ভূত আদতে কল্পনা না কি বাস্তব জানতে পশ্চিমবঙ্গের এই সাতটি ভৌতিক স্থান একবার ঘুরে আসতে পারেন...

Tripoto
Photo of ভূত আদতে কল্পনা না কি বাস্তব জানতে পশ্চিমবঙ্গের এই সাতটি ভৌতিক স্থান একবার ঘুরে আসতে পারেন... 1/8 by Deya Das

আমাদের সকলের মধ্যে ভূত প্রসঙ্গে জানার একটা কৌতূহল থাকেই । আক্ষরিক অর্থে ভূত কথার অর্থ হলো - অতীত ।আর এই ভূতকে নিয়ে নানান মতভেদ রয়েছে । কেউ কেউ মনে করেন ভূত বলে কিছু নেই; আবার কিছু মানুষের বিশ্বাস আত্মা অবিনশ্বর, তাই ভূত থাকুক বা থাকুক আত্মার অস্তিত্ব আছে । কিন্তু প্রাচীন মানুষরা যেমন ধরুন আমাদের দাদু ঠাকুমা বা তাঁদের পূর্ব -পুরুষরা ভূতের অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিলেন । এই প্রসঙ্গে উদাহরণস্বরূপ বলি, আমার এক দিদির ঠাকুমা শাশুড়ি ছিলেন, মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়ে ছিল ১০৫ বছর । মৃত্যুর পূর্বে তিনি প্রায় সবসময়ই একজন কালো শাড়ি পরিহিতা মহিলাকে দেখতেন তাঁর মাথার কাছে বসে থাকতে, শুধু তাই নয় সমস্ত বাড়ি জুড়েই কিছু না কিছু অদ্ভুত কীর্তিকলাপ যেমন হঠাৎ করে কোনও কিছু পড়ে ভেঙ্গে যাওয়া বা ঘরের মধ্যে কারোর অবাধ যাতায়াত বাড়ির সমস্ত সদস্যই অনুভব করতে পারতেন ।

ভারতবর্ষে এমনকি কলকাতাতেও এমন অনেক স্থান রয়েছে যেখানে প্রায়ই কিছু অদ্ভুত কীর্তিকলাপ অনুভব করা যায় । তবে আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি পশ্চিমবঙ্গের কিছু পরিচিত এবং অপরিচিত ভৌতিক স্থানের সন্ধান ।

১. কার্সিয়াং এর ডো হিল -

Photo of ভূত আদতে কল্পনা না কি বাস্তব জানতে পশ্চিমবঙ্গের এই সাতটি ভৌতিক স্থান একবার ঘুরে আসতে পারেন... 2/8 by Deya Das
গা ছমছমে ভৌতিক পরিবেশ (ছবি সংগৃহীত)

দার্জিলিং থেকে ৩০কিমি অদূরে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত ভৌতিক স্থান ডো হিল । পাহাড়ের পাদদেশে বড় বড় পাইন এবং অর্কিডের জঙ্গল ঘেরা অঞ্চলটি যে কোনও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষকে মুগ্ধ করবেই । তবে এই ডো হিল নিয়ে অনেক ভৌতিক কাহিনি শোনা যায় । শোনা যায় এক কাঠুরিয়া এই জঙ্গলে কাঠ কাটতে গিয়ে দেখেন গলা কাটা এক শিশু হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করেই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।

এছাড়াও স্থানীয় মানুষজনদের মতে, এই জঙ্গলে প্রায়ই ছাই রঙা কাপড় পরিহিতা এক মহিলাকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় । এই জঙ্গল এতটাই অভিশপ্ত যে পর্যটকরা এখানে এলে, হয় তাঁরা তাঁদের স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন অথবা আত্মহত্যা করেন । এখানকার শতাব্দী প্রাচীন স্কুল ভিক্টোরিয়া বয়েস হাই স্কুলটিতেও অশরীরী কার্যকলাপের প্রমাণ মিলেছে । এমনকি ডো হিল রোড এবং ফরেস্ট অফিসের রাস্তাটি ডেথ রোড হিসেবে পরিচিত ।

