পুরুলিয়ার অবস্থিত এক স্বর্গের দ্বার হল দুয়ারসিনি। বান্দোয়ান থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে কংসাবতী নদীর দক্ষিণে কুচিয়া বিটের অন্তর্গত এই দুয়ারসিনি। ছোট ছোট পাহাড় মাঝখানে ঘন সবুজের সমারোহে গড়ে ওঠা এই আদিবাসী গ্রামটি নির্জনতা নিস্তব্ধতায় আপনার একান্ত সঙ্গী হতে পারে।
ভোরবেলা সূর্যের প্রথম রশ্মি যখন আপনার শরীর স্পর্শ করবে ঠিক সেই সময় মাদলের শব্দে ঘুমের দেশ থেকে হঠাৎ করে আপনি পৌঁছে যাবেন কোন এক অজানা দেশে।যেখানে খুঁজে পাবেন অজস্র অচেনা পাখির কলতান; শাল, পিয়াল, শিমুল, পলাশ, বহেরা গাছের জঙ্গল। জঙ্গলে হাতি, ভাল্লুক, বুনো শুয়োর, নেকড়ে বাঘ ইতালি বন্যপ্রাণী দেখতে পাবেন। আর এই সবকিছুর মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে সাতগুরুং নদ। দুয়ারসিনির প্রধান আকর্ষণ হল সাঁওতাল, মুন্ডা, শরব, খেরিয়ার মত উপজাতি গ্রাম।
আকর্ষণীয় বিষয়-
দুয়ারসিনি কথাটির বাংলা অর্থ হল ‘দ্বাররক্ষক ঠাকুর’। লোককথা অনুযায়ী, প্রাচীনকালে লঙ্কার রাজা রাবণ এখানে অবস্থিত খাড়া পরবর্তী মাধ্যমে স্বর্গের সিঁড়ি প্রস্তুত করতে চেয়েছিলেন।
এছাড়া মনে করা হয় লোকদেব দেবীদের নামকরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বৌদ্ধ ভাবনা। বৌদ্ধমতে দিয়াসিনি সিদ্ধা রমণীরা ছিলেন অলৌকিক শক্তিসম্পূর্ণা, যাদের পুজো করা হত মৃত্যুর পর। দিয়াসিনির শেষ অংশ ‘আসিনি’ শব্দ দ্বারা সিদ্ধা রমণীকে বোঝানো হত। পরবর্তীতে এই আসিনি শব্দ পরিবর্তিত হয়ে ‘সিনিতে’ পরিণত হয়। এরপর থেকে শক্তিরূপে ‘সিনি’ দেবতাকে গ্রাম্যদেবতারূপে পূজিত হন।
ঘুরতে যাওয়ার আদর্শ সময়-
বছরে সবসময়ই দুয়ারসিনির আবহাওয়া খুব মনোরম থাকে। তবে ঘুরতে যাওয়ার জন্য আদর্শ সময় অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত।
থাকবার জায়গা-
দুয়ারসিনি তে থাকার জন্য পশ্চিমবঙ্গের বন উন্নয়ন নিগমের ‘দুয়ারসিনি প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র’ নামে কটেজ রয়েছে। এখানে আগে থেকেই আপনি আপনার ঘর ভাড়া করে রাখতে পারেন। যোগাযোগের ঠিকানা - ৬-এ, রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার, কলকাতা- ৭০০০১৩। যোগাযোগ নম্বর- ০৩৩-২২৩৭০০৬০/ ০৩৩-২২৩৭০০৬১।
পথনির্দেশ-
হাওড়া থেকে প্রথমে ট্রেনে করে পুরুলিয়া স্টেশন পৌঁছতে হবে। তারপর সেখান থেকে বাসে করে বান্দোয়ান যেতে হবে।বান্দোয়ান পৌঁছে গাড়ি বা ট্রেকার করে পৌঁছনো যায় দুয়ারসিনি।
এছাড়াও, হাওড়া থেকে ট্রেনে প্রথমে ঘাটশিলা এবং সেখান থেকে বাসে করে নরসিংহপুর পৌঁছতে হবে। তারপর ঘন বনের মধ্যে তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে হেঁটে অতিক্রম করতে হবে।তবে এই পথে একা না যাওয়ায় ভাল।
কলকাতা থেকে সরাসরি বাসে করে ওবান্দোয়ান পৌঁছানো যায়।