খাড়াপাথার:
২০১৭ সালের একটা লম্বা সপ্তাহান্তে ট্রেক করার জন্য পাড়ি দিয়েছিলাম খুপ্পার-এর শিখরে। পর্বতে ওঠার আগে শেষ শহর খুপ্পার থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গিরি গঙ্গা থেকে আমাদের এই অভিযান শুরু হয়। আর আশ্চর্যজনকভাবে আমি ঠিক যে রকম রাস্তা কল্পনা করেছিলাম সেইরকমই সড়ক পথ আমাদের সামনে ধরা দেয়। এছাড়াও আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এখানকার আবহাওয়া, যা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়।
যাত্রাপথের প্রথমদিন দিল্লি থেকে আসার সময় শুরু হয় প্রবল শিলাবৃষ্টি। হয়তো কেউ কেউ এটা অনুভব করতে পারবেন যে উচ্চতা বিশিষ্ট জায়গাগুলোতে এই সময় ঠিক কী ধরনের পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তা সত্বেও এই সমস্ত বাধাকে কাটিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়ি আমাদের “ডে-ট্রেক”-এ।
অবস্থান:
গ্রীষ্মকালে শিমলা থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টার পথ অতিক্রম করে পৌঁছনো যায় খাড়াপাথার। কিন্তু ২০১৭ সালের মার্চ মাসে এখানকার আবহাওয়া জানুয়ারি মাসের মতোই শীতল হলেও, মে মাস কিন্তু আপনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাবে। সিমলায় প্রবেশের আগে লাক্কাদ বাজার বাস স্ট্যান্ড থেকে খাড়াপাথার, রেচকং-পেও, কুলফি, রহরু প্রভৃতি জায়গায় যাওয়া যায়। ন্যায্যমূল্যের টিকিট এবং তার সঙ্গে স্থানীয় সংস্থার সুবন্দোবস্ত আপনার যাত্রাকে মনোরম করে তোলে। এমনিতে খাড়াপাথার পৌঁছতে চার-পাঁচ ঘণ্টা লাগলেও, প্রবল তুষারপাতের কারণে আমাদের বাস জুম স্পটে পৌঁছে সাময়িকভাবে বিকল হয়ে যায় | যার কারণে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছতে প্রায় সাত ঘণ্টা সময় লাগে।
থাকবার জায়গা:
থাকবার জন্য মোটামুটিভাবে তিনটি জায়গা আছে, যেখানে থেকে আপনি অনায়াসে খাড়াপাথার ঘুরে দেখতে পারবেন।
প্রথমটি হল, গিরি গঙ্গা রিসর্ট। বাস থেকে নেমে প্রায় হাফ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জায়গাটি। জায়গাটি খুব নির্জন এবং এখানে কোনও ফোনের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না, তাই এখানে আগে থেকে আপনার পছন্দ মতো ঘর বুক করতে পারবেন না। তবে এখানকার কেয়ারটেকার এই সমস্ত জায়গা বেশ ভাল করে রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন।
দ্বিতীয়টি হল, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট গেস্ট হাউস, যেটি প্রায় ছয় মাস আগে থেকে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে এবং তৃতীয় অর্থাৎ সর্বশেষ জায়গাটি হল, পি.ডব্লিউ.ডি গেস্ট হাউস, যেখানে আপনি পি.ডব্লিউ.ডি অফিস জুব্বাল-এ ফোন করে আগে থেকেই আপনার পছন্দ মতো ঘর নির্বাচন করতে পারেন (বিপিন শর্মা কে আপনি ফোন করতে পারেন, যার ফোন নম্বর হল ০১৭৮১২৫২০০৪; যদিও তিনি খুব বেশি সাহায্য হয়তো করতে পারবেন না)।
প্রবল তুষারপাতের মধ্যেই আমরা খাড়াপাথার এসে পৌঁছই। বহু কষ্টের পর যখন আমাদের রিসোর্ট খুঁজে পাই তখন দুর্ভাগ্যবশত ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট গেস্টহাউসটি বন্ধ ছিল। তারপর আমরা আমাদের চেনাশোনা একজন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করায় তিনি পি.ডব্লিউ.ডি গেস্ট হাউসে তার নিজের দায়িত্বে পুরো ট্রেকদলের জন্য জায়গা বরাদ্দ করে দেন। এছাড়াও তিনি আমাদের সেই শীতের রাত্রিটিতে একটু উষ্ণতা পাওয়ার জন্য স্লিপিং ব্যাগেরও ব্যবস্থা করে দেন। বলাই বাহুল্য যে, সবসময় সেইসব মানুষকে মনে রাখা উচিত যারা দুঃসময়ে আপনার পাশে এসে সাহায্য করেন।
গন্তব্যস্থলে করণীয় বিষয়বস্তু:
খাড়াপাথারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অভূতপূর্ব। এখানে একটি ছোট্ট পর্বত শৃঙ্গ রয়েছে যার নাম খুপ্পার শৃঙ্গ; যেখানে আপনি অনায়াসে ট্রেকিং করতে পারেন। এছাড়া আপনি রহরু নামে পাহাড়ি শহরটিতে বাসে করে ভ্রমণ করে আসতে পারেন। এরপর সেখান থেকে আপনি বাসে করে দেরাদুন পৌঁছে যেতে পারবেন।
এখানকার কিছু অসামান্য ছবি চিরতরে আমাদের শীতকালীন নৈসর্গিক স্থানের কথা মনে করিয়ে দেয়।
এখনও পর্যন্ত এই রোমাঞ্চকর ভ্রমণটি আমার কাছে সব থেকে স্মরণীয় হয়ে আছে; আর যেটা সবথেকে বেশি মনে পরে তা হল এখানকার প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে চলা তুষারপাত। প্রতিটি তুষারকণার নিজস্ব ধরণ আপনাকে সর্বদাই এই অসামান্য মুহূর্তগুলোর কথা মনে করিয়ে দেবে, যা হয়ত আপনি জীবন থেকে কোনদিনও ভুলতে পারবেন না।
খাড়াপাথারের এই অভূতপূর্ব সৌন্দর্য এবং এখানকার সবকিছু উপভোগ করার পর আমি একটা কথাই অনুভব করেছিলাম, ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য হিমাচলপ্রদেশ সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গা।