প্রকৃতির কোলে বসবাসের সময় আমাদের আশেপাশে ঘন সবুজ অরণ্য, তুষারাবৃত পর্বতশৃঙ্গ এবং মনোমুগ্ধকর পরিবেশের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে। উত্তর ভারতের এমন বেশ কিছু জায়গা আছে যেখানে তুষারপাত দেখার সাক্ষী থাকার জন্য সাধারণত পর্যটকেরা ভিড় জমান। পশ্চিমবঙ্গেও এরকম একটি পল্লী গ্রাম রয়েছে, যেখানে গেলে হয়তো আপনার তুষারাবৃত পর্বত আহরণের সাধ মিটবে অনেকেরই।
লাভা:
হিমালয় পর্বতের পাদদেশে প্রায় ৭ হাজার ফুট উচ্চতায় এবং কালিম্পং থেকে মোটামুটি ৩৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র লাভা। এটিই একমাত্র জায়গা, যেখানে খুব সহজে তুষারপাতের আনন্দ উপভোগ করা যায়।
এই স্থানের স্বর্গীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যটকদের কাছে অন্যান্য জনবহুল অঞ্চল থেকে অনেক বেশি আকর্ষণ করে।
এখানে অবস্থিত কাঞ্চনজঙ্ঘার অভূতপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের নয়নাভিরাম ঘটায়। শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা নয়, মাউন্ট সিনিওলচু, জেলেপ-লা পাস এবং রেছিলা পাস-এর তুষারাবৃত শৃঙ্গগুলোও ক্রমাগত হাতছানি দেয়।
লাভায় প্রবেশ করার জন্য প্রবেশপথ হিসেবে সিকিম এবং ভুটানের বর্ডারে অবস্থিত নেওরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ককে ব্যবহার করা হয়। প্রসঙ্গত, এখানে বিভিন্ন রকমের পাখি দেখতে পাওয়া যায় যা প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এক অনন্য উপহার। ট্রেকিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য অর্কিড এবং উপত্যকায় সজ্জিত লাভা তার মাধুর্য বহন করে চলেছে।
ভ্রমণ স্থানের করণীয় বিষয় বস্তু:
কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বত শৃঙ্গের চূড়ায় সূর্যোদয়ের অপরূপ সৌন্দর্য এবং ট্রেকিং-এর আনন্দ নিতে অবশ্যই আসতে হবে লাভায়।
এখানকার নেওরা জলাশয়ের পাশে অবস্থিত বিভিন্ন স্থাপত্য ভাস্কর্য সমন্বিত লাভা বৌদ্ধ মঠ পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু। রাচেল পাস, রিম্বিক, সামথর প্লাটিউ এবং রিশপ - এই জায়গাগুলো মূলত ট্রেকিং-এর জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও এই যাত্রা পথে আপনি গভীর অরণ্য এবং তুষারাবৃত পর্বতের দর্শন পাবেন।
নেওরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক এক অদ্ভুত জায়গা, যেখানে আপনি গভীর অরণ্যের মধ্যে এক প্রশস্ত পথ খুঁজে পেতে পারেন, যে পথে কোনওভাবেই সূর্যরশ্মি প্রবেশ করতে পারে না।
ভ্রমণের আদর্শ সময়:
মোটামুটিভাবে অক্টোবর থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় লাভা ঘুরতে যাওয়ার আদর্শ সময়। আর যদি তুষারপাতের অভিজ্ঞতা লাভ করতে চান তাহলে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির সময় যেতে পারেন।
থাকবার জায়গা:
লাভাতে থাকবার জায়গা খুব সীমিত। হোটেল অর্কিড এবং ড্রিমল্যান্ড এখানকার জনপ্রিয় হোটেলগুলোর মধ্যে অন্যতম, যেখানে দু'জনের জন্য প্রতি রাতের ভাড়া ৯০০ থেকে প্রায় ১৭০০ টাকা।
কীভাবে পৌঁছবেন:
আকাশপথে:- লাভার নিকটবর্তী বিমানবন্দর হল বাগডোগরা (১১৫ কিলোমিটার) এবং সিকিম (১১৩ কিলোমিটার); যা ভারতবর্ষের মুখ্য মহানগরীগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে।
রেলপথে:- নিকটস্থ রেল স্টেশন নিউ জলপাইগুড়ি (১০৫ কিলোমিটার) এবং শিলিগুড়ি (১০০ কিলোমিটার) স্টেশন থেকে সমস্ত ট্রেন নিয়মিতভাবে চলাচল করে, যেটি মহানগরীগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম পন্থা।
সড়কপথে:- ৩১ নম্বর জাতীয়সড়ক ধরে শিলিগুড়ি হয়ে খুব সহজে কালিম্পংয়ে পৌঁছনো যায়, যেখান থেকে লাভা মাত্র ৩৪ কিলোমিটার।