসেছে লেখাটিতে।)

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন

(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)