মন্দিরের গায়ে লেখা রয়েছে চাইনিজ কালী টেম্পেল, অর্থাৎ চৈনিক কালীমন্দির। না, কল্পনা নয়, সত্যি সত্যি যদি এই মন্দির স্বচক্ষে দেখতে চান, তাহলে চলে আসতে হবে সায়েন্স সিটির কাছে, কলকাতার ট্যাংরা অঞ্চলে। কলকাতার হাক্কা চাইনিজ সম্প্রদায়ের একটি অংশের বসবাস গড়ে উঠেছিল ট্যাংরা অঞ্চলকে ঘিরেই। সেখানেই পাবেন হিন্দু ধর্ম, কলকাতার সংস্কৃতি এবং চৈনিক বিশ্বাসের এই অপূর্ব মেলবন্ধন।
কীভাবে গড়ে উঠেছিল এই মন্দির
আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর পূর্বে গড়ে উঠেছিল এই মন্দিরটি। স্থানীয় প্রবীণদের কাছ থেকে জানা যায় এই মন্দির স্থাপনের রহস্য। চৈনিক সমাজের প্রায় সকলেই বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান হলেও, স্থানীয় কতিপয় হিন্দুরা ছিলেন মা কালীর সেবক। একটি নির্দিষ্ট স্থানে কোনও এক প্রাচীন গাছের গোড়ায় স্থাপিত হয়েছিল সিঁদুর মাখানো কালো পাথররূপী মা কালীর। তবে চৈনিক সমাজে মা কালীর মহিমা প্রকাশ পায় আরও কিছুকাল পরে।
চীনা সম্প্রদায়ের এক শিশু হটাৎ করেই হয়ে পড়ে প্রচন্ড অসুস্থ। বহু ডাক্তার দেখানোর পরেও তাকে সুস্থ করে তোলা যায়না। সেই শিশুর হাল ছেড়ে দেওয়া বাবা মা তাকে শুইয়ে দেয় সেই গাছতলায় এবং পরবর্তী বেশ কিছু দিন রাত জুড়ে চলে তাদের প্রার্থনা। আশ্চর্যজনক ভাবে কিছুদিনের মধ্যে ছেলেটি আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে ওঠে এবং জীবন ফিরে পায়।
এই অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী এখানকার চৈনিক সমাজ মনে প্রানে মেনে নেয় মা কালীর মহিমা এবং স্থাপন করেন পাকা মন্দির। এখানে অবস্থিত সমস্ত চিনে পরিবারের থেকে চাঁদা তুলে মন্দির গড়ে তোলা হয়। বর্তমানের দু তলা উঁচু এই মন্দিরে এখনো দেখা পাওয়া যাবে পুরনো সেই আদি প্রস্তর বিগ্রহগুলির। সাথে রয়েছে মা কালীর মূর্তিও। জাগ্রত ঠাকুর হিসেবে রোজ পূজিত হন চাইনিজ কালীবাড়ির নতুন রূপের মা কালী।
কলকাতার চাইনিজ কালীমন্দির : কেমন সেখানের আচার বিচার
দৈনিক পূজার ক্ষেত্রে সাধারণত হিন্দু আচার ও রীতি মেনেই পূজা হয় এখানে, তবে সাথে সাথে দেখা যায় ভক্তিভরে প্রার্থনারত চাইনিজ ক্যালকাটানদের। যে কোনও কালীপূজা, বা দেওয়ালীর সময়ে হিন্দু, চৈনিক নির্বিশেষে সবাই মিলে অংশগ্রহণ করেন পুষ্পাঞ্জলি আর প্রসাদ বিতরণে।
তবে এখানেই আস্তে আস্তে প্রবেশ করেছে চৈনিক সংস্কৃতির কিছু বিশেষ দিক। যেমন এখানে পূজার ভোগ আর প্রসাদ হিসাবে পাবেন নুডলস বা চপসুই, চিনে স্টাইলে রাঁধা রাইস আর ভেজিটেবল ডিশের সমাহার। এছাড়াও পূজার সময় ব্যবহার করা হয় চৈনিক ধুপকাঠি, করা হয় চিনে পদ্ধতি মেনে বিশেষ ভাবে ঠাকুর-প্রণাম। সবমিলিয়ে হিন্দু ধর্ম এবং চৈনিক ভাবধারার এক অভূতপূর্ব মিলনক্ষেত্র ট্যাংরার এই কালীমন্দির।
সমন্বয়ের প্রতীক : কলকাতার চাইনিজ কালীবাড়ি
সমন্বয় এবং সম্প্রীতির চাক্ষুষ নিদর্শন হিসেবেই এই মন্দিরটিকে নিজেদের মনে স্থান দিয়েছেন ট্যাংরার বাসিন্দারা, যেখানে আসল হয়ে উঠেছে ভক্তি, শ্রদ্ধা এবং মানবিকতার রীতি নীতি গুলি তাই আগামী কালীপুজোয়, চলে আসুন না ট্যাংরার অলি গলি পেরিয়ে - ক জন আর বলতে পারে যে কালীপুজোয় ভোগে ছিল নুডলস আর চপসুই?