কর্পোরেট অফিসের চার দেওয়ালের মধ্যে থেকেও ৫০ বছর বয়সে এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন...

Tripoto
Photo of কর্পোরেট অফিসের চার দেওয়ালের মধ্যে থেকেও ৫০ বছর বয়সে এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন... 1/2 by Aninda De
এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখেছেন তিনিও (ছবি সংগৃহীত)

এভারেস্ট জয় কিন্তু মুখের কথা নয়। দুরূহ এই চ্যালেঞ্জ আরও সমীহ আদায় করে নেয়, যদি এভারেস্ট জয়ী হন পঞ্চাশোর্ধ্ব। চমকে উঠলেন? হ্যাঁ, এই ঘটনাই সত্যি করে দেখিয়েছেন কর্পোরেট হটশট আদিত্য গুপ্ত। পেশার কারণে কর্পোরেট বোর্ডরুমের চার দেওয়ালে বন্ধ থেকেও কীভাবে শুধুমাত্র নেশার তাড়নায় এভারেস্ট জয় করা যায়, সেই সম্পর্কেই তিনি বক্তব্য রাখলেন আই.আই.টি গুয়াহাটির পড়ুয়াদের সামনে।

আদিত্য শারদা এক্সপোর্টস, রাগ রিপাবলিক, ফার্নিচার রিপাবলিক নামক বিভিন্ন সফল ব্র্যান্ডের কর্ণধার, কিন্তু তাঁর সঙ্গে সঙ্গে নির্ভীক পর্যটকও বটে। এভারেস্ট জয়ের পর তিনি লিখছেন "সেভেন লেসনস ফ্রম এভারেস্ট" নামক একটি বই, যাতে থাকবে শুধু এভারেস্ট নয়, জীবনে সাফল্য অর্জনের জন্যেও অনেক সুপরামর্শ।

আদিত্যর তাঁর বিজনেস লাইফ এবং মাউন্টেনিয়ারিং লাইফের মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন অনেক সাদৃশ্য। এমন অনেক বিজনেস আইডিয়া বা প্রজেক্ট চূড়ান্ত সফল হয়, যেগুলো খাতায় কলমে মুখ থুবড়ে পড়ার কথা। আবার এমন এমন ব্যবসায়ী বা ব্যবসা অসফল হয়, যাদের কাছে কিন্তু আছে সবরকম সুযোগ সুবিধা। এভারেস্ট আরোহণের সময়েও কিন্তু বেশ অনেকটাই-এর পুনরাবৃত্তি দেখা যায়। ৪৫ দিনের এভারেস্ট আরোহণের শুরুতে প্রস্তুতি ভাল হলেই যে পর্বতশৃঙ্গ জয় করা যাবে, তার কোনও মানে নেই। আবার শুরুটা নড়বড়ে হলেই যে সাফল্য অধরা থাকবে, তাও সত্যি নয়। তাই ব্যবসা হোক বা পর্বতারোহণ, দেখে নি আদিত্যর মতে কী কী করলে আমরা সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারব নিশ্চিতরূপে।

Photo of কর্পোরেট অফিসের চার দেওয়ালের মধ্যে থেকেও ৫০ বছর বয়সে এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন... 2/2 by Aninda De
ছবি সংগৃহীত

১. প্যাশন আর প্রস্তুতির মেলবন্ধন নিয়ে আসবে সেরা পারফরম্যান্স

যে কোনও লক্ষ্য জয় করার জন্যে শুধু প্যাশন থাকলেই চলবে না, থাকতে হবে সেই কাজটি সম্পন্ন করার মত ক্ষমতা, যা আসে প্রস্তুতি থেকে। আবার যদি লক্ষ্যের প্রতি ভালবাসা না থাকে, তাহলে শত প্রস্তুতির পরেও লক্ষ্য রয়ে যাবে অধরা। চাই পর্বতশৃঙ্গ জয় করে নেওয়ার অদম্য আকর্ষণ, আর তা সম্ভব করার জন্যে যথেষ্ট প্রস্তুতি।

