আহিরীটোলার এই মন্দিরটিতে বুড়োশিবকে বেঁধে রাখা হয় শিকল দিয়ে কিন্তু কেন? 

Tripoto

শিবলিঙ্গের প্রাণময় প্রতিষ্ঠান (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Ahiritola Launch Ghat, Strand Bank Road, Ahiritola, Beniatola, Kolkata, West Bengal, India by Deya Das

কেন শিকলে বাঁধা এই বুড়ো শিবলিঙ্গ?

মহাশিবরাত্রি হিন্দুদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যা দেবাদিদেব মহাদেব ‘শিবের মহারাত্রি’ বলে পরিচিত। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে এই ব্রত পালন করা হয়। মূলত, অন্ধকার ও অজ্ঞতাকে দূর করার জন্যই এই ব্রত পালিত হয়। শিবরাত্রির দিন শহর এবং গ্রামের বিভিন্ন মন্দিরে ভক্তদের ভিড় যথেষ্ট লক্ষণীয়। তবে শুধুমাত্র পুজো দিতে নয় শিবের মাহাত্ম্য এবং বিভিন্ন মন্দিরের রহস্য কথা উন্মোচনের জন্যও অনেক মানুষ এই দিন মন্দিরে জমায়েত হন।

আজ এই রকম একটি শিব মন্দিরের রহস্য উন্মোচন করতে আমরা পাড়ি দেব মহানগরী তিলোত্তমার বুকে।

মোটা শিব বা বুড়ো শিব মন্দির:-

মোটা শিবের কাছে ভক্তবৃন্দের আগমন (ছবি সংগৃহীত)

Photo of আহিরীটোলার এই মন্দিরটিতে বুড়োশিবকে বেঁধে রাখা হয় শিকল দিয়ে কিন্তু কেন? by Deya Das

ঐতিহাসিক মহানগরী কলকাতার ইতিহাস ছড়িয়ে রয়েছে তার আনাচে-কানাচে। একটু খোঁজাখুঁজি করলে বেশ রহস্যময় কিছু বিষয় আমাদের চোখের সামনে এসে ধরা দেবে। সেইরকমই একটি রহস্যময় জায়গা হল নিমতলা স্ট্রিট এলাকা। এখানে ১৬ নম্বর মহম্মদ রমজান লেনে অবস্থিত বহু পুরনো বুড়ো শিব মন্দির বা মোটা শিব মন্দির দর্শনার্থীদের কাছে একটি অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা। প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতা, ২৪ ফুট লম্বা এবং ৩০ ফুট চওড়া এই সুবিশাল প্রাচীন ভাঙাচোরা মন্দিরটি বাংলার আটচালা মন্দিরের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মন্দিরের মাথা থেকে গা পর্যন্ত নেমে এসেছে বটের ঝুরি, যা দেখতে অনেকটা শিবের জটার মত।

Photo of আহিরীটোলার এই মন্দিরটিতে বুড়োশিবকে বেঁধে রাখা হয় শিকল দিয়ে কিন্তু কেন? by Deya Das

আটচালা এই বৃহত্তর মন্দিরের ভাস্কর্যের রূপকার ছিলেন শ্রী গদাধর দাস । মন্দিরের ভিতরে রয়েছে কালো পাথরের তৈরি প্রায় ১০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি শিবলিঙ্গ, যার পোশাকি নাম দুর্গেশ্বর শিব। তবে এই শিবলিঙ্গের আকার দেখে ভক্তরা এনাকে মোটা শিব নামে সম্বোধন করেন। বিভিন্ন পূজা অনুষ্ঠানে শিবলিঙ্গে জল ঢালার জন্য পাশে রয়েছে একটি বড় লোহার সিঁড়ি।

শিব মন্দিরের ইতিহাস ও প্রাচীন রহস্য উন্মোচন:-

ব্রিটিশ শাসিত কলকাতার অন্যতম গণ্যমান্য ব্যক্তি হাটখোলার দত্ত পরিবারের মদনমোহন দত্তের দুই পুত্র রসিকলাল দত্ত এবং জহরলাল দত্ত আনুমানিক ১৭৯৪ সালে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২২৭ বছরের পুরনো এই ভগ্নপ্রায় আটচালা মন্দির সম্পর্কে বেশ কিছু লোককথা কথিত আছে।

