কনকনে শীত হোক বা ভরা আকাশে হোক বৃষ্টিমেঘের আনাগোনা, সব পরিস্থিতিই আরেকটু মনোরম হয়ে ওঠে এক কাপ উষ্ণ কফির আবেশে। নেসক্যাফের শৈশব ছাড়িয়ে শহর কলকাতা মেতে উঠেছে নানা রকমের কফিতে; কেমেক্স হোক বা ফ্রেঞ্চ প্রেস, আজ আমরা সব ধরণের কফিতেই বেশ সড়গড়। তাই কলকাতার ক্যাফেগুলোও নিয়ে আসছে নতুন নতুন থিম, শুধু ভাল কফি বা খাবারেই নয়, সুন্দর সুন্দর মনোগ্রাহী আর আকর্ষণীয় থিমের মাধ্যমে আমাদের মন জয় করে নিতে হাজির শহরের নানা প্রান্তের নানা ক্যাফে। চলুন, দেখে নিই কোন ক্যাফে কীসের জন্য বিখ্যাত আর কোন ক্যাফেগুলো কোনওমতেই মিস করা উচিত নয়।
পেট ফ্রেন্ডলি বা পোষ্যদের নিয়ে যাওয়ার মতন ক্যাফে - দ্য গ্রিন হাউস
আপনার পোষ্য কফি খেতে ভালোবাসুক বা না বাসুক, তাকে ছাড়া কফি খেতে যেতে যে আপনার মন চায় না, তা কিন্তু বোঝে সল্টলেক সেক্টর ১ এর এই পেট ক্যাফেটি। নিয়ে আসতে পারেন আপনার পোষ্যকে। অবাধে খেলে বেড়ানোর মতো যথেষ্ট জায়গা সে পাবে ক্যাফেটির ভেতরে। ক্যাফেটির নিজস্ব কয়েকজন চারপেয়ে সদস্যও সর্বদা হাজির থাকে এখানে, তাই চাইলে তাদের সঙ্গেও আপনি খেলা করতে পারেন। বহুদিন ধরেই শহরে এমন সব জায়গায় প্রয়োজন যেখানে নির্দ্বিধায় আপনি আপনার পোষ্যদের নিয়ে যেতে পারবেন এবং আপনার পোষ্যটিও সেখানে সযত্নে সময় কাটাতে পারবে। গ্রীন হাউস ঠিক এইরকম একটি জায়গা।
কোথায় : বি এফ ১৮৬, সেক্টর ১, সল্টলেক
বাইকারদের পছন্দ বাইকার্স ক্যাফে
নিজের ভিতরের লাগামছাড়া বাইকার সত্ত্বাটিকে একটু রিল্যাক্স করাতে চান, তাহলে চলে আসুন এলগিন রোডের কাছের বাইকার্স ক্যাফেতে। বাইক এবং বাইকার্সদের পছন্দের নানা জিনিস নিয়ে সজ্জিত জায়গাটি সত্যি ভেতরের রাইডারকে ডাক দেয়। বাইক পার্টস, দেশি বিদেশি বাইক মডেল, নানা রকম হেলমেট দিয়ে ভিতরটি সাজানো। কফির পাশাপাশি খেয়ে দেখতে পারেন এখানকার অসাধারণ কন্টিনেন্টাল এবং ইউরোপীয় ডিশগুলো। হুকার জন্যে আছে একটি আলাদা জায়গা। আর চাইলে খেলতে পারেন নানা রকম ইন্ডোর গেমস, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। মাঝে মাঝে পেয়ে যাবেন লাইভ মিউজিক পারফরম্যান্সও!
