ন্যায়ের খোঁজে গোলু দেবতার মন্দিরে...

Tripoto
Photo of ন্যায়ের খোঁজে গোলু দেবতার মন্দিরে... by Bongyatri - Sourav and Anindita

উত্তরাখণ্ডে এমন কিছু কিছু মন্দির রয়েছে যার জনপ্রিয়তা আমাদের দেশ পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। আলমোড়া থেকে 9 কিলোমিটার দূরে জাগেশ্বর ধাম যাওয়ার রাস্তায় অবস্থিত চিতই এর গোলু দেবতা মন্দির সেরকমই একটা জায়গা। বহু দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসে এই মন্দিরে সঠিক ন্যায়ের আশায়। উত্তরাখণ্ডের কুমাউন অঞ্চলে আর পূর্ব গাড়োয়াল অঞ্চলেই ন্যায়ের দেবতা এই গোলু দেবতার উপাসনা বেশি মাত্রায় হয়ে থাকে। কিন্তু কে এই গোলু দেবতা। মনে করা হয় এই গোলু দেবতা গৌর ভৈরব অর্থাৎ শিবের অবতার। গোলু দেবতা সম্পর্কে অনেক গল্প শোনা যায়। অনেকে মনে করেন যে এই গোলু দেবতা আসলে কত্যুরি রাজা ঝাল রাই আর রানী কালিঙ্কার সন্তান। আবার অনেকে মনে করেন ১৬৩৮ থেকে ১৬৭৮ সাল নাগাদ চন্দ বংশীয় রাজা বাজ বাহাদুরের সেনা প্রধান ছিলেন এই গোলু দেবতা যিনি যুদ্ধ করতে করতে মারা যান আর তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যেই চিতইতে এই গোলু মন্দিরের নির্মাণ হয়।

Golu Devta Temple at Chitai

Photo of Golu Devta Mandir, Almora, Uttarakhand, India by Bongyatri - Sourav and Anindita

উত্তরাখণ্ডের অনেক জায়গাতেই এই গোলু দেবতার মন্দির থাকলেও তাদের মধ্যে যে তিনটে মন্দির সবথেকে বেশি বিখ্যাত সেগুলো হলো - চিতই, চম্পাওয়াট এবং ঘোড়াখাল। বছরের প্রায় সব সময়েই এই মন্দিরগুলোতে সাদা পোশাক, পাগড়ি ও সাদা শাল পরিহিত ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। প্রসাদ হিসাবে তারা কখনো নিবেদন করেন ঘি, দুধ, দই, হালুয়া, পুরি, পকোড়া আবার কখনো নিবেদন করেন ছাগ মস্তক।

এইবারে একটু জেনে নেওয়া যাক এই গোলু দেবতাকে তাঁর ভক্তরা কিভাবে তাদের মনশকামনা জানান। গোলু দেবতার যেকোনো মন্দিরেই ভক্তরা তাদের মনোবাসনা একটি আবেদনপত্রে লিখে টাঙিয়ে দিয়ে যান মন্দির প্রাঙ্গনে। এরপর মনের বাসনা পূর্ণ হলে আবেদনপত্র খুলে সেই জায়গায় ঘন্টা ঝুলিয়ে দিয়ে যান ভক্তরা। যার যার সাধ্য অনুযায়ী ও বাসনার মাত্রার ওপর নির্ভর করে ঘন্টা বেঁধে থাকেন। চিতইয়ের গোলু দেবতার মন্দির প্রাঙ্গনে ঢুকলেই নজরে পড়বে বিভিন্ন সাইজের ঘন্টা। এর মধ্যে বেশ কিছু ঘন্টা রাখা ছিল যাদের ওজন কম করে কয়েক মণ। তবে খেয়াল রাখবেন মন্দির চত্বরে বানরের উপদ্রব ভীষণ। তাই পুজো দিয়ে ফেরার সময় প্রসাদের থালার প্রতি বিশেষ ভাবে সজাগ থাকবেন। আর খুব সাবধানে মাথা সামলে মন্দিরে ঢুকবেন নাহলে বিশালাকৃতির ঘন্টায় মাথা ঠুকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

Bells hanging in temple complex

Photo of ন্যায়ের খোঁজে গোলু দেবতার মন্দিরে... by Bongyatri - Sourav and Anindita

মূল মন্দিরের সামনে রাশি রাশি এপ্লিকেশন দেখে সেগুলো না পড়ার বাসনা ছাড়তে পারলাম না। কয়েকজন দেখলাম বাড়ির দলিল পর্যন্ত ঝুলিয়ে গেছে। কেউ কেউ আইনী কাগজে তাদের মন বাসনা ব্যক্ত করেছেন 'ভগবান জী' এর কাছে। কেউ চেয়েছেন ভালোবাসার পরিপূর্ণতা, তো কেউ বা চেয়েছেন তার মায়ের মন বাসনার পূর্ণতা, আবার কেউ রোগমুক্তির আশায় দিয়ে গেছেন আবেদনপত্র। মন্দির চত্বরে ঘন্টার আওয়াজ শুনতে শুনতে আর মানুষের মনোবাসনার আবেদনপত্র পড়তে পড়তে উপলদ্ধি হয় মানুষ কত অসহায়। যার মনের বাসনা যত বেশি তার অসহয়তাও তত বেশি। তবুও একটা আশার আলো যেটার জন্যই মানুষ ছুটে চলে নিরন্তর, এই মন্দির থেকে সেই মন্দির।

কীভাবে যাবেন :

আলমোড়া থেকে মাত্র ৯ কিমি দূরে ৩৭ নম্বর স্টেট হাইওয়ের ওপর অবস্থিত এই মন্দির কুমাউন অঞ্চলের সমস্ত জায়গার সাথেই সড়কপথে যুক্ত। আমরা বিনসার থেকে ভীমতালে ফেরার পথে এই মন্দির দর্শন করেছিলাম। মন্দিরের সামনেই ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির ঘন্টার দোকান দেখলেই বুঝতে পারবেন যে আপনারা গোলু দেবতার মন্দিরের সামনেই আছেন। কুমাউন ভ্রমণের তালিকায় এই ভিন্ন ধরনের মন্দিরটি রাখলে খুব একটা পস্তাতে হবেনা আপনাকে। বিভিন্ন জায়গা সম্পর্কে জানা, তাদের রীতি নীতি আচার ব্যবস্থা জানার মাধ্যমেই তো ভ্রমণ পরিপূর্ণতা পায়।

Photo of ন্যায়ের খোঁজে গোলু দেবতার মন্দিরে... by Bongyatri - Sourav and Anindita

Further Reads