সন্ধ্যাবেলা বাইরে তখন প্রবল ঝড় বৃষ্টি। ক্ষণে ক্ষণে বজ্রপাত। অনেকদিন পর এই রকম অবস্থার কারণে হঠাৎ করেই কাজ থেকে সাময়িক বিরতি পেলাম। তাই সাথে সাথে এক কাপ গরম কফি তৈরি করে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান চালাতেই ভেসে এলো "শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা নিশীথযামিনী রে"। হ্যাঁ বর্ষা মানেই রবীন্দ্রনাথ; আর রবীন্দ্রনাথ মানে প্রেম। তবে আর পাঁচটা কাজের গতির মতোই করোনার মধ্যে আমাদের প্রেমটাও হঠাৎ করে কেমন যেন থমকে গিয়েছে। বাড়ি বসে একটা ছোট্ট ল্যাপটপ কোলে নিয়ে যে যার মতো গৃহবন্দি। আজ অনেকদিন পরে এই গানটা হঠাৎ করে আবার প্রেমের জোয়ারে আমাকে ভাসিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে মনে পরে গেল বৃষ্টিস্নাত হয়ে হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়ানো সেই সব দিনের কথা। ক্ষণিকের জন্য কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পরলেও হঠাৎ করে চারিপাশটা যেন কেমন বদলে গেল। স্মৃতির পাতায় চোখ রাখতেই উঠে এল একরাশ আনন্দ। আর সেই আনন্দের ধারা মিশে গেল বর্ষার ধারায়।
রাস্তায় ট্রাম লাইন সেজে নয়, প্রিয় মানুষের হাতে হাত ধরে বর্ষার দিনে ঘুরে বেড়ানো কিছু জায়গা-
১. ভাষা স্মৃতিস্তম্ভ - কলকাতা দেশপ্রিয় পার্কে বাঙালি সাহিত্যিক, ঢাকা ও শিলচরের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে এই স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়েছে।
২. প্রিন্সেপ ঘাট- জেমস প্রিন্সেপের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই প্রিন্সেপ ঘাট গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে চিত্র প্রেমীদের কাছে এই ঘাটটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
৩. ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল- এটি ইতালির রেনেসাঁ ও মোগল স্থাপত্যের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা রানী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিসৌধ।
৪. অ্যাকোয়াটিকা- কলকাতার রাজারহাটে কোচপুকুরে ৮ একর জমির উপর অবস্থিত এই জল উদ্যানটি ২০০০ সালে নির্মাণ করা হয়। এখানে কৃত্রিমভাবে সমুদ্রের ঢেউ সৃষ্টির মাধ্যমে পর্যটন প্রেমীদের আনন্দ প্রদান করা হয়।
৫. নন্দন - এ জি সি বসু সড়ক ও ক্যাথেড্রাল সড়ক জংশন অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের একটি চলচ্চিত্রকেন্দ্র হল নন্দন। নন্দনের সুদৃশ্য স্থাপত্য বিশিষ্ট ভবনটির দ্বার উদঘাটন করেছিলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়।
৬. বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম- ৯৬, জহরলাল নেহেরু রোডে সাচীঁ বৌদ্ধস্তূপের আদলে একতলা মহাকাশচর্চা কেন্দ্র এবং জাদুঘর নিয়ে এই জায়গাটি গড়ে উঠেছে। এটিকে এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্ল্যানেটোরিয়াম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
৭. ময়দান- গড়ের মাঠ নামে পরিচিত এই উদ্যানটি এক কথায় কলকাতার ফুসফুস। ইডেন গার্ডেনস, কলকাতা রেসকোর্স, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম, রয়েল ক্যালকাটা গলফ ক্লাব, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল, রাজভবন, ফোর্ট উইলিয়াম, বিদ্যাসাগর সেতু, বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম, সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল, নন্দন, রবীন্দ্রসদন, আকাশবাণী কার্যালয়, ভারতীয় সংগ্রহশালা, বিধানসভা প্রভৃতি বিখ্যাত জায়গাগুলি এই মাঠের চারপাশে অবস্থিত।
৮. কলেজস্ট্রিট- মধ্য কলকাতায় অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম বাংলা বইয়ের বাজার এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম পুরনো বইয়ের বাজার হিসেবে খ্যাত এই কলেজস্ট্রিট বইপাড়া।
৯. স্নো পার্ক- নিউটাউনের অ্যাক্সিস মলের সর্বশেষ তলায় এই স্নো পার্কটি গড়ে উঠেছে, যা প্রবল গরমে মানুষকে বরফের ঠান্ডা ছোঁয়া দিয়ে চলেছে।
১০. মাদার্স ওয়াক্স মিউজিয়াম- নিউটাউনে এই মোমের জাদুঘরটি অবস্থিত। এখানে বিভিন্ন গুণী ব্যক্তিবর্গের মোমের দ্বারা নির্মিত মূর্তি রয়েছে।
১১. নিক্কো পার্ক- কলকাতার সল্টলেকে ৪০ একর জায়গাজুড়ে চিত্তবিনোদনমূলক এই পার্কটি অবস্থিত।
