বাড়িতে বসেই বনেদি পুজো উপভোগ করুন এবার! রইল কলকাতার সেরা সাতটি বনেদি বাড়ির পুজোর হদিশ

Tripoto
Photo of বাড়িতে বসেই বনেদি পুজো উপভোগ করুন এবার! রইল কলকাতার সেরা সাতটি বনেদি বাড়ির পুজোর হদিশ by Doyel Banerjee

অতিমারী থাক বা না থাক, কলকাতার পুজোর যে এসেন্সই আলাদা এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সে পাড়ার পুজো হোক কিংবা বারোয়ারি থিমের পুজো কিংবা সাবেকী বনেদি বাড়ির পুজো। প্রতিটা পুজোর মধ্যেই, পুজোর আয়োজনে রয়েছে একটা অদ্ভুত সৌন্দর্য। অনেকেই থিমের পুজো শুনলে নাক সিটকান। তাঁদের তালিকায় এক নম্বরে থাকে বনেদি বাড়ির পুজো। অর্থাৎ যে সব জমিদার বা সামন্তশ্রেণির প্রতিনিধিদের বাড়িতে প্রায় দুশো বা তিনশ বছরেরও বেশি সময় ধরে পুজো চলে আসছে সেগুলো দেখা। আর এইসব পুজো দেখার একটা বাড়তি পাওনা আছে। বছরের অন্যান্য সময় এই বাড়িগুলোর বেশিরভাগ বন্ধ থাকে। ভিতরে প্রবেশের অনেক বিধি নিষেধ থাকে। কিন্তু পুজোর সময় সবাইকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। তাই বনেদি বাড়ির অন্দরমহল মন প্রাণ ভরে দেখে নেওয়ার সুযোগটুকু মিস করা যায় না। তাহলে দেরি না করে পুজো পরিক্রমা শুরু করে দেওয়া যাক তাহলে। আপনারাও খাতা পেন নিয়ে নোট করতে থাকুন। তবে হ্যাঁ, একটা সাবধান বাণী আছে। এই বছর অতিমারীর জন্য অনেক বনেদি বাড়িই কিন্তু পুজোর সময় বহিরাগতদের প্রবেশ আটকে দিয়েছে। কুছ পরোয়া নেহি! এই বছর না হলে পরের বছর যাবেন। তাছাড়া অনেক সংস্থা ভারচুয়াল ট্যুরও করাচ্ছে এই বাড়িগুলোর। সেটাও করে নিতে পারেন।

১) মল্লিক বাড়ি, ভবানীপুর

Photo of বাড়িতে বসেই বনেদি পুজো উপভোগ করুন এবার! রইল কলকাতার সেরা সাতটি বনেদি বাড়ির পুজোর হদিশ 1/5 by Doyel Banerjee
মল্লিকবাড়ির সাবেকী পুজোয় অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক (ছবি সংগৃহীত)

হ্যাঁ, একদম ঠিক ধরেছেন। এটা কোয়েল মল্লিকেরই বাড়ির পুজো। এক ঝাঁক তারকা দর্শন করতে চাইলে এই বাড়িতে চলে আসবেন। এখানে পশুবলি না হলেও বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে কুমারী পুজো থেকে শুরু বাকি সব আচার-অনুষ্ঠানই নিষ্ঠাভরে পালন করা হয়।

২) অক্রুর দত্তের বাড়ি, ওয়েলিংটন

Photo of বাড়িতে বসেই বনেদি পুজো উপভোগ করুন এবার! রইল কলকাতার সেরা সাতটি বনেদি বাড়ির পুজোর হদিশ 2/5 by Doyel Banerjee
অক্রুর দত্ত বাড়ির পুজোতে মায়ের চিরন্তন আদল ( ছবি সংগৃহীত)

সাবেক একচালা ডাকের সাজের মহিষাসুরমর্দিনী প্রতিমা। কাঠামো পুজো হয় রথের দিন। ষষ্ঠাদিকল্পে পুজো, তাই ষষ্ঠীর দিনে হয় বোধন। কলাবউ স্নান হয় বাড়ির ঠাকুরদালানেই। আগে পশুবলি হলেও এখন আখ ও ছাঁচিকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। নৈবেদ্য হিসেবে দেওয়া হয় চাল, ডাল, বিভিন্ন ফল ও মিষ্টান্ন। দশমীর সকালে অপরাজিতা ফুলে মায়ের আরাধনা সম্পন্ন হয়।

৩) গঙ্গাপ্রসাদ সেনের বাড়ি, কুমোরটুলি

Photo of বাড়িতে বসেই বনেদি পুজো উপভোগ করুন এবার! রইল কলকাতার সেরা সাতটি বনেদি বাড়ির পুজোর হদিশ 3/5 by Doyel Banerjee
সেন বাড়ির ঠাকুরদালানে পুজোর আয়োজন ( ছবি সংগৃহীত)

১৮৫৭ সাল থেকে একই বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। অন্য পুজোর প্রতিমার সঙ্গে এই পুজোর তফাৎ হল এখানে গণেশের জায়গায় কার্তিক আর কার্তিকের জায়গায় গণেশ থাকেন। এটি পূর্ব বঙ্গের রীতি। যেহেতু এঁদের আদি পুরুষ ঢাকা থেকে এসেছিলেন, তাই এটি মানা হয়। পুজো হয় ‘কালিকাপুরাণ’ পুথিমতে ‘নবম্যাদিকল্প’ অনুযায়ী, অর্থাৎ, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথি থেকে আরম্ভ হয় বোধন, ষষ্ঠীতে অধিবাস। চালকুমড়ো, আখ ও ‘শত্রুবলি’ হয়। এই পুজোর বৈশিষ্ট্য হল অষ্টমীর রাতে দুর্গার সঙ্গে কালীপুজোও হয়, সেই সঙ্গে শীতলার ঘট বসিয়ে পুজো করা হয়।

৪) সেনবাড়ি, বৈঠকখানা

প্রায় একশ বছরেরও বেশি পুরনো এই পুজো। এখানকার প্রতিমা দ্বিভুজা অভয়া দুর্গা। পায়ের নীচে সিংহ। দুর্গার পাশে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকের মূর্তি। কাঠামো পুজো হয় উল্টোরথের দিন। ষষ্ঠাদিকল্পে পুজো, অর্থাৎ ষষ্ঠীর দিন বোধন হয়। চাল, ডাল, বিভিন্ন ফল ও মিষ্টান্ন দেওয়া হয় নৈবেদ্য হিসেবে।

৫) চন্দ্রবাড়ি, ওয়েলিংটন স্কোয়ার

চন্দ্রবাড়ির সাবেক একচালা ডাকের সাজের মহিষাসুরমর্দিনী প্রতিমা এক সময়ে বাড়িতেই তৈরি হত, এখন কুমোরটুলি থেকে তৈরি করিয়ে আনা হয়। প্রতিপদাদিকল্পে পুজো, অর্থাৎ, মহালয়ার পরের দিন থেকে আরম্ভ হয় বোধন। সন্ধিপুজোর সময়ে দক্ষিণাকালীর মন্ত্রে দুর্গার পুজো হয়। চন্দ্রবাড়ির পুজোতে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এই তিন দিনেই কুমারীপুজো হয়। ছাঁচিকুমড়ো বলি দেওয়া হয়।

৬) হাটখোলার দত্তবাড়ি

Photo of বাড়িতে বসেই বনেদি পুজো উপভোগ করুন এবার! রইল কলকাতার সেরা সাতটি বনেদি বাড়ির পুজোর হদিশ 4/5 by Doyel Banerjee
দত্তবাড়ির পুজোতে মায়ের মৃণ্ময়ী রূপ ( ছবি সংগৃহীত)

দত্তবাড়ির পুজো হয় মঠচৌড়ি পদ্ধতিতে। অর্থাৎ ঠাকুরের মাথায় থাকে তিনটি করে চালা। দত্তবাড়ির দুর্গা প্রতিমার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল দেবীকে শাড়ি না পরিয়ে তাঁর গায়েই তুলি দিয়ে অপূর্ব কায়দায় শাড়ি এঁকে দেওয়া হয়। নারায়ণের আশীর্বাদ নিয়ে তবেই শুরু হয় পুজো। প্রাচীন রীতি মেনে এখানে দশমীর দিন কোনও সিঁদুরখেলা হয় না। এই খেলা হয় অষ্টমীর দিন। বিসর্জনের পর বাড়ির সদস্যরা দেশাত্মবোধক গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফেরেন। তারপর ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’ গানটি গাইতে গাইতে শুরু হয় বিজয়ার প্রণাম ও কোলাকুলি পর্ব।

৭) বাগবাজারের হালদার বাড়ি

Photo of বাড়িতে বসেই বনেদি পুজো উপভোগ করুন এবার! রইল কলকাতার সেরা সাতটি বনেদি বাড়ির পুজোর হদিশ 5/5 by Doyel Banerjee
বাগবাজারের হালদার বাড়ির পুজো (ছবি সংগৃহীত)

হালদার পরিবারের এক পূর্বপুরুষ বালেশ্বরে বেড়াতে গিয়ে স্বপ্নাদেশ পান। দেবী তাঁকে আদেশ দেন যে এক মুসলমান জেলে পরিবারের বাড়ির ১৪ ফুট গভীরে দেবীকে উল্টো করে শায়িত করা আছে। তাঁকে যেন সেখান থেকে মুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়। আজও পুজো হয় সেই কষ্টিপাথরের দেবী মূর্তির। দেবীর মুখ থাকে দক্ষিণে। কারণ উত্তর বা কৈলাস থেকে দেবী দক্ষিণে মুখ করেই মর্ত্যে আসেন। বহু বছরের প্রথা মেনে এই বাড়ির বউরা দুর্গা ষষ্ঠী পালন করেন না। তাঁরা মাছ খেয়ে পান মুখে দিয়ে জলের ফোঁটা দিয়ে ঢাক বরণ করেন। বোধনের দিন রেড়ির তেলে জ্বালানো হয়, যাকে বলা হয় ‘জাগো প্রদীপ’। বিসর্জনের আগে পর্যন্ত এই প্রদীপ নেভানো হয় না।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন।