রাক্ষস আর ভূত প্রেতের আরাধনা! গাদ্যাচি যাত্রায় ধরা পড়ে গোয়ার এক অন্য রূপ 

Tripoto
Photo of রাক্ষস আর ভূত প্রেতের আরাধনা! গাদ্যাচি যাত্রায় ধরা পড়ে গোয়ার এক অন্য রূপ  1/3 by Doyel Banerjee
প্রেত সাধনা (ছবি প্রতীকী)

গোয়ার কথা বলতেই মনে পড়ে নীল সমুদ্র আর দুর্দান্ত সব সমুদ্র সৈকতের কথা। অনেকেই গোয়ার অন্য রূপের সন্ধানে এখানকার জঙ্গল, স্থাপত্য আর অসংখ্য পাখির কথাও বলেন। কিন্তু মুদ্রার উল্টো পিঠে আছে এক অদ্ভুত গোয়া। হলফ করে বলতে পারি এই গোয়ার কথা আপনি আগে কখনও শোনেননি। গোয়ার সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, খাওয়া দাওয়ার অনেকটাই পর্তুগিজ সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত। কিন্তু তাছাড়াও এখানে আছে চিরন্তন কয়েকটি হিন্দু প্রথা। যার মধ্যে অন্যতম হল শিগমোর বসন্তকালীন উৎসব। কোঙ্কণ অঞ্চলে হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ফাল্গুন মাসে এই শিগমো উৎসব হয়ে থাকে। কেন এই উৎসব অনন্য? কারণ এই উৎসবের মাধ্যমে ধন্যবাদ জানানো হয় বিদেহী আত্মা ও ভূতেদের।

শিগমো উৎসবের একটি অংশ হল গাদ্যাচি যাত্রা যা দেভানচর বা রাক্ষসকে উৎসর্গ করা হয়। সাল, বোরদে - বিচোলেম, পিলগাঁও, কুদনে, সাভাই -ভেরেম এই সব গ্রামের মানুষরা মনে করেন রাক্ষস তাঁদের গ্রাম রক্ষা করে। গ্রামের মানুষরা মনে করেন না যে দেভানচর বা রাক্ষস কোনও ক্ষতি করে। সবচেয়ে আকর্ষক গাদ্যাচি যাত্রা হয় সাল গ্রামে। এটি দেখতে গোয়া ছাড়াও মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক থেকে অনেকে আসেন। পুরুষরা একরকমের ধুতি পরে এই যাত্রা করে। এই ধুতিকে বলে গাদে। আর এখান থেকেই গাদ্যাচি নাম এসেছে। যার অর্থ হল একদল ধুতি পরা লোক। এই যাত্রায় তাঁরাই অংশগ্রহণ করেন যাঁদের মধ্যে আত্মা প্রবেশ করেছে।

Photo of রাক্ষস আর ভূত প্রেতের আরাধনা! গাদ্যাচি যাত্রায় ধরা পড়ে গোয়ার এক অন্য রূপ  2/3 by Doyel Banerjee
বিদেহী আত্মাদের প্রতি সমারোহ যজ্ঞ (ছবি সংগৃহীত)

পূর্ণিমার সময় সাল গ্রামে মহাদেবের মন্দিরের সামনে মান্দ বলে একটি পবিত্র জায়গায় আমগাছের ডাল কেটে পুঁতে দেওয়া হয়। মহাদেবের মন্দির বেছে নেওয়া হয় কারণ তিনি হলেন ভূতনাথ অর্থাৎ ভূত প্রেতের অধীশ্বর। পরের দিন গ্রামবাসীরা মধ্যরাতে মান্দে জমা হয়ে গান ও মন্ত্র উচ্চারণ করেন। আত্মাকে জাগানোর জন্য যে গান গাওয়া হয় তাকে ঘরানেস বলে। এই সময় যারা গাদ্যাচি করবেন তাঁরা আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন কারণ তখন দেভানচর তাঁদের আগুন জ্বালিয়ে পথ দেখান। এই আগুনকে বলা হয় উজ্জভডি। সেই আগুনের দিকে গাদে পরা পুরুষরা ছুটে যান। দেভানচর জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে তাঁদের বিভ্রান্ত করেন। পর্যটক ও অন্যান্য গ্রামবাসীরা এই বিভিন্ন জায়গায় জ্বলতে থাকা আগুন দেখতে পান। তারপর গাদে পরা পুরুষরা আবার মান্দে ফিরে আসেন। বলা হয় দেভানচর কাউকে কাউকে আটকেও রাখেন নিজের কাছে রাখবেন বলে। মান্দে সবাইকে গুণে দেখা হয়। কেউ না থাকলে তাঁর খোঁজ করা হয়।

যাঁরা ফিরে আসে না,দেখা যায় তাঁরা জঙ্গলে শুয়ে আছেন। তাঁদের দেহ শক্ত হয়ে গেছে। তাঁদেরকে নিয়ে এসে শুশ্রূষা করা হয়। এই পদ্ধতি তিন দিন ধরে চলে। যেখানে মন্ত্র পরা হয় আর গাদেরা নাচ করেন। তৃতীয় দিনে যেসব গাদেরা তখনও আচ্ছন্ন থাকে তাঁরা কবরস্থান থেকে না পোড়ানো মৃতদেহ বা কাঠ নিয়ে আসেন। সেগুলো হোলি বা ওই আম গাছের ডালে পুঁতে দেওয়া হয়। সেগুলোর চারপাশে কিছু প্রথা মেনে চলা হয়। তিন দিন পর এই উৎসব শেষ হলে গাদেরা তাঁদের আচ্ছন্ন ভাব কাটিয়ে ওঠে কিন্তু বিগত তিন রাত্তির ধরে যা যা হয়েছে তাঁদের কিছু মনে থাকে না।

Photo of রাক্ষস আর ভূত প্রেতের আরাধনা! গাদ্যাচি যাত্রায় ধরা পড়ে গোয়ার এক অন্য রূপ  3/3 by Doyel Banerjee
গাদ্যাচি যাত্রার এক উল্লেখযোগ্য দিক (ছবি সংগৃহীত)

পইগুইনিমে আবার এই প্রথার নিয়ম কানুন আলাদা। এখানে শয়তানের আত্মার দেবতা বেতালের মন্দিরে এই উৎসব পালিত হয়। মন্দিরের উল্টো দিকে একটা এরিকা নাটের গাছ পুঁতে দেওয়া হয়। সেই গাছে একটা ঘূর্ণায়মান চাকায় হুকের সঙ্গে গাদেরা ঝুলে থাকে। পুরনো পুঁথি থেকে কিছু মন্ত্র পড়া হয় আর চাকা ঘুরতে থাকে। দর্শক যখন মনে করে যে গাদেরা দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছে তখন এই প্রথার সমাপ্তি হয়।

কোথায় দেখব গাদ্যাচি যাত্রা?

স্থানীয় মানুষদের দৃষ্টিভঙ্গীতে যদি এই উৎসব দেখতে চান তাহলে আপনাকে সাল গ্রাম, উত্তর গোয়ার বিচোলিমে যেতে হবে। দক্ষিণ গোয়ার বিচোলিমেও আপনি যেতে পারেন।

এই উৎসব একটু গা ছমছমে হয় বটে কিন্তু পর্তুগিজ প্রভাবমুক্ত এই উৎসব একদম খাঁটি ভারতীয়। অঞ্চলের সংস্কৃতির পরিবর্তনকে দূরে রেখে এই উৎসব এখনও তার নিজস্বতা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। নিঃসন্দেহে এটা একটা অন্য স্বাদের অনুভূতি।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন

(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)