'আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব!' আহা ! এখন যেন হারিয়ে যাওয়া অত সোজা। ভাইরাসের রক্তচক্ষু এড়িয়ে কোথায় হারাবেন মশাই? অবশ্য তাই বলে কি একটু-আধটু বেড়াবেন না? আলবাত বেড়াবেন। তবে বেশি দূরে যাওয়ার এখনই দরকার নেই। বরং কলকাতা ও তার আশেপাশে কাছাকাছির মধ্যে এক দু'দিনের জন্য কোথাও ঘুরে আসুন। কোথায় যাবেন তার হদিশ দিচ্ছি আমরা।
১) বড়ন্তি
একটা ছোট উইকএন্ড কিন্তু প্রকৃতির কোলে কাটানোর ইচ্ছে হলে পুরুলিয়া দারুণ জায়গা, বলতে পারি। যদি ‘লাল-পাহাড়ির দেশে’ যেতে চান তা হলে বড়ন্তিতে চলে যেতে পারেন। শাল-শিমূল, মহুয়া, পলাশ, পিয়াল, সেগুন – সব ধরনের গাছের বনের মধ্যিখানে ছোট্ট একটা জায়গা! নিরিবিলিতে নিজের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য আদর্শ।
কীভাবে যাবেন – নিজের গাড়িতে না গেলে শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে আসানসোলগামী যে-কোনও ট্রেনে চেপে বসুন। আসানসোল থেকে আদ্রা এবং আদ্রা থেকে সামান্য পথ পেরোলেই বড়ন্তি।
কোথায় থাকবেন – পলাশবাড়ি ইকোলজিক্যাল রিসোর্ট (৯৮৩১৫০৭৬৪৪) থাকার জন্য বেশ ভাল। এখানে মোটামুটি ১,০০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকা মতো খরচ হতে পারে প্রতি রাতে ঘর ভাড়া হিসেবে। এছাড়া মানভূম হলিডে হোমও (৮৯১৮৭৭৬৩১০) থাকার জন্য বেশ ভাল।
২) গনগনি
গনগনি ইদানীং বেশ একটি জনপ্রিয় উইকএন্ড ডেস্টিনেশন। কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার দূরত্বে শিলাবতী নদীর ধারে অবস্থিত এই জায়গাটিকে ‘বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ও বলা হয়। জঙ্গল যদি আপনার পছন্দের হয়, তা হলে চলে যেতে পারেন গনগনিতে।
কীভাবে যাবেন – ট্রেনে অথবা বাসে গড়বেতা এবং সেখান থেকে টোটো চেপে গনগনি।
কোথায় থাকবেন – গনগনিতে থাকার কোনও জায়গা নেই, থাকতে হবে আপনাকে গড়বেতাতেই। এখানে নানা লজের মধ্যে সোনাঝুরি গেস্ট হাউজ (৮৩৪৮৬৯৪৮০১) এবং আপ্যায়ন লজ (৯৫৪৭৫১৪০৩০) বেশ ভাল পরিষেবা দিয়ে থাকে।
৩) বাঁকিপুট
শহরের কোলাহল থেকে একটু অবসর খুঁজতে চাইলে চলে যেতে পারেন বাঁকিপুট। মন্দারমনি-তাজপুরের ভিড় নেই, অথচ রয়েছে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য! এক আধটা দিন উইকেন্ড সমুদ্র-সৈকতে কাটিয়ে গেলে মনটাও ফুরফুরে হয়ে যাবে। শুধু সমুদ্র নয়, এখানে দেখার মতো রয়েছে একটি শতাব্দীপ্রাচীন মন্দির, যার উল্লেখ রয়েছে ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসেও।