কোথায় : ১ম ফ্লোর, প্ল্যাটিনাম মল, এলগিন রোড
ওপেন এয়ার ক্যাফে : থ্রটল শটল
খোলা হাওয়ার তলায় ঢিমে তালে বাজছে বব মার্লে, চারিদিকে নানা রকম স্টিকার আর আর্টওয়ার্ক দিয়ে ভরা দেওয়াল। একটা ছোট্ট কাঠের ব্রিজ, সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন পেটস আর বাইকস, যেন একটা ওপেন এয়ার গ্যারেজ থিমের ক্যাফে, কিন্তু অসাধারণ সুন্দর। কলকাতা শহরের বুকে থ্রটল শটল সত্যি অন্যরকম একটা ক্যাফে, যা খুব কম সময়েই নিজের একটা জায়গা বানিয়ে ফেলেছে সবার মনে। এখানে গেলে অবশ্যই খাবেন কিমা পাও এবং হান্ড্রেড মাইলস চা। সব মিলিয়ে ডোগ লাভার্স, ক্যাট লাভার্স, বাইক লাভার্স, এবং কফি ও ফুড লাভার্স, সবার জন্যই এই কুল ক্যাজুয়াল ক্যাফেটি সারা সন্ধে কাটানোর জন্যে একদম সেরা পছন্দ।
কোথায় : আকাঙ্ক্ষা মোড়, রাজারহাট, নিউটাউন
বুক ক্যাফে : চা বার
কলকাতা মানেই কিন্তু বইপ্রেমীদের শহর। এক কাপ চা হাতে নিয়ে মনের মতো বইয়ের পাতা ওল্টানোর মধ্যে যে আমেজটা আছে, তা প্রকৃত বইপ্রেমীদের কাছে স্বর্গসুখতুল্য। তাই যদি এরকম ক্যাফে থাকে, যেখানে আপনি বই পড়তে পারবেন, বই কিনতে পারবেন, কফি বা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে নানা লেখকের নানা বই নেড়েচেড়ে দেখতে পারবেন, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। পার্ক স্ট্রিটের চা বার এরকমই একটি জায়গা, পাবেন নানা রকম চা এবং চায়ের সাথে টা, পাবেন বিশ্ববিখ্যাত বই এর ভান্ডার আর মাঝে মাঝেই এখানে হয় নানা রকম প্রদর্শনী বা বই প্রকাশ অনুষ্ঠান।
চা বার ছাড়াও বই এর কফির সান্নিধ্য একসাথে পেতে চাইলে যেতে পারেন এলগিন রোডের স্টোরি, পার্ক স্ট্রিটের বিংশ শতাব্দী, বা লেক গার্ডেন্সের লাইটহাউস ক্যাফেতে। লাইটহাউস ক্যাফেতে ফটোগ্রাফি সম্পর্কিত নানা ভালো বই পাওয়া যায়।
আর্ট ক্যাফে আর্টসি
বাঙালি যদি কফির কাপ হাতে নিয়ে একটু শিল্পসমালোচনা, একটু ইন্টেলেকচুয়াল কথোপকথন না করলো, তাহলে আর কীসের বাঙালি, কী বা তার আড্ডা। সেই শিল্প নিয়ে আলোচনা করার কাজ সহজ করে দিতে তৈরি হয়েছে আর্টসি ক্যাফে। অসাধারণ সুন্দর এমবিয়েন্স, মনমাতানো খাবার আর তাক লাগিয়ে দেওয়া চা কফির পাশাপাশি আপনি এখানে কিনতে পারবেন নানা রকম পেন্টিং এবং আর্টওয়ার্ক। এই পেন্টিংগুলো ঘর সাজানোর জন্যে আদর্শ এবং আপনার দেওয়ালে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
কোথায় : ২৩০/বি এ.জে. সি বোস রোড, মিন্টো পার্ক
