বিশিষ্ট লেখক উইলিয়াম শেক্সপিয়র একবার বলেছিলেন;'নামে কি আসে যায়?' আমরা অবশ্য কেউই কথাটার প্রকৃত মানে বুঝতে পারি না, তবে আমাদের দেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্ত অবস্থিত মেঘালয় রাজ্যের কোলে একটি ছোট্ট অজানা গ্রাম আছে, যেখানকার মানুষেরা এই উক্তিটির যথাযথ প্রয়োগ প্রতি মুহূর্তে নিজেদের জীবনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকেন।
রাজ্যের রাজধানী শিলং থেকে ৬০ কিমি দূরে অবস্থিত ছোট্ট একটি গ্রাম কংথং। সোহোরা এবং পাইনুরস্লা শৈলশিরার মাঝে মাত্র কয়েকশ জনবসতি নিয়ে গড়ে উঠেছে এই গ্রামটি । কংথং গ্রামটিকে চারপাশের অন্যান্য গ্রাম থেকে একদম আলাদা করে দেয় এই গ্রামের বাসিন্দারা। শুনতে ভীষণ রকম এবং অবাস্তব লাগলেও এখানকার মানুষেরা ভাষা এবং নামের বদলে বিভিন্ন রকমের শব্দের মাধ্যমে একে ওপরকে সম্বোধন করে।
কংথং
প্রাচীন কাল থেকেই কংথং-এ এই রীতি প্রচলিত আছে। তবে এই রীতির উৎসের মধ্যে এক বিশেষ খাসি জনশ্রুতিতে লুকিয়ে আছে। শোনা যায় কোন একজন বাসিন্দা কিছু দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে একটি গাছের ডালে চড়ে বসে এবং একটি বিশেষ শব্দের মাধ্যমে নিজের বন্ধুদের ডাকতে থাকে। সেই শব্দও শুনে তাঁর বন্ধুরা দুষ্কৃতীদের অজান্তেই তাকে উদ্ধার করে। এই জনশ্রুতি আস্তে আস্তে একটি মাতৃতান্ত্রিক অভ্যাসে পরিণত হয় এবং মায়েরা তাদের শিশুদের জন্মের পর থেকে কিছু নির্দিষ্ট শব্দের মাধ্যমে ডাকতে শুরু করে। শিশুদের বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই শব্দ যাকে স্থানীয় ভাষাতে 'জিংরাওয়াই লওবেই' বলা হয়ে থাকে, তাদের নাম এর মত ব্যবহৃত হতে শুরু করে।
সমগ্র প্রথাটি মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত। প্রথমে শব্দটি মায়েরা তাদের শিশুকে দিয়ে থাকে যেটি অন্যান্য পরিবারজনদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যও ব্যবহার করা হয়। দ্বিতীয়ত, প্রাপ্তবয়স্করা তাদের নিজেদের জন্য বা গ্রামের অন্যান্য পুরুষ ও নারীদের সম্বোধন করার জন্য নির্দিষ্ট আওয়াজ বা ধ্বনি সৃষ্টি করে থাকে। এই সম্বোধন ধ্বনি পাহাড়ের কোলে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। এমনকি 'ভারতের এই শিশ গ্রামের' পুরুষেরা রমণীদের সঙ্গে মন দেওয়া-নেওয়ার খেলাতেও বা প্রেম নিবেদনের ক্ষেত্রেও এই শিশের ব্যবহার করে থাকে।
কংথংএ কী কী করবেন
কংথং কিন্তু পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বিশেষ জনপ্রিয় নয়। অবশ্য আপনার যদি ট্রাভেলের প্রবল নেশা থাকে, তাহলে আপনি অনেক নতুন এবং অজানা অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে পারবেন এই গ্রামে ঘুরতে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে।
গ্রাম পরিদর্শন
কংথং গ্রামের বাসিন্দারা অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ এবং সবসময় পর্যটকদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে তাঁরা প্রস্তুত। পায়ে হেঁটে আপনি ঘুরে নিতে পারেন ছবির মত সুন্দর এই গ্রামের আনাচ-কানাচ এবং সেই সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে চলতে থাকবে আপনার প্রাথমিক আলাপচারিতার পর্ব। এই আলাপচারিতার মধ্যে দিয়েই গ্রামের সনাতন ঐতিহ্য ও বিরল রীতিনীতি সম্পর্কে আপনি জানতে পারবেন। অনেক অজানা তথ্যও সংগ্রহ করতে পারবেন এই সূত্রেই।
