মাওলিনং গ্রাম সম্পর্কে বর্ণনা করতে গেলে অসাধারণ, সুদৃশ্যময়, অকল্পনীয় এই সমস্ত বিশেষণগুলি কম পড়ে যায়। এই গ্রামের সৌন্দর্যকে কোনও ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এই গ্রামটি ২০০৩ সালের এশিয়া এবং ২০০৫ সালে ভারতের সবচেয়ে পরিছন্ন গ্রামের আখ্যায় ভূষিত হয়েছে।
কীভাবে যাবেন?
এই গ্রামের নিকটবর্তী বিমানবন্দরটি হল - শিলং বিমানবন্দর। তবে বিমানবন্দর থেকে গ্রামের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিমি। এই এতটা দূরত্ব অতিক্রম করার জন্য আপনাকে গাড়ি বা বাসের সাহায্য নিতেই হবে। আমি শিলং থেকেই ক্যাব ভাড়া করেছিলাম। এই প্রসঙ্গে বলি, শিলং থেকে মাওলিনং যাত্রাটা অসাধারণ ছিল। যাত্রাপথে পাহাড়ের অবস্থান সত্যি মুগ্ধ করে।
মাওলিনং গ্রামের ২কিমি আগে দেখে নিলাম মেঘালয়ের বিখ্যাত লিভিং রুট ব্রিজ। ব্রিজটি বিশাল রবার গাছের রুট গুলির সহযোগে প্রাকৃতিকভাবে নির্মিত।
কিছুক্ষণ প্রকৃতির কোলে সময় কাটিয়ে আবার ও এগিয়ে চললাম মাওলিনং- এর উদ্দেশ্যে।
গ্রামটির প্রথম দর্শনে আমি অবাক। গ্রামটি শুধু পরিছন্নই নয়, এতো সুন্দর গ্রাম আমি জীবনে দেখিনি। গ্রামের বাগানগুলিতে ফুটে রয়েছে বাহারি ফুল। এই গ্রামে পৌঁছানোর সাথে সাথে, আমি বেরিয়ে পড়লাম স্কাই ভিউ দর্শনের উদ্দেশ্যে। এখানে শুধুমাত্র বাঁশ এবং দড়ি দিয়ে প্রায় ৮৫ ফিটের লম্বা রাস্তা বানানো হয়েছে।
একদম উপরে গিয়ে ভারত - বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চল সহ বাংলাদেশের সমতল ভূমি এবং গ্রামের দর্শন পেলাম। এই ধরণের মন ছুঁয়ে যাওয়া দৃশ্য দর্শনের পর পায়ে হেঁটে গ্রাম দর্শনের জন্য বেরোলাম। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো - এই গ্ৰামটিতে শিক্ষার হার ১০০% এবং গ্রামের প্রত্যেকটা মানুষ ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারদর্শী।
গ্রামকে পরিছন্ন রাখার জন্য গ্রামের প্রতিটি স্থানে বাঁশের তৈরি ডাস্টবিন রয়েছে। গ্রামবাসীরা মনে করেন গ্রামকে পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব তাদেরই । সেই জন্যই গ্রামের রাস্তাগুলি তারা পরিষ্কার করেন, রাস্তায় কোনও রকম আবর্জনা পড়ে থাকলে তারা নিজেরাই সেই ময়লাটি ডাস্টবিনে ফেলে দেন।
খাদ্য
আমি এখানে একটি স্টল থেকে ডাল- রাইস খেয়েছিলাম। এখানে আরও এই ধরণের স্টল রয়েছে যেখানে চা, স্ন্যাকস, এবং ডাল- রাইস পাওয়া যায়।
থাকার ব্যাবস্থা
মাওলিনং -এ অনেক গুলি গেস্ট হাউস এবং হোমস্টে রয়েছে। আপনি শিলং থেকে একদিনের ট্রিপ প্ল্যান করে এই গ্রাম থেকে ঘুরে আসতে পারেন। গ্রামবাসীরা বেশ বন্ধুবৎসল, শুধু তাই নয় এরা অতিথি আপ্যায়ন করতেও ভালোবাসেন।
তাই মেঘালয় ভ্রমণে এসে এই গ্রাম দর্শনের সৌভাগ্য থেকে কিন্তু নিজেদের বঞ্চিত করবেন না।