২.কালিম্পঙ-এর মর্গ্যান হাউস -

Photo of ভূত আদতে কল্পনা না কি বাস্তব জানতে পশ্চিমবঙ্গের এই সাতটি ভৌতিক স্থান একবার ঘুরে আসতে পারেন... 3/8 by Deya Das
মর্গ্যান হাউসের গা ছমছমে পরিবেশ (ছবি সংগৃহীত)

ভারতে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের এক জ্বলন্ত নিদর্শন হল এই মর্গ্যান হাউস । এই বিল্ডিংটি ১৯৩০ সালে নির্মিত এবং এই হাউস নির্মাণের মধ্যে রয়েছে চিরাচরিত ব্রিটিশ স্থাপত্য এর পরশ । জুট ব্যারণ জর্জ মর্গ্যান নীল চাষের মালিক এক মহিলাকে বিবাহের জন্য এই বাড়িটি নির্মাণ করেন । প্রধানত গ্রীষ্মের সময় এই কালিম্পঙ শহরের মনোরম পরিবেশে বসবাস করার জন্য এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার একটা সুন্দর দৃশ্যকে উপলব্ধি করার জন্য মর্গ্যান এই বাড়িটি তৈরি করেন । বেশ কিছু দিন সুখে সংসার করার পর হঠাৎ করেই মর্গ্যানের স্ত্রী আত্মহত্যা করেন । এই আত্মহত্যার প্রধান কারণ হিসেবে উঠে আসে তাদের দাম্পত্য কলহ। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস এই বাড়িতে আজও মর্গ্যানের স্ত্রীর অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায় ।

৩. পুরুলিয়ার বেগুনকোদোর রেলস্টেশন -

Photo of ভূত আদতে কল্পনা না কি বাস্তব জানতে পশ্চিমবঙ্গের এই সাতটি ভৌতিক স্থান একবার ঘুরে আসতে পারেন... 4/8 by Deya Das
স্টেশনের জনশূন্য পরিবেশ (ছবি সংগৃহীত)

পুরুলিয়া জেলায় অবস্থিত বেগুনকোদোর রেল স্টেশনটি ভারতীয় রেল স্টেশনগুলির মধ্যে একটি ভৌতিক রেল স্টেশন হিসেবে পরিচিত । প্রায় অর্ধ শতক ধরে এই স্টেশনের ভৌতিক কার্যকলাপ চলে আসছে। কথিত আছে, একদিন এক স্টেশন মাস্টার রেল লাইনের উপর দিয়ে হঠাৎ এক সাদা শাড়ি পরিহিতা মহিলাকে হাঁটতে দেখেন এবং এই ঘটনা দেখে স্টেশন মাস্টার তৎক্ষণাৎ মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৬৭ সালের এই ঘটনার পরবর্তী সময় থেকে এই স্টেশনটি একেবারেই যাত্রীহীন হয়ে পরে। এই ঘটনার পর প্রায় ৪২ বছর এই স্টেশনটি বন্ধ ছিল ।

সম্প্রতি ২০০৯ সালের রেলমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় পুনরায় এই স্টেশনটি চালু করেন, তবে এখনও বিকাল ৫ টার পর এই স্টেশন জনশূন্য হয়ে যায় ।

৪. হলদিয়ার ডুব পুকুর -

Photo of ভূত আদতে কল্পনা না কি বাস্তব জানতে পশ্চিমবঙ্গের এই সাতটি ভৌতিক স্থান একবার ঘুরে আসতে পারেন... 5/8 by Deya Das
হলদিয়ার ডুব পুকুরেও রয়েছে গা ছমছমে পরিবেশ (ছবি সংগৃহীত)

১৮শ শতকে মহিষাদল রাজবাড়ির এক ধাত্রী ডাইনিদের দ্বারা আক্রান্ত হন । একদিন রানির সন্তান প্রসবের সময় তার শিশুকে ডাইনিরা গ্রাস করে নেয় এবং ধাত্রীকে বেঁধে টেনে নিয়ে যায় মহিষাদলের অদূরে একটি গভীর জঙ্গলে । তারপর এক গভীর রাতে হলদি নদীর তীরে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। শোনা যায়, এই ঘটনার পর থেকে প্রত্যেক ২৫ বছর পর পর ভূত চতুর্দশীর রাতে ডুব পুকুর থেকে এক নারীর কণ্ঠস্বর ভেসে আসে। আর এই আওয়াজ শুনে যে কজন মানুষ এই পুকুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন, দিওয়ালির দিন সকালে এই পুকুরে তাদের প্রত্যেকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে । স্বাভাবিকভাবেই, সাধারণ মানুষের মনে আজও ডুব পুকুরের শঙ্কা রয়ে গিয়েছে ।

