দোল পূর্ণিমা হোক বা হোলি, বসন্তের এই রংমিলান্তি উৎসব পূর্ণতা পায় সবার আনন্দ, উল্লাস আর উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে। আর আনন্দ উত্তেজনার পারদে আরেকটু আগুন লাগাতে তুলনা নেই ভাঙের শরবতের, যা আরও জনপ্রিয় ঠান্ডাই নামে।
ঠান্ডাই
ঠান্ডাই বা ভাঙের শরবত তৈরি হয় মূলত দুধ দিয়ে, মেশানো হয় কাজু, আখরোট জাতীয় ড্রাই ফ্রুটস, মৌরী, এলাচ, আর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে। মাঝে মাঝে দেওয়া হয় আদা গুঁড়ো বা গোলমরিচ বাটাও। আর সঙ্গে দেওয়া হয় এই শরবতের নায়ক, ভাঙের গুলি। ভাঙের গুলি আসলে ক্যানাবিস গাছের পাতা এবং কুঁড়ির মণ্ড। অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে দুধের সঙ্গে এই ভাঙের গুলি মিশিয়ে ঠান্ডাই তৈরি করা হয়। ঠান্ডাইয়ের বিশেষত্ব হল এটি যেমন সুস্বাদু এবং সুগন্ধী, তেমনি ঘন এবং পুষ্টিকর।
ঠান্ডাইয়ের প্রভাব
যেহেতু ঠান্ডাই শরবতে ভাঙের গুলি ব্যবহার হয়, তাই শরবত পানের কিছুক্ষণ পর নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়া স্বাভাবিক। নিরাপদে, দায়িত্ব সহকারে ঠান্ডাই পান করুন। সাধারণত শরীরে ভাঙের প্রভাব শুরু হয় সেবনের ঘণ্টাখানেক পরে। তাই ধীরে সুস্থে অল্প অল্প করে পান করুন। অত্যধিক ঠান্ডাই পান না করাই শ্রেয়। নিরাপদ থাকার আরেকটি সহজ উপায় হল, বাড়িতে বসে ঠান্ডাই খাওয়া অথবা বাড়ির বাইরে ঠান্ডাই খেলে, খাওয়ার পর তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসা।
ঠান্ডাইয়ের একাল সেকাল
একসময় কলকাতায় তথা বাংলায় দোল পূর্ণিমা বা হোলির উদযাপন হত বহু সমারোহে। উত্তর ও মধ্য কলকাতার গলিতে গলিতে বসত ঠান্ডাই শরবতের দোকান। খোয়া, ফলের টুকরো, সব মিশিয়ে তৈরি হত ঘন ঠান্ডাই। সঙ্গে থাকতো নানারকম দোল স্পেশাল মিষ্টি - যেমন ঘি পোয়া - চালের গুঁড়ো আর আখের গুড় দিয়ে তৈরি খাঁটি ঘিয়ে ভাজা মণ্ড। গৃহস্থ বাড়িতে ছিল চিনির মুড়কি, ফুটকড়াই বা চিনির মঠের ব্যবস্থা। কাল ক্রমে সেই ব্যাপ্তি এবং উন্মাদনা হ্রাস পেলেও, আজও বাঙালি সময় পেলেই এই সময় বেড়িয়ে পরে ঠান্ডাই আর দোলকে উপলক্ষ্য করে তৈরি স্পেশাল মিষ্টির খোঁজে। আসুন, দেখেনি কলকাতার কোথায় কোথায় আপনি পাবেন খাঁটি ভাল ঠান্ডাইয়ের খোঁজ।
শিব আশ্রম
হেদুয়া থেকে হাতিবাগানের দিকে এগিয়ে গেলে বাঁ-দিকে ক্ষুদিরাম কলেজের উল্টোদিকে দেখতে পাবেন উত্তর কলকাতার এই পুরনো দোকানটি। বর্তমানে সংস্কারের পরে দোকানটি হয়ে উঠেছে আরও আধুনিক। ঠান্ডাই ছাড়াও পাওয়া যায় লস্যি এবং বিভিন্ন ফ্লেভারের শরবত। আছে বসে খাওয়ার ব্যবস্থাও।
বড়বাজার
বড়বাজারে হোলির সময় দেখা যায় ঠান্ডাই আর ভাঙের গুলির রমরমা। এখানকার শরবত এবং অন্যান্য পানীয়র গুণগতমান বেশ ভাল এবং পাওয়াও যায় বেশ কম দামে। জৈন মন্দিরের উল্টোদিকের ভাঙের দোকানে, লোকমুখে প্রচলিত 'ল্যাংড়া ভাঙের দোকান' নামে, গিয়ে দেখতে পারেন। ঠান্ডাইয়ের সঙ্গে লস্যি মিশিয়ে নানান রকম সুস্বাদু পানীয় পাওয়া যায় এখানে।
বালিগঞ্জ
সাউথ কলকাতায় ঠান্ডাইয়ের সন্ধান চাইলে চলে যেতে পারেন বালিগঞ্জ হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়াম পেট্রোল পাম্পের কাছে। রাস্তার মোড়েই এই সময় বিক্রি হয় ঠান্ডাই, ভাঙের ককটেল এবং ভাঙেরগুলিও পাউডার। এই এলাকায় আছে নানান মিষ্টির দোকান, এক গ্লাস ঠান্ডা পানীয়র পরে গরম গরম রসগোল্লার মতো জিনিস কলকাতা ছাড়া আর কোথাও পাবেন না।
ভূতনাথ মন্দির, নিমতলা ঘাট
ঠান্ডাইয়ের জন্যে নিমতলা ঘাটের কাছে ভূতনাথ মন্দির সংলগ্ন নানান লস্যি ও ভাঙের দোকান বরাবর জনপ্রিয়। এখানে আপনি পাবেন ভাঙের লাড্ডু। ক্ষিদে পেলে চেখে দেখতে পারেন লিটটি চোখা - ঠান্ডাইয়ের পরে পেটপুজো করতে এই খাবারের জুড়ি মেলা ভার।
এছাড়াও কলকাতার যে সকল জায়গাতে ভাল ঠান্ডাই পেতে পারেন :
রাললি সিং - গোলপার্কের আমিনিয়ার পাশের এই দোকানটি কলেজ পড়ুয়াদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
ভিখারামের কাছে, সল্টলেক সেক্টর ১ - হোলির সময়ে সল্টলেকে ঠান্ডাই পেতে চলে আসুন সেক্টর ওয়ানের ভিখারামের কাছে। এই সময় ঠেলাগাড়ি করে ভাঙ বিক্রি করেন এখানে বহুদিনের এক বিক্রেতা। পাবেন ভাঙেরগুলি, লস্যি, ঠান্ডাই আর ভাঙ দেওয়া মিষ্টি।
শিব শক্তি ভাঙ শপ - উত্তর কলকাতার আরেক প্রাচীন দোকান, যার ঠান্ডাইয়ের খ্যাতি প্রতি বছর বাড়তে থাকে।
দোল পূর্ণিমায় মজা করুন দায়িত্বশীল ভাবে। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালাবেন না বা রাস্তায় বেরোবেন না। নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন এবং দোল পূর্ণিমার উন্মাদনায় মেতে উঠুন নিরাপদে।