যেকোনো রোমাঞ্চকর কাহিনি আমাদের সকলকেই মোহিত করে । তবে কোনও ভৌতিকস্থানকে ঘিরে মানুষের মনের মধ্যে যেমন ভয় কাজ করে তেমন সেই স্থানটি সত্যিই কি ভৌতিক নাকি সেই নির্দিষ্ট স্থানে রহস্যের আড়ালের অন্যকোনো গল্প লুকিয়ে রয়েছে সেই বিষয়ে ও নানান প্রশ্ন উঁকি দেয় । রাজস্থানের ভাণগড় ফোর্টকে কেন্দ্র করে যেমন নানান রহস্য এবং ভৌতিক কাহিনির সঞ্চার হয় ঠিক তেমনই রহস্যে পরিপূর্ন রাজস্থানের বার্মের জেলার কিরাদু গ্রামে অবস্থিত ভৌতিক মন্দির কিরাদু ।
কিরাদু মন্দিরের ইতিহাস এবং স্থাপত্যরীতি
ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে জানা যায়, একসময় কিরাদু মন্দিরটি কিরাদকোট নামে পরিচিত ছিল । ঐতিহাসিকদের মতে, ১১শ - ১২ শ শতকে চালুক্য রাজা এই মন্দির নির্মাণ করেন । সেই সময় এখানে মোট ১০৮ টি মন্দির গঠন করা হয় । তবে বর্তমানে এই মন্দির ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে এখানে ৫টি মন্দির রয়েছে । সব কয়টি মন্দিরে স্থাপিত আছেন ভগবান শিব । প্রধান মন্দিরটি সমেশ্বরা মন্দির নামে পরিচিত । মন্দিরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ইরোটিক স্থাপত্যরীতি ।
এছাড়াও সোলাঙ্কি স্টাইলের প্রভাবও লক্ষ করা যায়। আর সেই কারণেই এই মন্দিরটিকে রাজস্থানের খাজুরাহো নামে অভিহিত করা হয় ।মন্দিরের দেওয়াল জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন দেবদেবী মূর্তি অঙ্কিত আছে । আজও এই মন্দিরটি হিন্দু সংস্কৃতি এবং ইতিহাসকে বহন করে চলেছে ।
তাহলে এই ঐতিহাসিক মন্দিরটি কেন রহস্যময়?
সূর্যাস্তের পর কোনও মানুষ এই মন্দিরে প্রবেশ করে না । এই ঘটনায় বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকলেও কিরাদু মন্দিরটি স্থানীয় মানুষের কাছে ভৌতিক মন্দির হিসেবেই পরিচিত।
কিংবদন্তী অনুসারে, তুর্কি এবং বৈদেশিক আক্রমণের রাজা সমেশ্বর তাঁর রাজ্য এবং সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার আশায় একজন ঋষির দ্বারস্থ হন । সমস্ত রকম রীতিনীতি সম্পন্ন করেন এবং পরিশেষে ঋষি তাঁর একটি শিষ্যকে স্থানীয় অধিবাসীদের দায়িত্বে রেখে ফিরে যান । বছর খানেক পর স্থানীয় মানুষ সেই ঋষির শিষ্য এর পরিচর্যা করতে ভুলে যান । তাই যত্নের অভাবে সে দুর্বল হয়ে রোগগ্রস্থ হয়ে পড়েন । সেইসময় এক কুম্ভকার পরিবার যত্ন সহযোগে তাকে সুস্থ করে তোলেন।
কিছুদিন পর ঋষির এই সমস্ত ঘটনা জানতে পেরে অত্যন্ত রেগে যান । সেই সময় রাগের বশে এই গ্রামকে অভিশাপ দেন । এই অভিশাপের কারণে কিরাদু মন্দির সহ সমগ্র গ্রাম পাথর হয়ে যায়, শুধুমাত্র সেই কুম্ভকার পরিবার অভিশাপ থেকে মুক্ত থাকেন । পরে সেই পরিবার এই গ্রাম পরিত্যাগ করেন ।
মন্দির দর্শনের সময়সীমা এবং খরচ
আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অনুমোদন অনুযায়ী এই মন্দিরটি সকাল ৯টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা আছে ।
• বিদেশী পর্যটকদের জন্য এই মন্দির দর্শনের খরচ - ২০০ টাকা
• ভারতীয় পর্যটকদের জন্য এই মন্দির দর্শনের খরচ - ৫০ টাকা
• ছাত্র-ছাত্রীদের এই মন্দির দর্শনের খরচ - ৫ টাকা।
কীভাবে যাবেন?
ভারতের যে কোনও স্থান থেকে পৌঁছে যান জয়শালমীর শহর । সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ১৫৭ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান কিরাদু মন্দির । এছাড়াও রাজস্থানের বার্মের থেকেও ৩৫ কিমি পথ অতিক্রম করে ও কিরাদু মন্দির দর্শন করে আসতে পারেন ।
ইতিহাস, রহস্য নাকি অবাস্তব কল্পনা প্রকৃত সত্যিটা জানতে হলে আপনাকে আসতে হবে কিরাদু মন্দির ।