দেখে নিন গ্রামের মৌমাছি ও মধু চাষের খুঁটিনাটি
কংথং গ্রাম ভীষণভাবে প্রসিদ্ধ মৌমাছি ও মধু চাষের জন্যও। এখানে উৎকৃষ্ট মানের মধু উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ করার পরে রাজ্যের অন্যান্য স্থানে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। এরকমই একটি মধু চাষের এর কেন্দ্র থেকে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এবং ফেরার সময় হাতে তুলে নিতে পারেন কিছু সুস্বাদু মধুর জার।
প্রকৃতির কোলে কিছুক্ষণ
কংথং গ্রামটি এখনও পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় ও কোলাহল থেকে বেশ অনেকটাই দূরে। শহুরে আধুনিকতার প্রভাব গ্রামে প্রায় নেই বললেই চলে... যা এখানকার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। এখানকার মনোরম আবহাওয়া, চোখ জুড়নো প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং ভৌগোলিক পটভূমি এই স্থানটিকে করে তুলেছে একেবারে অন্যরকম, রাতের বেলা তারাভরা আকাশের নিচে প্রিয়জনদের সাথে ক্যাম্পিং করার জন্য একটি আদর্শ জায়গা হিসেবেও বেশ পরিচিত। কংথং গ্রামটিতে যেন মেঘালয়ের সমস্ত সৌন্দর্যের এক সংযোগকেন্দ্র।
কীভাবে কংথং পৌঁছবেন
কংথং গ্রামে পৌছতে বেশ একটি দুর্গম পথ আপনাকে পেরোতে হবে। গ্রামটির সঙ্গে যুক্ত সড়কপথ কিন্তু চারচাকা চালানোর জন্য তেমন উপযুক্ত নয়। আর সর্বশেষ স্থান থেকে আপনাকে প্রায় ৩০ মিনিট কংক্রিটের রাস্তা ধরে ট্রেক করে এখানে পৌঁছতে হবে।
দিল্লি থেকে আপনি এই দুই ভাবে যেতে পারবেন
বিমানপথে: কংথং-এর সবথেকে নিকটতম এয়ারপোর্ট হল শিলং এয়ারপোর্ট যা এখান থেকে ৮০ কিমি দূরে অবস্থিত। এয়ারপোর্ট থেকে একটি ক্যাব নিয়ে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন খাতারশ্নং রোড। এখানেই শেষ আপনি গাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন। দিল্লি থেকে শিলং এর প্লেন ভাড়া পড়বে প্রায় ১০০০০ টাকার মত।
রেলপথে: দিল্লি থেকে সরাসরি শিলং যায় এরকম অনেক ট্রেন পেয়ে যাবেন এবং সাধারণত এই ট্রেন যাত্রা তে ২৯ ঘণ্টা লেগে থাকে।
কোথায় থাকবেন
কংথং গ্রামে সেরকম বিশেষ কোন থাকার জায়গা নেই। সবথেকে কাছের শহরের মধ্যে শিলংএ আপনি অনেক থাকার জায়গা পেয়ে যাবেন খুব সহজেই। শিলঙে থকার জন্য কয়েকটি বিশেষ জায়গা হল
দি হেরিটেজ ক্লাব- ত্রিপুরা ক্যাসেল
কাইজ়ুন বেড ব্রেকফাস্ট
লিভিং রুফ
ভোজনরসনা
শিলঙের সরু অলিতে গলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক দোকান যেখানে আপনি আত্মসন্তুষ্টির জন্য পেয়ে যাবেন অথেনটিক খাসি ও জইন্তিয়া খাবার। বিশেষ করে আপনি যদি মাছ-মাংস খেতে ভালবাসেন, তাহলে এখানের খাবারের প্রেমে পড়ে যেতে পারেন। শিলং-এ গেলে আপনার স্বাদকোরক বা টেস্টবাডের তৃপ্তির জন্য অবশ্যই ঘুরে আসবেন নিচের রেস্তোরাঁটি থেকে
মণিপুরি ফুঙ্গা রেস্তোরাঁ, শিলং