১২. ইকোপার্ক- কলকাতার রাজারহাটে ৪৮০ একর জমির উপর ভারতের এই বৃহত্তম উদ্যানটি গড়ে উঠেছে, যার মধ্যে একটি বিশাল জলাশয়ের মাঝে একটি দ্বীপ রয়েছে।
১৩. সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল- ১এ, ক্যাথিড্রাল রোডে কলকাতার বৃহত্তম এবং এশিয়ার প্রথম এপিস্কোপ্যাল চার্চটি অবস্থিত।
১৪. দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির-১৮৫৫ সালে রানী রাসমণি কলকাতা হুগলি নদীর তীরে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে মা ভবতারিণী নামে পূজিত হন।
১৫. জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি- কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের এই প্রাচীন বাড়িটি অবস্থিত এই বাড়িতেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ ও মৃত্যুবরণ করেন।
১৬. আলিপুর চিড়িয়াখানা- ভারতবর্ষের প্রাচীনতম বিধিবদ্ধ চিড়িয়াখানা, যেখানে ২৫০ বছরেরও বেশি বয়সের একটি অদ্বৈত নামক অ্যালডাবরা দৈত্যাকার কচ্ছপ ছিল।
১৭. কালীঘাট- কালীঘাটের কালী মন্দির ৫১ সতী পীঠের মধ্যে একটি পীঠ, যেখানে সতীর ডান পায়ের আঙ্গুল পতিত হয়েছিল।
১৮. বোটানিক্যাল গার্ডেন- হাওড়া শিবপুর এই উদ্ভিদ উদ্যানটি অবস্থিত এখানে প্রায় ১৪০০-র বেশি প্রজাতির প্রায় ১৭ হাজার গাছ রয়েছে।
১৯. কফি হাউজ- উত্তর কলকাতার কলেজস্ট্রিটে এই কফি হাউস অবস্থিত। বাঙালির প্রাচীনতম আড্ডার স্থান হিসেবে একটি পরিচিত।
২০. সায়েন্স সিটি- পূর্ব কলকাতার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাস ও জে বি এস হ্যাল্ডেন এভিনিউ-এর সংযোগস্থলে এই বিজ্ঞান সংগ্রহালয় এবং বিজ্ঞানকেন্দ্রিক বিনোদন উদ্যানটি অবস্থিত।
২১. ফোর্ট উইলিয়াম- পূর্বভারতের ভারতীয় সৈন্যবাহিনির দুর্গ হিসেবে এই ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গটি বেশ জনপ্রিয়।
২২. বিদ্যাসাগর সেতু- হুগলি নদীর উপর অবস্থিত ভারত এবং এশিয়ার দীর্ঘতম ঝুলন্ত এই সেতুটি দ্বিতীয় হুগলি সেতু নামেও পরিচিত।
২৩. বি.বা.দী.বাগ- কলকাতায় লালদীঘি সংলগ্ন একটি জায়গা ডালহৌসি স্কোয়ার নামে পূর্ব পরিচিত ছিল। সেটি বর্তমানে বি.বা.দী.বাগ নামে পরিচিত।বিপ্লবী বিনয় বসু বাদল গুপ্ত দীনেশ গুপ্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এখানে তাঁদের প্রতিমূর্তি গঠন করা হয়েছে।
২৪. বিশাল বটবৃক্ষ- হাওড়া শিবপুর আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ভারতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে এই বিশাল বটবৃক্ষের। দেখতে পাওয়া যায়।
২৫. ভগিনী নিবেদিতার বাসভবন- বাগবাজার ১৬ নম্বর বোস পাড়া লেনে স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্যা তথা অ্যাংলো আইরিশ বংশোদ্ভূত সমাজকর্মী, লেখিকা এবং শিক্ষিকা ভগিনী নিবেদিতার বাসভবনটি অবস্থিত।
২৬. রবীন্দ্র সেতু - কলকাতা এবং হাওড়া শহরের মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী, হুগলি নদীর উপর এই রবীন্দ্র সেতু অবস্থিত।পূর্বে যার নাম ছিল হাওড়া ব্রিজ।
২৭. লস্কর যুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ - কলকাতায় হেস্টিং অঞ্চলে নেপিয়ার রোডে ৮৯৬ জন ভারতীয় উপমহাদেশীয় সেনার স্মরণে এই স্মৃতিসৌধটি নির্মিত হয়।
২৮. শহীদ মিনার- ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কমান্ডার মেজর জেনারেল স্যার ডেভিড অক্টারলোনির স্মৃতিসৌধ হিসাবে এটি নির্মিত হয়। এই সৌধটির আগের নাম ছিল অক্টারলোনি মনুমেন্ট। কলকাতার ময়দানে এটি অবস্থিত।
২৯. মোহরকুঞ্জ- কলকাতার ক্যাথেড্রাল রোডে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল লের পাশে নন্দনের উল্টোদিকে সিটিজেন্স পার্ক বর্তমান নাম মোহরকুঞ্জ অবস্থিত। ২০০৭ সালে কলকাতা পৌরসভার তরফ থেকে প্রথিতযশা রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম অনুসারে উদ্যানের নামকরণ করা হয় মোহরকুঞ্জ। এই উদ্যানটির ভিতর ঝরনা, ফুলের বাগান এবং একটি মুক্ত মঞ্চও রয়েছে।
৩০. টিপু সুলতান মসজিদ- ১৮৪২ সালে টিপু সুলতানের কনিষ্ঠপুত্র প্রিন্স গোলাম মোহাম্মদ এই মসজিদের নির্মাতা। সকল ধর্মের মানুষের জন্যই মসজিদের দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত।
উপরিক্ত জায়গাগুলির মধ্যে কার কার কোন জায়গায় প্রেমের জোয়ার এসেছে তা জানাতে কিন্তু আমাদের একদম ভুলবেন না।