কীভাবে যাবেন – যদি বাসে যান, তা হলে যে-কোনও দিঘাগামী বাসে চেপে পড়ুন এবং কাঁথিতে নেমে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিতে হবে বাঁকিপুটের জন্য। কাঁথি থেকে গাড়িতে প্রায় মিনিট ৪০ সময় লাগে এই উইকএন্ড ডেস্টিনেশনটিতে (destination) পৌঁছতে। রিজার্ভ করা গাড়িতে মোটামুটি ১,০০০ টাকা মতো খরচ পড়ে।
কোথায় থাকবেন – বাঁকিপুটে খুব বেশি থাকার জায়গা নেই তবে ঝিনুক রেসিডেন্সিতে থাকতে পারেন। এখানে খাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। মোটামুটি ১,৬০০ টাকা করে ভাড়া প্রতি রাতের জন্য। ৭০৪৭৭৭৯২৭২ – এই নম্বরে যোগাযোগ করে ঘর বুক করতে পারেন।
৪) বিশ্রাম বাগানবাড়ি, টাকি
কলকাতা থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটারের দূরত্বে রয়েছে টাকি স্টেশন। স্টেশন থেকে কয়েক মিনিট খানেক এগোলেই ইছামতি যদি আর তার পাড়েই বিশ্রাম বাগান বাড়ি। বাগান বাড়ির ভেতরেই রয়েছে ছোট ছোট কটেজ যেখানে আপনি বন্ধুদের সঙ্গে বা পরিবারের সাথে আড্ডা দিতে পারেন; রয়েছে দীঘি, মন্দির, ছাউনি দেওয়া পুকুরঘাট আর অজস্র গাছ-গাছালি আর সবুজের সমারোহ। শহর থেকে দূরে নিরিবিলি এই পরিবেশে এলেই মনটা ভালো হয়ে যাবে। যদি রাত্রিবাস করতে চান তার ব্যবস্থাও আছে এখানে।
বিশদে জানার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন - ৯০০৭০১২২৭১ এই নম্বরে।
৫) পুষ্পবন - ডায়মন্ড হারবার
একদিনের ঘুরতে যাওয়ার জন্য আদর্শ জায়গা হল ডায়মন্ড হারবার। আর এখানেই রয়েছে কয়েক ঘণ্টা কাটানোর জন্য পুষ্পবন। পুষ্পবন ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেলে সমাধান করে ফেলতে পারেন কেল্লা রহস্যের! আসলে এখানে রয়েছে দুটি কেল্লা। তবে কেল্লা বলতে কিন্তু শুধু ধ্বংসাবশেষই রয়েছে এখন, কারণ একটি কেল্লা তৈরি হয়েছিল পর্তুগিজ আমলে আরেকটি তৈরি হয়েছিল ইংরেজ আমলে।
বিশদে জানার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন - ৯৮৩১০৩৯০৩২ এই নম্বরে।
৬) দেউলটি
গ্রাম্য মেঠো পথে পিকনিক করতে চাইলে দেউলটি রাখতে পারেন আপনার পছন্দের তালিকায়। কলকাতা থেকে ৬৩ কিলোমিটার দূরের এই জায়গায় গাড়িতে পৌঁছবেন দেড় ঘণ্টার মধ্যে। পুকুরের জ্যান্ত মাছ, গাছ থেকে সদ্য পেড়ে আনা নারকেল রাখতে পারেন মেনুতে। কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি ঘুরে আসতে পারেন ইচ্ছে হলে। তাছাড়াও আছে অপূর্ব সুন্দর রূপনারায়ণ নদী। কাছেই আছে রাধা ও মদনগোপালের মন্দির, চাইলে দেখে আসতে পারেন। বিদ্যাসাগর সেতু ধরে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ড্রাইভ করে বা ট্রেনেও খুব সহজে দেউলটি যাওয়া যায়।
থাকার জায়গা
প্রান্তিক রিট্রিট, যোগাযোগের নম্বর- ৮৮২০৫২৩৮৫৫
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
আরও পড়ুন: কলকাতার সেরা রেস্তোরাঁ