ফুল আর বেলপাতায় সাজানো হচ্ছে মহাদেবকে (ছবি সংগৃহীত)

Photo of আহিরীটোলার এই মন্দিরটিতে বুড়োশিবকে বেঁধে রাখা হয় শিকল দিয়ে কিন্তু কেন? by Deya Das

শোনা যায়, বহুকাল আগে এই মন্দিরের একজন পুরোহিত রাত্রিবেলা পুজো শেষ করে মন্দিরের দরজা বন্ধ করে বাড়ি ফিরে যান। পরদিন সকালে এসে মন্দিরের দরজা খুলতেই তিনি দেখেন মন্দির শূন্য। শিবলিঙ্গ সেখানে নেই। বহু খোঁজার পর সেই শিবলিঙ্গকে তারা পাশে অবস্থিত গঙ্গা নদীর তীরে খুঁজে পান এবং তাঁকে আবার মন্দিরে নিয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন। এইভাবে শিবলিঙ্গ যাতে ঘুরে বেড়াতে না পারেন সেটি বন্ধ করার জন্যই এই মোটা শিবকে পরবর্তীতে শিকল দিয়ে আবদ্ধ করা হয়। তবে কেউ কেউ আবার মনে করেন তখন কংক্রিট ছিল না বলে মাটির বেদির উপরে এই শিবলিঙ্গ রাখা হত। গঙ্গা মন্দিরের খুব কাজ দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময় জোয়ারের জল এই মন্দিরে প্রবেশ করে শিবলিঙ্গকে নড়িয়ে তার স্থানচ্যূত করত। ফলে, শিবলিঙ্গ যাতে আবার নড়ে না যায় সেই জন্য শিবলিঙ্গকে বেঁধে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও অনেকেই মনে করেন।

মন্দিরে প্রবেশের সময়:-

ছবি সংগৃহীত

Photo of আহিরীটোলার এই মন্দিরটিতে বুড়োশিবকে বেঁধে রাখা হয় শিকল দিয়ে কিন্তু কেন? by Deya Das

প্রতিদিন ভোর ৪.৩০ থেকে দুপুর ১২.০০ অবধি মন্দির খোলা থাকে। আবার বিকেল ৪.০০ থেকে মন্দির পুনরায় খোলা হয়। দিনের বেলা ভক্তদের জন্য মন্দিরে প্রবেশ এবং পুজো দেওয়ার কোনো বাধা-নিষেধ নেই।

বিশেষ আকর্ষণ:-

• বিকালবেলার সন্ধ্যা আরতি।

• মহাদেবের ফুলের রাজবেশ।

গন্তব্যে পৌঁছানোর যাত্রাপথ:-

• হাওড়া স্টেশন থেকে ফেরিলঞ্চে আহিরীটোলা পৌঁছে সেখান থেকে মাত্র ১০ মিনিটের হাঁটা পথে এই মন্দিরে পৌঁছনো যায়।

• কলকাতা থেকে চক্ররেলে শোভাবাজার আহিরীটোলা পৌঁছনো যায়। এরপর সেখান থেকে হেঁটে এই মন্দিরে যাওয়া যায়।

• অথবা, মেট্রোরেল করে শোভাবাজার সুতানটি স্টেশনে নেমে, সেখান থেকে নিমতলা পৌঁছনোর অটো ধরতে হয়। আবার বিধাননগর থেকে নিমতলা যাওয়ার অটো করে এই মন্দিরে আসা যায়।

তাহলে শান্ত, সুন্দর, ঐতিহাসিক রহস্য সমন্বিত, প্রাচীনত্বের ছোঁয়ায় গড়ে ওঠা এই বুড়ো শিব মন্দিরটি এবার হতে পারে শিবরাত্রি উদযাপনে আপনার একমাত্র সঙ্গী।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।