পশ্চিমবঙ্গে দোল পূর্ণিমার ইতিহাস, রঙের উৎসবে মেতে উঠুন আপনিও... 

Tripoto
Photo of পশ্চিমবঙ্গে দোল পূর্ণিমার ইতিহাস, রঙের উৎসবে মেতে উঠুন আপনিও...  1/3 by Aninda De
ছবি সংগৃহীত

বাঙালি জীবনে বসন্তের আগমন মানেই কিন্তু নিজেকে নতুন রঙে রাঙিয়ে নেওয়ার পালা। ঠিক গ্রীষ্মের আগেই শুরু হয়ে যাবে দোল পূর্ণিমার আয়োজন, আবির খেলার উত্তেজনা। তবে সারা ভারতবর্ষে যা পরিচিত হোলি নামে, পশ্চিমবঙ্গে কেন তা দোল পূর্ণিমা হিসেবে আয়োজিত হয়? কেনই বা এসময়ে বাড়িতে বাড়িতে শুরু হয় সত্যনারায়ণ পূজার আয়োজন? আসুন, দেখেনি পশ্চিমবঙ্গে দোল পূর্ণিমার ইতিহাস!

Photo of পশ্চিমবঙ্গে দোল পূর্ণিমার ইতিহাস, রঙের উৎসবে মেতে উঠুন আপনিও...  2/3 by Aninda De
রঙের আয়োজন (ছবি সংগৃহীত)

আমাদের পশ্চিমবঙ্গে দোল উৎসব পালিত হয় পূর্ণিমার পুণ্যতিথিতে। কথিত আছে, এই পূর্ণিমা লগ্নেই জন্ম হয় চৈতন্য মহাপ্রভুর। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে দোল পূর্ণিমার আয়োজন একটি অন্যতম কারণ। কিন্তু মহাপ্রভুর সঙ্গে দোল পূর্ণিমার সম্পর্ক আসলে কোথায়? আসলে নবদ্বীপের বৈষ্ণব ধর্মের এই প্রবক্তার রাধা কৃষ্ণের প্রতি প্রেম ধর্মীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছিল আত্মিক পর্যায়ে। শ্রী হরির প্রতি তাঁর প্রেম ছিল জগৎবিখ্যাত। আর এই শ্রী হরি ছিলেন কৃষ্ণের এক অবতার।

কৃষ্ণ ব্যতীত কিন্তু আবার হোলি অসম্পূর্ণ। দ্বারকা, শ্রীকৃষ্ণের অন্যতম লীলাভূমিতে কিন্তু হোলি পালন করা হয় প্রায় ১৬ দিন ধরে। বঙ্গদেশে কিন্তু প্রথমদিন দোল পূর্ণিমা, আর তারপরের দিনেই অনুষ্ঠিত হয় হোলি। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, রং খেলার এই উৎসবের প্রচলন হয়েছিল স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের হাত ধরেই। শ্রীরাধা এবং তাঁর গোপিনীদের সঙ্গে রং খেলা শুরু করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ এই তিথিতেই, তাঁর ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবেই। ভক্তকূলেও তাই এই রং খেলার প্রচলন প্রচুর জনপ্রিয়তা পায় এবং হোলি হয়ে ওঠে শ্রীকৃষ্ণের আধারে রং ও আবির খেলার দিন। বাড়িতে বাড়িতে দোল পূর্ণিমায় সত্যনারায়ণ পূজার আয়োজন করা হয় পরিবারের সকলের মঙ্গল কামনায়। নারায়ণ, শ্রীকৃষ্ণের আর এক অবতারের পূজাতে উৎসর্গ করা হয় আবির। বিগ্রহকে শ্রদ্ধাভরে রং মাখিয়ে তারপর দু'দিন ধরে চলে রংকেলির এই বসন্ত উৎসব।

Photo of পশ্চিমবঙ্গে দোল পূর্ণিমার ইতিহাস, রঙের উৎসবে মেতে উঠুন আপনিও...  3/3 by Aninda De
সকলে রঙে মাতোয়ারা (ছবি সংগৃহীত)

প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে তাহলে দোল পূর্ণিমা বা দোল যাত্রার নামকরণ নিয়ে। দোল মানে কিন্তু এখানে বলা হচ্ছে দোলনার কথা, যে দোলনায় বসা রাধা কৃষ্ণের ছবি দেখতে আমরা অভ্যস্ত। রাধা এবং কৃষ্ণের ছবি বা বিগ্রহ পালকিতে করে বা ছোট ছোট দোলনায় চড়িয়ে, ফুল মালা সাজিয়ে ভক্তরা ভক্তি ভরে সেই নিয়ে এই পূর্ণিমার লগ্নে রাস্তায় বেরিয়ে পরেন। রথ যাত্রার মতো, দোলনায় চেপে যাত্রা করেন রাধা ও কৃষ্ণ। ভক্তিগীতির সঙ্গে সঙ্গে ভক্তদের দোলনায় দুলিয়ে দুলিয়ে নিয়ে এগোন রাধা কৃষ্ণের জুড়িকে। নাচ গানের সঙ্গে সঙ্গে নানা রঙের আবিরে রেঙে ওঠে চারপাশ। পথচলতি সকল ভক্ত এবং দর্শক হয়ে ওঠেন দোলপূর্ণিমায় দোলযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ।

কালক্রমে দোল পূর্ণিমা, হোলি, বসন্তউৎসব একসঙ্গে মিলে মিশে হয়ে উঠেছে বারো মাসের তেরো পার্বণের আর একটি পার্বণে। ধর্মীয় বা তাত্ত্বিক তাৎপর্যের বাইরে গিয়ে এই দুইদিন ব্যাপী উৎসব হয়ে উঠেছে মানুষে মানুষে মিলনের, প্রেমের উৎসব। ঠিক যেমন ছিল রাধা কৃষ্ণের হোলিখেলার উদ্দেশ্য, যেমন ছিল শ্রীহরির বন্দনায় বিভোর চৈতন্য মহাপ্রভুর স্বপ্ন।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।