২. স্বপ্ন হোক বড়, তা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই

এভারেস্ট আরোহণের প্রাক্কালে, এভারেস্টের প্রথম দর্শন পাওয়া যায় ৪৫ দিন আগে। নাগালের বাইরে, আকাশের মধ্যিখানে, সুবিশাল এক ভয়ঙ্কর হাতছানি। একদিনে এই এভারেস্ট জয় সম্ভব নয়। কিন্তু পরের ৪৫ দিন ধরে রোজ একটু একটু করে পর্বতারোহীদের এগিয়ে যেতে হয় লক্ষ্যের দিকে, এভারেস্টের সুবিশালতায় ভয় না পেয়ে।

৪৫তম দিনে তাঁরা পৌঁছান শেষ শৃঙ্গের পাদদেশে, সেখান থেকে পরের ১৩/১৪ ঘণ্টা ধরে চূড়ান্ত দুর্গম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এক পা এক পা করে হাঁটা দিতে হয় চূড়ার দিকে। আর তারপর একসময়, পৃথিবী চলে আসে তাঁদের মাউন্টেন বুটসের তলায়।

তাই আদিত্য বললেন জীবনের লক্ষ্য হোক অনেকটা ওপরে, তা নিয়ে ভয় না পেয়ে, সেই অভিমুখে অল্প অল্প করে এগিয়ে গেলেই মিলবে সাফল্য।

৩. এগোতে হবে এক পা এক পা করেই

আদিত্য জানান কীভাবে বড় বড় লক্ষ্যকে ভেঙে নেওয়া উচিত ছোট ছোট লক্ষ্যে। এভারেস্টের সামিটে পৌঁছানোর আগের রাত্রির ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা জানালেন তিনি। তেরো ঘণ্টা ধরে উপরে ওঠার সময় উঠতে হয়েছে ধীরে ধীরে, আক্ষরিক ভাবেই এক পা এক পা করে। প্রতি পদক্ষেপের মাঝে বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে, কম অক্সিজেন যুক্ত আবহাওয়ায় বার বার নিঃশ্বাস নিয়ে দেহকে পুষ্টি জুগিয়ে হয়েছে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে। লক্ষ্য কখনই ছিল না সামিটে পৌঁছনো, লক্ষ্য ছিল পরের পদক্ষেপটা সফল ভাবে নিতে পারা। আর এক পা এক পা করে এগিয়ে যেতে পারলে, কোনও পর্বত-ই অজেয় হয়ে উঠতে পারে না।

৪. সময় অক্সিজেনের মতো

সময় কারওর জন্যে থেমে থাকে না। ঠিক যেমন এভারেস্টের সামিটে ওঠার সময়, অক্সিজেন। সামিটে ওঠার জন্যে সবাইকে দেওয়া হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন। ওপরে পৌঁছনো সম্ভব হল কী হল না, তার ওপর অক্সিজেন নির্ভর করবে না, আপনার স্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে নিজের নিয়মে সে ফুরিয়ে যাবে। অক্সিজেন বজায় রেখে সামিটে পৌঁছে ক্যাম্প করতে পারাটাই আসল পরীক্ষা।

ঠিক সেভাবেই আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই রয়েছে নির্দিষ্ট কিছুটা সময়। সেই সময় নিজের মতো করে কেটে যাবে, কিন্তু সেই সময়টুকই নষ্ট না করে কাজে লাগিয়ে সাফল্য খুঁজে পাওয়াটাই আমাদের উদ্দেশ্য। আদিত্য জানান প্রতিদিন যদি ৩০ মিনিট করে সময় বের করে কোনও নির্দিষ্ট বিষয়ে নিয়োগ করা যায়, আসতে আসতে সেই অভ্যেস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাফল্য নিয়ে আসবে।

আদিত্য এই বলে বক্তব্য শেষ করেন যে ৪৫ দিনের এভারেস্ট আরোহণের মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষা তিনি অর্জন করেছেন তা ৪৫ বছরের জীবনেও সঞ্চয় করা হয়তো সম্ভব হয়ে ওঠে না সবার পক্ষে। এবং এই অর্জিত অভিজ্ঞতা তিনি সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন কারণ, এভারেস্ট জয় হোক, বা ব্যবসায়ে সাফল্য লাভ হোক বা জীবনযাত্রার যুদ্ধে জয়ী হওয়া, সবের মূল পদ্ধতিগুলো কিন্তু চিরাচরিত ভাবে রয়েছে সেই একই।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।