শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে আপনি পেতে পারেন ঐতিহ্যবাহী সময়ের প্রতিচ্ছবি...

Tripoto
Photo of শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে আপনি পেতে পারেন ঐতিহ্যবাহী সময়ের প্রতিচ্ছবি... 1/3 by Surjatapa Adak
রাজবাড়ির সৌন্দর্য (ছবি সংগৃহীত)

আক্ষরিক অর্থে বাঙালি জাতি হল ভ্রমণপ্রেমী। আর ভ্রমণপিপাসু বাঙালিকে পরিতৃপ্তি এনে দেওয়ার জন্য ভারতবর্ষ তো বটেই গোটা বাংলার ভ্রমণ ঠিকানার সংখ্যাটা কিন্তু নেহাতই কম নয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন পর্যটকদের মুগ্ধ করে ঠিক তেমনই ইতিহাস এবং মিথ পর্যটকদের মনে রহস্যের সৃষ্টি করে। তাছাড়া অতীতকে অনুভব করার বিষয়টি প্রত্যেক ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছেই বেশ রোমাঞ্চকর। ঠিক এমনি অতীতের সাথে পরিচিত হতে পৌঁছে যান শেওড়াফুলি রাজবাড়ি।

শেওড়াফুলি রাজবাড়ির কিছু অজানা তথ্য

Photo of শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে আপনি পেতে পারেন ঐতিহ্যবাহী সময়ের প্রতিচ্ছবি... 2/3 by Surjatapa Adak
খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য (ছবি সংগৃহীত)

মুঘল শাসনকালে সম্রাট আকবর জমিদার মনোহর রায়কে শেওড়াফুলি অঞ্চলে জমি প্রদান করেন । আর এই জমিতেই তিনি শেওড়াফুলি রাজবাড়ি নির্মাণ করেন। প্রকৃতপক্ষে এই রাজপরিবার বর্ধমান জেলার পাটুলি নারায়ণপুরের আদি বাসিন্দা। ১৭৫২ সালে রাজা মনোহর রায়ের পুত্র রাজা রাজ চন্দ্র রায় শ্রীপুর অঞ্চলে রাম সীতা মন্দির নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে এই শ্রীপুর স্থানটি শ্রীরামপুরের আখ্যায় ভূষিত হয়। উত্তরাধিকার সূত্রে এই পরিবার পরবর্তীকালে বড় তরফ এবং ছোট তরফ এই দুই খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। তবে বর্তমানে এই রাজবাড়িতে বড় তরফের বংশধররাই বসবাস করেন।

বনেদিবাড়ির দূর্গাপুজো ইতিহাস এবং রীতিনীতি

Photo of শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে আপনি পেতে পারেন ঐতিহ্যবাহী সময়ের প্রতিচ্ছবি... 3/3 by Surjatapa Adak
দুর্গাপুজোর সৌন্দর্য (ছবি সংগৃহীত)

এই রাজবাড়ির প্রধান দর্শনীয় বিষয়বস্তু হলেন দেবী সর্বমঙ্গলা। একদা রাজা মনোহর রায় সম্পত্তি ক্রয় করার সময় অনেকগুলি মন্দিরের সন্ধান পান। একদিন বর্ধমান জেলার এক জলাশয়ে খনন কার্য শুরু হয়। সেই খনন কার্য চলাকালীন মনোহর রায় স্বপ্নে মা সর্বমঙ্গলার দেখা পান । তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো পরদিন সেই জলাশয় খনন কার্যের মাধ্যমে এখানে অষ্টধাতুর দূর্গামূর্তি আবিষ্কার করা হয়। ১১৪১ বঙ্গাব্দে শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে মা সর্বমঙ্গলার মূর্তি স্থাপন করা হয়।

এই সময় থেকেই রাজবাড়িতে মা সর্বমঙ্গলার আরাধনা শুরু করা হয়। এই রাজবাড়ির দূর্গাপুজোটি শেওড়াফুলি অঞ্চলের প্রাচীন দূর্গাপুজো হিসেবে পরিচিত। প্রায় ২৯০ বছরের এই পুজোর সূচনা করেন রাজা মনোহর রায়। এই রাজবাড়িতে কালিকা পুরাণ অনুযায়ী দূর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়। পুজোর মূল বৈশিষ্ট্য হল কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে এখানে দেবীর বোধন শুরু হয়। অর্থাৎ মূল দূর্গাপুজো সূচনার ৪২ দিন আগে থেকেই এই সাবেকি পুজোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় । এই বিশেষদিনে সকালে চণ্ডিপাঠ থেকে শুরু করে সন্ধে আরতি সহ বোধনে সমস্ত রীতি সাড়ম্বরে পালন করা হয়। প্রত্যহ দেবীকে লুচি, আলু ভাজা, বিভিন্ন রকমের নাড়ু সহযোগে নৈবেদ্য দেওয়ার প্রচলন আছে। একসময় এখানে বলির ও ব্যবস্থা ছিল, তবে বর্তমানে দেবীকে চালকুমড়ো উৎসর্গ করা হয়। মহাষ্টমীতে এখানে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়। দূর্গাপুজো ছাড়াও প্রতিদিন রাজ পরিবারের সদস্যরা এখানে দেবী সর্বমঙ্গলার নিত্যপুজো করেন।

কীভাবে যাবেন?

ট্রেনে - হাওড়া থেকে ব্যান্ডেল বা তারকেশ্বর লোকাল ট্রেন ধরে ৩৫ মিনিটের দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যেতে পারেন শেওড়াফুলি। স্টেশন থেকে মিনিট পাঁচেক পায়ে হেঁটে দেখে আসতে পারেন শেওড়াফুলি রাজবাড়ি।

সড়কপথে - কলকাতা থেকেও গাড়ি ভাড়া করে ঘন্টা দেড়েক পথ অতিক্রম করে পৌঁছে যেতে পারেন গন্তব্যে।

বাংলার এই অচেনা ইতিহাসের সাক্ষী থাকতে শেওড়াফুলি রাজবাড়ির পক্ষ থেকে রইলো উষ্ণ অভ্যর্থনা।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।