ভ্রমণ আর ট্যাভেল থিমের ক্যাফে ট্র্যাভেলিস্তান
এক কাপ মকাইবাড়ি চা হাতে নিয়ে যদি মনে মনে ঘুরে আসতে পারতেন কার্শিয়াং, কালিম্পং বা দার্জিলিং? বা পিজ্জায় কামড় দিতে দিতে মন ভাসিয়ে দিতে পারতেন সাহারার মরুভূমি বা সুমেরু কুমেরুর হিমশীতল অ্যাডভেঞ্চারে? ট্র্যাভেলিস্তান ক্যাফের ডিজাইন এবং অঙ্গসজ্জা যেন ভ্রমণপিপাসু কফিপ্রেমিকদের সেটাই মনে করিয়ে দেয়। ছোট বড় গাছপালা এবং ড্রিম ক্যাচার দিয়ে সাজানো এই ক্যাফে যেন আমাদের ভেতরের ওয়ান্ডারলাস্টকে আবার জাগিয়ে তোলে।
কোথায় : শ্যামলী হাউসিং, উদয় শংকর সরণী রোড, গল্ফগ্রিন
মিউজিক থীম ক্যাফে : হার্ড রক ক্যাফে , মাড ক্যাফে
কলকাতা শহরের দুই প্রান্তে এই দুটি ভিন্ন স্বাদের ক্যাফে কিন্তু সংগীতপ্রেমীরা একডাকে চেনেন। একটি বিশ্ববিখ্যাত রেস্টুরেন্ট চেনের কলকাতা শাখা, পার্কস্ট্রিটের হার্ড রক ক্যাফে। যেখানে দেশ বিদেশের রক মিউজিকের আইকনদের সেলিব্রেট করা হয়, দেওয়ালে ঝোলানো থাকে তাদের নানা মেমরিবিলিয়া, যেমন তাদের ড্রেস, বা গিটার বা ড্রামকিট। চা কফি ছাড়াও এখানে পাবেন নানা রকম ড্রিংকস, কন্টিনেন্টাল খাবার এবং লাইভ মিউজিক পারফরমেন্স। অন্য ক্যাফেটি বাঙালির একমাত্র আপন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী দেবব্রত বিশ্বাসের বাড়ির এক ফ্লোরে অবস্থিত মাড ক্যাফেতে; বাংলা গানের স্বর্ণযুগের গান শুনতে শুনতে কফি খেতে চাইলে এখানে আসতে পারেন।
কোথায় : ১৭৪ ই, রাসবিহারী এভিনিউ, গরিয়াহাট (মাড ক্যাফে) ; ৫৭ পার্ক ম্যানশন (হার্ড রক ক্যাফে)
কফির সাথে কেনাকাটি : সিয়েনা স্টোর ও ক্যাফে, বাইলুম ক্যান্টিন
বাঙালি মানেই কিন্তু কেনাকাটা, সে হাতিবাগানের চৈত্র সেল হোক বা গড়িয়াহাটের পুজোর বাজার। আর যদি কেনাকাটা করতে করতে গুছিয়ে বসে খেয়ে নেওয়া যায় কড়া করে এক কাপ চা, সাথে ডিমের ডেভিল বা মাংসের চপ? হ্যাঁ, এটা সম্ভব হিন্দুস্তান পার্কের বাইলুম ক্যান্টিনে বা সিয়েনা ক্যাফেতে। বাইলুমে পাবেন হ্যান্ডমেড গয়নাগাটি, হ্যান্ডিক্রাফটস এবং ট্রাডিশনাল শাড়ি। সিয়েনাতে পাবেন খাদি প্রিন্টেড টেক্সটাইল, স্কার্ফ, শাড়ি, সেরামিক পটারীর জিনিসপত্র।
কোথায় : ৪৯/১ হিন্দুস্তান পার্ক (সিয়েনা) ; ৫৮/বি হিন্দুস্তান পার্ক রোড (বাইলুম)
প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধব বা পরিবার নিয়ে তাহলে ঘুরে আসুন শহর কলকাতার এই ক্যাফেগুলো থেকে। হয়তো আপনিও বলবেন সুমনের মতো "এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই"।