ইতিহাস, সাবেকিয়ানার পথ ছুঁয়ে ঘুরে আসতে পারেন বাওয়ালি রাজবাড়ি থেকে...

Tripoto

রাজবাড়ি বাওয়ালির ইতিহাস

রাজবাড়ির ঐতিহ্য এবং সৌন্দর্য (ছবি সংগৃহীত)

Photo of The Rajbari Bawali, PS, Rajbari, Bawali, Nodakhali, West Bengal, India by Aninda De

আজ থেকে কয়েকশ বছর আগে যদি আমরা ফিরে যাই, তাহলে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে আমরা দেখতে পাব নবাব, জমিদার বা রাজপরিবারের প্রভাব প্রতিপত্তির স্বর্ণযুগ। তাদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা এবং অর্থ প্রাচুর্য আজও আমাদের ঈর্ষার বিষয়। বাওয়ালি রাজবাড়ির গল্পও তার থেকে কোনও অংশে কম নয়।

মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনকালে উত্তরপ্রদেশের সৈনিক শোভা রাম রাই বাংলার কৃষক এবং দস্যুদের সম্মিলিত বিদ্রোহ দমন করেন। প্রতিদানে তিনি পান প্রায় বাংলার ৩০০,০০০ একর জমি। লোকমুখে কথিত বংশানুক্রমে তারা এই সম্পত্তির প্রভূত সদ্ব্যবহার করেন এবং সুন্দরবন হতে অনতিদূরে ২৪ পরগনায় নিজেদের স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। ততদিনে এই বংশ মণ্ডল জমিদার বংশ বা মণ্ডল রাজ পরিবার হিসেবে পরিচিত। ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তায় এবং তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে সখ্যতা বজায় রেখে তাঁরা ক্রমে পরাক্রমশালী হয়ে ওঠেন।

স্থানীয় বাউল সম্প্রদায়ের মানুষজন বনবিবি এবং দক্ষিণ রায়ের পুজো করলেও মণ্ডল পরিবার ছিলেন রাধা কৃষ্ণের পূজারী এবং তাঁরাই এই অঞ্চলে প্রথম মন্দির হিসেবে শ্রী রাধকান্ত জিউর মন্দির প্রতিষ্ঠান করেন। কালক্রমে আরও বহু মন্দির প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাঁরা এই অঞ্চলের ইতিহাস এবং সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে তোলেন।

মণ্ডল পরিবারের স্থাপত্যকর্মের শ্রেষ্ঠতম নিদর্শন বাওয়ালি রাজবাড়ির বয়স আজ প্রায় ২৫০ বছর। স্বাধীনতার পরে নানা কারণে রাজবাড়ি অনাদরে এবং পরিচর্যার অভাবে ভগ্নপ্রায় হতে থাকে। সেই সময়ে বেশ কিছু বাংলা ফিল্ম এবং সিরিয়ালের শুটিং হলেও রাজবাড়িটি হারানো রূপ খুঁজে পেয়েছে কিছুদিন আগেই। হেরিটেজ গেস্ট হাউস এবং হোটেল রূপে মূল রাজবাড়িটিকে সংস্কার করা হয়েছে এবং বর্তমানে পর্যটকদের জন্য হয়ে উঠেছে অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান। উপরি পাওনা এখানে থাকা খাওয়ার অর্থাৎ রাজার হালে হারানো বাংলার জমিদারি আভিজাত্যকে চেখে দেখার সুযোগ।

রাজবাড়ি বাওয়ালির ঘরগুলো

২০১৮ সালের পর থেকে রাজবাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হয় এবং তার হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করা হয়। বর্তমানে বাড়িটিতে অথিতিদের জন্যে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ঘর। আসুন, দেখে নিই আপনাদের জন্যে কী কী অপেক্ষা করে আছে

ক্ল্যাসিক হেরিটেজ রুম - ঘরগুলিতে পাবেন আধুনিক সমস্ত রকম সুযোগসুবিধা এবং তারই মাঝে প্রাচীন ঐতিহ্যের আমেজ।

নতুন বাড়ি - এই ঘরের উল্টোদিকেই রয়েছে রাজপুকুরের অপরূপ শোভা।

জমিদারি সুইট - শুধুমাত্র ঘর নয়, এখানে পেয়ে যাবেন গোটা সুইটের সব রকমের সুবিধা।

রয়াল সুইট - বিলাসবহুলের চরমে থাকতে চাইলে সপরিবারে চলে আসতে পারেন রয়াল সুইটের ঘরে।

ডাকবাংলো - রাজবাড়ি কম্পাউন্ডের মধ্যেই রয়েছে ৯০০ বর্গফুটের ডাকবাংলো, যেখানে দুটি ঘর মিলিয়ে একসাথে থাকতে পারবেন প্রায় ৬ জন।

প্রতিটি ঘর বা সুইটেই রুয়েছে শীততাপনিয়ন্ত্রণ, চা-কফি মেকার, ওয়ার্ডরোব এবং অন্যান্য সুবিধা। বেশ কিছু অফারে সকালোর জলখাবারও অন্তর্গত।

বাওয়ালিতে একদিন

রাত কাটানোর ইচ্ছে না হলে আপনার নিতে পারেন ডে আউট প্যাকেজ। সারাদিন ধরে রাজবাড়ি এবং তার বিভিন্ন অংশে যেতে পারবেন এবং করতে পারবেন জমিদারি থালি লাঞ্চ। প্যাকেজে সঙ্গে রাখতে পারেন সকালের জলখাবার, বা বিকেলের চা এবং টুকটাক।

বাওয়ালি রাজবাড়িতে কী কী করার আছে

পিয়ানো রুমে প্রিয়জনকে নিয়ে নিভৃতে করতে পারেন লাঞ্চ বা ডিনার।

রাজবাড়ির সন্ধ্যারতি দেওয়ার অনুষ্ঠানে আপনি অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

নৌকা করে ঘুরে আসতে পারেন হুগলি নদীর বুকে, আপনার জন্যে অপেক্ষা করে থাকবে মোহময়ী সূর্যাস্ত।

ঘুরে আসতে পারবেন রাজবাড়ি সংলগ্ন গ্রাম বাংলার মেঠো পথঘাট ধরে। শহুরে জীবন থেকে এ এক অসাধারণ মুক্তি।

রাজবাড়ির রান্নাঘরে গিয়ে জেনে নিতে পারেন জমিদার বাড়ির অন্দরমহলে ঠিক কেমন কুইজিন সমাদর পায়।

আর কিচ্ছু না করতে চাইলে আরামকেদারায় পা তুলে কয়েকটা দিন রিল্যাক্স করতে চাইলে তাও পারেন, এখানে তো আপনিই রাজা।

কীভাবে পৌঁছবেন

কলকাতা শহর থেকে গাড়ি করে চলে আসাই সবথেকে সুবিধের। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্তর্ভুক্ত বজবজের কাছে উত্তর বাওয়ালি গ্রামে অবস্থিত রাজবাড়ি বাওয়ালি। গাড়ি করে কলকাতা থেকে পৌঁছতে সময় লাগবে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা।

মোটামুটি খরচ

দুজনের জন্যে একদিন একরাতের ভাড়া মোটামুটি এইরকম :

ক্ল্যাসিক হেরিটেজ রুম - ৮৫০০/-

জমিদারী সুইট - ১২,৫০০/-

রয়াল সুইট - ১৭,৫০০/-

ডাকবাংলো - ২১,৫০০/- (দুটি ঘর, ৬ জনের জন্যে)

নতুন বাড়ি - ১০,০০০/-

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।