৫. আসানসোলের বেনাগ্রাম -

Photo of ভূত আদতে কল্পনা না কি বাস্তব জানতে পশ্চিমবঙ্গের এই সাতটি ভৌতিক স্থান একবার ঘুরে আসতে পারেন... 6/8 by Deya Das
ছবি সংগৃহীত

আপনি বেনাগ্রামে গেলে দেখতে পাবেন বহু পরিত্যক্ত বাড়ি, চাষের খেত এমনকি কারখানাও রয়েছে, তবুও এই গ্রামটি এক্কেবারে জনশূন্য। কারণ এই সম্পূর্ণ গ্রামটি ভৌতিক গ্রাম হিসেবে পরিচিত । স্থানীয় মানুষদের মতে একসময় এই গ্রামটি দুষ্কৃতীদের আখড়া ছিল। এই দুষ্কৃতীরা গ্রামের সাধারণ মানুষদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে কাছের রেল লাইনে কবর দিয়ে দিত । এই ভাবে দুষ্কৃতীরা গোটা গ্রামে হত্যা লীলা চালায় । এই ঘটনার পর থেকেই রাতে এখান দিয়ে যাতায়াত করলে আজও অদ্ভুত কিছু শব্দ এবং আওয়াজ ভেসে যায় ।

৬. মুর্শিদাবাদের জাফরগঞ্জ সিমেট্রি

Photo of ভূত আদতে কল্পনা না কি বাস্তব জানতে পশ্চিমবঙ্গের এই সাতটি ভৌতিক স্থান একবার ঘুরে আসতে পারেন... 7/8 by Deya Das
এইখানে রয়েছে রহস্যঘেরা পরিবেশ (ছবি সংগৃহীত)

ঐতিহাসিক স্থান মুর্শিদাবাদের ইতিহাস চৰ্চা করলে জানা যায় এই সিমেট্রি একসময় 'কিচেন গার্ডেন' হিসেবে পরিচিত ছিল । পরবর্তী কালে বাংলার বিখ্যাত নবাবদের এখানেই দেহস্থ করা হয় । এই কবরস্থানটি বর্তমানে মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত পর্যটনস্থান গুলির মধ্যে অন্যতম হলেও রাতে এই স্থানে ভ্রমণ করলে আপনিও শিহরিত হবেন । স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, মধ্যরাতে নবাব নাজিম এর মৃত পত্নী আজও তাঁর ভালবাসার সন্ধানে ঘুরে বেড়ান ।

৭. খড়দহের পরিত্যক্ত বাড়ি

Photo of ভূত আদতে কল্পনা না কি বাস্তব জানতে পশ্চিমবঙ্গের এই সাতটি ভৌতিক স্থান একবার ঘুরে আসতে পারেন... 8/8 by Deya Das
ছবি সংগৃহীত

খড়দহে হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত ২০০ বছর প্রাচীন এই বাড়িটি একসময় ব্রিটিশ ফায়ার ব্রিগেডের অফিস ছিল । স্থানীয় মানুষরা বেশ কিছু বছর ধরে কিছু অদ্ভুত ক্রিয়াকলাপ যেমন হঠাৎ করে ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাওয়া কিংবা কিছু পড়ে যাওয়া এমনকি কান্নার আওয়াজ ও মাঝে মধ্যে শুনতে পান। তাই রাত্রিবেলা কেউই সচরাচর এই এলাকার আশেপাশেও যেতে চান না।

কথায় আছে 'বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর ', কিছু কিছু রহস্যের সত্যিই কিনারা করা যায় না। উপরিউক্ত স্থান গুলির অদ্ভুত কার্যকলাপ তারই প্রমান । ভূত বলে সত্যিই কিছু আছে কিনা এবার আপনারাই স্থির করুন । আর হ্যাঁ, আপনারাও যদি কোনো অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী থাকেন আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে কিন্তু একদম ভুলবেন না।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।

Further Reads