বাঙালির ভ্রমণ বিলাস নিয়ে যথার্থ মন্তব্য করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ঘর হতে বহু দূর ঘুরেও একটি ধানের শিষের উপর একটি শিশিরবিন্দু দেখা হয়না অনেকেরই। নাহলে এত হিল্লি দিল্লী ঘুরেও কাপুরথালা বাদ পড়ে যায় কেন তাঁদের লিস্টি থেকে? পাঞ্জাবের কাপুরথালা এক অনন্য সুন্দর জায়গা। দু'তিন দিনের জন্য বেরিয়ে আসতে হলে চোখ বুজে বেছে নিতে পারেন পাঞ্জাবের প্যারিস নামে খ্যাত এই জায়গা।
এক সময় কাপুরথালা শাসন করতেন আহলুওয়ালিয়া রাজবংশ। তবে এই অঞ্চলের পত্তন করেন রাজস্থানের ভাটি রাজপুতরা, যারা একাদশ শতকে এসেছিলেন জয়সলমির থেকে। এখানকার কয়েকটি স্থাপত্য মনে করিয়ে দেয় ইউরোপের কথা, তাই একে পাঞ্জাবের প্যারিস আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
কী কী দেখবেন
১) জগৎজিৎ প্যালেস
১৯০৮ সালে নির্মিত এই প্যালেসের স্থাপত্য দেখবার মতো। একদা এখানেই থাকতেন কাপুরথালার মহারাজা জগতজিৎ সিংহ। এখন এটি ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির ছাত্রদের থাকার জায়গা।
২) কাঞ্জলি জলাভূমি
মস্ত বড় কাঞ্জলি লেক আর মানুষের তৈরি জলাভূমি পিকনিক আর অবসর যাপনের জন্য বেশ ভালো। এখানে প্রচুর পাখি আসে ফলে যারা ছবি তুলতে ভালোবাসে তাঁদের জন্য এই জায়গা আদর্শ।
৩) মুরিশ মসজিদ
মহারাজ জগতজিৎ সিংহ ছিলেন শৌখিন মানুষ। তাঁর রাজ্যের মুসলমান ধর্মাবলম্বী মানুষদের কথা ভেবে তিনি এই অপূর্ব মসজিদ তৈরি করেন। বলা হয় যে এটি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম সুন্দর একটি মসজিদ। এই মসজিদে প্রচুর সুন্দর পেন্টিং আছে যেগুলো লাহোরের মায়ো স্কুল অব আর্ট থেকে এসেছে।
৪) শালিমার গার্ডেন
শহরের একদম মাঝখানে অবস্থিত শালিমার গার্ডেন এখানকার আরও একটি আকর্ষণ। কাপুরথালার রাজপরিবারের প্রয়াত ব্যক্তিদের জন্য এখানে স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। তাছাড়া লাল বেলেপাথরের চেম্বারে এখানে তাঁদের জন্য কয়েকটি শ্বেতপাথরের স্মারকস্তম্ভও তৈরি করা হয়েছে।
৫) জগতজিৎ ক্লাব
শহরের মাঝখানে অবস্থিত এই বিল্ডিং এখন একটি ক্লাব। একসময় এটি কাপুরথালার রাজপরিবারের সম্পত্তি ছিল। কখনও এই স্থাপত্যকে গির্জা হিসাবে, কখনও সিনেমা হল হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৪০ সাল থেকে এটিকে ক্লাব হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জগতজিৎ ক্লাবের বৈশিষ্ট্য হল এর স্থাপত্যগত দিক থেকে অ্যাক্রোপলিস অব এথেন্সের সঙ্গে সাদৃশ্য। এটি গ্রিক রিভাইভাল স্টাইলে নির্মিত।
৬) এলিসি প্যালেস
১৮৩৫ থেকে ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত কাপুরথালা শাসন করেছিলেন কানওয়ার বিক্রম সিংহ। কাপুরথালার ইতিহাসে শিখ নেতা বিক্রম সিংহের গুরুত্ব অপরিসীম। ইন্দো ফরাসি ধারায় ১৯৬২ সালে বিক্রম সিংহ তৈরি করেন এলিসি প্যালেস। এখন এটি একটি স্কুলে পরিণত হলেও পর্যটকরা এই স্থাপত্য দেখতে যান।
কীভাবে যাবেন
বিমানপথে যেতে হলে সবচেয়ে নিকটতম বিমানবন্দর হল অমৃতসর। এখান থেকে কাপুরথালা ৮২ কিলোমিটার। রেলপথে যেতে হলে আগে জলন্ধর যেতে হবে। এখান থেকে কাপুরথালা ২২ কিলোমিটার।
কোন সময় সবচেয়ে ভালো
অক্টোবর থেকে মার্চ, অর্থাৎ শীতের শুরু থেকে বসন্ত কাল পর্যন্ত এখানে বেড়াতে যাওয়া যেতে পারে।
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।