হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী সিদ্ধিদাতা হিসেবে দেবাদিদেব মহাদেব এবং পার্বতীর পুত্র শ্রী গণেশকে পুজো করা হয়। স্কন্দপুরাণ অনুযায়ী ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতে ভগবান গণেশের পুজো হয়। এইদিন শ্রী গজানন ভক্তদের উদ্দেশ্যে আশীর্বাদ স্বরূপ তাদের বুদ্ধি, সমৃদ্ধি সৌভাগ্যের দরজা খুলে দেন। সংস্কৃত, তামিল, তেলেগু, কোন্নড় ভাষায় এই উৎসবকে বিনায়ক চতুর্থী বলা হয় এবং কোঙ্কনি ভাষার এই উৎসবের নাম চবথ। নেপালি একে চথা বলে।
গণেশ চতুর্থী কোথায় কোথায় অনুষ্ঠিত হয়-
গণেশ চতুর্থী ভারতবর্ষের মূলত মহারাষ্ট্র, গোয়া, কর্ণাটক, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু,অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাট এবং ছত্রিশগড়ে পালিত হয়। এছাড়াও নেপাল ও শ্রীলঙ্কাতেও এই পুজোর প্রচলন রয়েছে।
ভারতবর্ষের বিখ্যাত কিছু গণেশ মন্দির-
১. মতি ডুংরি গণেশ মন্দির (জয়পুর)
১৭৬১ সালে জয়পুরে পাহাড় বেষ্টিত দুর্গের মাঝখানে এই মন্দিরটি স্থাপন করা হয়। চুনাপাথর ও মার্বেল দিয়ে নাগারা স্থাপত্যকলার আঙ্গিকে তৈরি প্রায় ২৫০ বছর পুরনো এই মন্দিরটিতে সিদ্ধিদাতা গণেশের ৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো মূর্তি রয়েছে। জয়পুর শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে এই গণেশ মন্দিরটি অবস্থিত।
২. উচ্ছি পিল্লায়ার মন্দির (তিরুচিরাপল্লি)
পল্লবদের তার নির্মিত এই মন্দিরটি ত্রিচির রকফোর্টের চূড়ায় অবস্থিত। বিজয়নগর রাজবংশের শাসনকালে মাদুরাই শাসকরা এই মন্দিরটি কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। মন্দিরটি থেকে ত্রিচি এবং কাবেরী নদী দেখতে পাওয়া যায়। লোকমুখে কাহিনী শোনা যায় একবার গণেশ রাখাল বালকের ছদ্মবেশে বিভীষণকে বিষ্ণুমূর্তি রাখতে দিলে তিনি তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে অজান্তে গণেশকে আঘাত করেন এবং সেই চিহ্ন আজও রয়েছে এই মন্দিরের মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়।
৩. সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির (মুম্বাই)
১৮০১ সালে এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়। এই মন্দিরের সিদ্ধিদাতা গণেশকে নবসাচ গণপতিও বলা হয়, যার অর্থ হল এই মন্দিরে এসে আপনি যদি মন থেকে সত্যিই কিছু চান, তাহলে তা পাবেন। মুম্বাইয়ের বহু জনপ্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রীদের এই মন্দিরে আসছে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, অ্যাপেল কোম্পানির সিইও টিম কুক ভারতবর্ষে এসে এই মন্দিরে প্রথম দেবতা দর্শনের পর সারা দেশ ভ্রমণ শুরু করেন।
৪. ভারসিদ্ধি বিনায়গর মন্দির (চেন্নাই)
চেন্নাইয়ের বে শান্তিনগরে এই মন্দিরটি অবস্থিত। প্রতিবছর গণেশ চতুর্থীতে এখানে খুব ধুমধাম করে সঙ্গীতানুষ্ঠান পালন করা হয়, যা দেখার জন্য ভারত বর্ষ থেকে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু তীর্থযাত্রী আসেন।
৫. রণথাম্বর গণেশ মন্দির (রাজস্থান)
এটি ভারতবর্ষের অন্যতম প্রাচীন গণেশ মন্দির। শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং তার স্ত্রী রুক্মিণী তাদের বিবাহের পূর্বে এই মন্দিরে এসে আশীর্বাদ চেয়েছিলেন।এই মন্দিরটি প্রায় হাজার বছরের পুরনো রণথাম্বর দুর্গের পাশে অবস্থিত। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রাজা যুদ্ধকালীন সংকট পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।
৬. কানিপকম বিনায়ক মন্দির (চিত্তর)
একাদশ শতকের চোল রাজাদের দ্বারা নির্মিত এই গণেশ মন্দিরটির বহু ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে। মন্দিরে অবস্থিত গণেশ মূর্তির মাথায় সাদা, হলুদ এবং লাল রং দেখতে পাওয়া যায়, যা দেখে ভক্তরা বিশ্বাস করেন এই মূর্তিটি কোনও পবিত্র জলে ডুব দিয়ে এসেছে।এই মন্দিরে প্রায় ২১ দিন ধরে গণেশ চতুর্থী উৎসব পালন করা হয় এবং সেই সময় বিশাল এক মিছিল বের করা হয়।
৭. দাগদুশেঠ হালওয়াই গণপতি মন্দির (পুনে)
কথিত আছে দাগদুশেঠ নামে একজন মিষ্টি বিক্রেতা একবার মহামারীতে তার পুত্র সন্তানকে হারান। তারপর তিনি তার সমস্ত দুঃখ এবং হতাশাগ্রস্ত জীবন থেকে বেরিয়ে এসে গণেশ মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। মন্দির প্রতিষ্ঠা গণপতি প্রায় সাড়ে সাত ফুট লম্বা, চার ফুট চওড়া এবং বহু মূল্যবান গহনায় সজ্জিত।
এই সমস্ত গণেশ মন্দির ছাড়াও রত্নগিরির গনপতিপুল মন্দির, গ্যাংটকের গণেশ তোক মন্দির, কেরালার কালামাসেরি মহাগণপতি মন্দির ইত্যাদি জায়গাতেও সাড়ম্বরে গণেশ চতুর্থী পালন করতে দেখা যায়।