প্রকৃতপক্ষে উষ্ণ প্রস্রবণ হল একটি জলাশয়। অনেক সময় কোনও পাহাড়ে ভ্রমণে কিংবা তীর্থযাত্রা করার সময় আমরা এই ধরণের প্রস্রবণের সন্ধান পাই। প্রচন্ড ঠান্ডায় একটা কঠিন ট্রেকের পর বেশ অনেকখানি আরাম এনে দেয় এই উষ্ণ প্রস্রবণ। প্রাকৃতিকভাবেই উত্তপ্ত হওয়ার কারণে এই প্রস্রবনে স্নান করে রোগমুক্তিও ঘটে। বৈজ্ঞানিকদের মতে, এই উষ্ণ প্রস্রবণে রয়েছে বিশেষ ধরণের কেমিক্যাল এবং মিনারেল ; যার ঔষধি গুণাগুণের মাধ্যমে মাংস পেশির ব্যাথা, হাই-ব্লাড প্রেসার, কিডনি স্টোন, এমনকি ত্বকের রোগেরও নিরাময় হয়।
এবার তাহলে চটপট ভারতের ১০টি উষ্ণ প্রস্রবণ সম্পর্কে বিশদে জেনে নেওয়া যাক-
১. লাদাখের পানামিক
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০,৪৪২ ফিট উচ্চতায় লাদাখের নুব্রা ভ্যালি অঞ্চলে অবস্থিত পানামিক উষ্ণ প্রস্রবণ। লাদাখের মতো একটা কঠিন যাত্রায় পানামিকের অবস্থান পর্যটকদের ক্ষনিকের সুখানুভূতির সৃষ্টি করে। এই উষ্ণ প্রস্রবণের জলে মিশ্রিত রয়েছে সালফার। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি সালফারের মধ্যে রয়েছে ঔষধি গুণাগুণ এবং নিরাময় ক্ষমতা।
২. হিমাচল প্রদেশের ক্ষীরগঙ্গা
হিমাচল প্রদেশের কাসল ভ্রমণে গিয়ে ট্রেক করে কখনো ক্ষীরগঙ্গা গিয়েছেন? আপনি যদি নিলিবিলি এলাকা ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন তাহলে এই জায়গাটি আপনার জন্য এক্কেবারে পারফেক্ট। এছাড়াও সবুজে ঘেরা পাহাড়ের শান্ত পরিবেশ বেশ মনোমুগ্ধকর। এখানে শিব মন্দিরের নিকটে অবস্থিত উষ্ণ প্রস্রবনটিকে খুব পবিত্রস্থান হিসেবে গণ্য করা হয়।
৩. হিমাচল প্রদেশের মনিকরণ
হিন্দু এবং শিখ সম্প্রদায়ের কাছে মনিকরণ একটি পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত। এখানে পার্বতী নদীর তীরে এবং মনিকরণ সাহিব গুরুদ্বারার কাছে অনেকগুলি উষ্ণপ্রস্রবণ রয়েছে। এখানে মহিলা এবং পুরুষদের উষ্ণ প্রস্রবণে স্নান করার জন্য আলাদাভাবে ব্যবস্থাও রয়েছে।
৪. উত্তরাখন্ডের গৌরীকুণ্ড
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত গৌরীকুণ্ড। মূলত কেদারনাথ যাত্রার বেসক্যাম্প হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত গৌরীকুণ্ড। হিন্দুভক্তদের মতে কেদারনাথ যাত্রা সম্পন্ন করে এই গৌরীকুণ্ডে স্নান করে মঙ্গললাভ করা যায়।
৫.উত্তরাখন্ডের ঋষিকুণ্ড
উত্তরাখন্ডের অপর একটি বিখ্যাত উষ্ণ প্রস্রবণ হল ঋষিকুণ্ড। এটি উত্তরকাশী থেকে ৪৬ কিমি অদূরে অবস্থিত। পর্যটকরা প্রথমে এই ঋষিকুণ্ডে পুন্যস্নান করেই গঙ্গোত্রীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
৬. সিকিমের য়ুমথাং
হিমালয় রাজ্য সিকিমের উষ্ণ প্রস্রবণটি য়ুমথাং নামে পরিচিত। এই উষ্ণ প্রস্রবণটি মূলত লাচুং নদীর তীরবর্তী স্থানে অবস্থিত। এখানে ও এই প্রস্রবনকে মহিলা এবং পুরুষদের জন্য দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।
৭. পশ্চিমবