মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর আরাধনা করা হয়, যা বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। এই দিন প্রত্যেক গৃহস্থ বাড়ি সেজে ওঠে আলপনা ও কারুকার্যে। দোয়াত খাগের কাঠি, নারকেল কুল সাজিয়ে প্রতিটি বাড়ির কচিকাঁচারা এবং শিক্ষার্থীরা মা-এর কাছে তাদের মনবাসনা জানায়-
‘জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে’ - মন্ত্রের মাধ্যমে।
সরস্বতী পুজো মানেই পড়াশোনার থেকে একদম ছুটি। এই একটা দিন সারা বছরের পড়াশোনার চাপ থেকে নিস্তার দেয় শিক্ষার্থীদের। তবে সরস্বতী পুজো শুধুমাত্র বিদ্যা বা সংগীতের পুজো এমন নয়; সরস্বতী মা কিন্তু আসেন প্রত্যেকের মধ্যে ভালবাসার জোয়ার সৃষ্টি করতে। তাই সরস্বতী পুজোর দিনটি ‘বাংলার ভ্যালেন্টাইনস ডে ’ নামে পরিচিতি লাভ করছে।
কচিকাঁচা থেকে তরুণ-তরুণী, এই দিনে প্রত্যেকে শাড়ি আর পাঞ্জাবি পরে সেজে ওঠে। এই সাজ যে শুধুমাত্র পুজোর জন্য এমন কিন্তু নয়; এই সাজে যে কত ভগ্নহৃদয় আবার পুনরায় প্রেমের পরশ পায় তা গুণে বলা যায় না। কত পুরনো প্রেম আবার নতুন করে মাথাচাড়া দেয়, না বলা প্রেম আবার নতুন করে তার ভাষা খুঁজে পাই শুধুমাত্র সরস্বতী পুজোর দিনে।
তাই এই ভালবাসার দিনটি একটু রঙিন করে কাটাতে, ভালোবাসার সঙ্গীকে কিছুটা নিজের মত করে খুঁজে নিতে আজ আমরা পরিকল্পনা করব কিছুটা সময় একসঙ্গে কাটানোর। কী ভাবছেন??? মাসের মাঝামাঝি ঘোরাঘুরির জন্য পকেটে একটু টান দিয়েছে? চিন্তা কীসের! ট্রিপটো আছে আপনার সঙ্গে। ভালবাসার দিন উদযাপনে আমরাও এবার আপনার সাথী। আমরা আপনাদেরকে মাত্র ১০০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা এবং খাওয়া-দাওয়া একটি সুন্দর পরিকল্পনা করে দিচ্ছি।
ভালোবাসার মানুষের হাতে হাত রেখে চলুন ঘুরে আসা যাক একটি দিন
সরস্বতী পুজোর দিন বলে কথা সকাল বেলা ঘুম থেকে কেউ উঠবে না এমন হতেই পারে না। ঘুম থেকে উঠে গায়ে কাঁচা হলুদ বাটা মেখে স্নান করে বাসন্তী রঙের শাড়ি কিংবা কাঁচা হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পরে দেবীর সামনে গিয়ে উপস্থিত হয়ে মনষ্কামনা পূর্ণ করার আশায় পুজো সম্পন্ন হয়। এরপর চলে প্রসাদ বিতরণের পর্ব। এই পর্ব শেষ হতেই কিন্তু আর তেমন একটা কাজ থাকে না। তাই সময় নষ্ট না করে এই সময় আপনার প্রিয় মানুষটির সঙ্গে বেরিয়ে পড়তে পারেন সারাদিনের একটি ছোট্ট আউটিং-এ। তাও আবার আপনার পকেট মানি থেকে বাঁচিয়ে রাখা স্বল্প খরচে।
কাছাকাছি ভ্রমণের স্থান:
এখানে পৌঁছে আপনি ইস্কন মন্দির, বল্লাল সেনের ঢিপি, চাঁদকাজির সমাধিস্থল, মায়াপুর শ্রীচৈতন্য মঠ, শ্রীবাস অঙ্গন প্রভৃতি জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন। চাইলে এখানে যে কোন একটি জায়গায় আপনি মঠের প্রসাদ গ্রহণ করতে পারেন।[খাওয়া-দাওয়া শুদ্ধ দুজনের জন্য এই ভ্রমণের মোট খরচ পরবে মোটামুটি ৪০০- ৫০০ টাকা।]
নবদ্বীপ- কৃষ্ণনগর স্টেশন থেকে অটো করে স্বরূপগঞ্জ ঘাটে পৌঁছে ফেরিঘাট পেরিয়ে নবদ্বীপ যাওয়া যায়।
নবদ্বীপে পৌঁছানোর পর আপনি শ্রী শ্রী কেশবজী মঠ, জল মন্দির, পোড়ামা তলা মন্দির, নরহরি শ্রীচৈতন্য সেবা মিশন, বুড়ো শিব মন্দির, মনিপুর রাজবাড়ি, শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য সেবা মিশন ও গুপ্তবৃন্দাবন, নদীয়া ঘাট, জগন্নাথ মিশ্রের বাড়ি, নবদ্বীপ গোবিন্দ বাড়ি, সোনার গৌরাঙ্গ বাড়ি, নিমাইয়ের জন্মস্থান প্রভৃতি জায়গায় আপনি ভ্রমণ করে দেখতে পারেন।
[ দু'জনের জন্য মোট খরচা পরবে মোটামুটি ৩০০ টাকা।]
বেথুয়াডহরী অভয়ারণ্য- কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ড বাসে উঠে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক পথে বেথুয়াডহরী অভয়ারণ্য পৌঁছনো যায়।
প্রায় ১৭০ একর জমির উপর অবস্থিত এই অভয়ারণ্যে স্পটেড ডিয়ার, অজগর, ঘড়িয়াল, বেজি, ময়ূর, খরগোশ ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও এখানে থাকার জন্য বন্দোবস্ত রয়েছে, যা আগে থেকে অনলাইনে বুকিং করতে হয়।
[ এখানে খরচ অতি সামান্য শুধু বাস ভাড়া এবং এই অভয়ারণ্যে প্রবেশের জন্য একটি প্রবেশ মূল্য দিতে হয়।]
তারপর ঘাট পার হয়ে সেখানে টোটো ভাড়া করে কালনার বিখ্যাত জায়গাগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। এখানকার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হল ১০৮ শিব মন্দির। এছাড়াও রয়েছে কালনা রাজবাড়ি, ভবাপাগলা আশ্রম, গোপালজী মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির ইত্যাদি।
[ দু'জনের মোটামুটি খরচ পরবে ৪০০ টাকা।]
পাখিরালয়- নবদ্বীপ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পূর্বস্থলী পাখিরালয়।
এখানে শীতকালে ১০০-র বেশি প্রজাতির পাখি দেখতে পাওয়া যায় জায়গাটি অতি মনোরম এবং সুন্দর।
[ ঘোরাঘুরির জন্য এখানকার খরচ খুবই সামান্য, মোটামুটি ৩০০ টাকার মতো।]
বল্লাল সেনের ঢিপি- কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে মায়াপুরগামী যে কোনও বাসে উঠে বামন পুকুর বাজারে পৌঁছনোর পরে সেখান থেকে টোটো করে বল্লাল সেনের টিপিতে পৌঁছনো যায়।
এখানে গিয়ে ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্যের সম্মুখীন হতে পারবেন।
[ এখানে যাতায়াত ছাড়া আর তেমন কোনও খরচ নেই।]
সবুজ মন- কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে ধুবুলিয়া যাওয়ার বাস ধরে সিংহাটি নামলেই এই সবুজ বন পার্কটা দেখতে পাবেন।
[ এই জায়গাটিতে প্রবেশ করতে কোন প্রবেশমূল্য লাগে না। তাই খরচের তালিকায় শুধুমাত্র যাতায়াত ভাড়াটি ধরা হয়।]
উপরিউক্ত জায়গাগুলো সবক'টিতেই আপনি বাস ছাড়াও নিজস্ব গাড়ি বা বাইকে যেতে পারবেন। তাতে সময়টা বেশ কম লাগবে। আর এই প্রত্যেকটি উল্লেখ্য জায়গাতে নিজস্ব গাড়ি নিয়ে ঘুরলে খরচের পরিমাণটাও যৎসামান্যই পরবে।
ভালবাসা উদযাপনের অন্য নাম খাওয়া- দাওয়া
এই সমস্ত জায়গাগুলো ঘুরে এসে যখন খুব ক্লান্ত বোধ করবে, সারাদিনের পরিশ্রম এক নিমিষে দূর করতে চলে আসুন কৃষ্ণনগরের ভাতজাংলা পেট্রোল পাম্পে অবস্থিত ফ্যামিলি রেস্তোরাঁ মাদার্স হাটে। যেখানকার খাবারে সম্ভার এবং ডেজার্টের সেকশন দেখলে আপনার মন নিমেষেই চাঙ্গা হয়ে যাবে। আর ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যেই আপনি এখানে অনায়াসে দু'জনের জন্য খাবার অর্ডার করতে পারবেন।
মাদার্স হাট ছাড়াও কৃষ্ণনগরের আরও বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর খাবার জায়গা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল হাই রোডের পাশে অবস্থিত হোটেল হাভেলি, রাস্তা ক্যাফে আর সদ্য গড়ে ওঠা রসিক বাঙালি। এই সমস্ত জায়গাগুলোর প্রতিটি খাবারই স্বাদে এবং গন্ধে অতুলনীয়।
ভালবাসার মানুষটি এবার হবে আপনার সন্ধ্যার সঙ্গীও
ঘোরাফেরা খাওয়া-দাওয়া তো হল এবার একটু বসে নিজেদের মতো করে সময় কাটানো যদি না হয় তাহলে আর ভালবাসার মানুষটির সাথে সারা দিন কাটানোর সার্থকতা কী থাকে! একটু সময় কাটানোর জন্য আপনারা চলে যেতেই পারেন কৃষ্ণনগর সেন্ট্রাম মল-এ অর্থাৎ বিগ বাজারে মুভি ডেটে। সেখানে গিয়ে দু'ঘণ্টা বা আড়াই ঘন্টার একটা ছোট্ট মুভি দেখতে দেখতে নিজেদের মনের কথাগুলো কিন্তু বলে নিয়ে যেতে পারেন। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই এখানকার সিনেমার টিকিট কিন্তু আপনার সাধ্যের মধ্যেই।
এরপর মুভি দেখা শেষ করে বেরিয়ে এসে কৃষ্ণনগর হাইওয়েতে অবস্থিত শঙ্করের বিখ্যাত চা এবং সিঙ্গারা খাওয়া কিন্তু বাধ্যতামূলক। তারপর কৃষ্ণনগরের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পাড়ার মোড়ে মোড়ে ঠাকুর দর্শন করে, অধরের মিষ্টি খেয়ে; হাসিমুখে আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর হাতটা ধরে আস্তে আস্তে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। তবে মনে রাখবেন আনন্দ তখনই জীবনে সম্ভব যখন জীবন সুস্থ থাকে। তাই সব সময় সর্বদা নিজের সঙ্গে স্যানিটাইজার এবং মাস্ক নিতে ভুলবেন না।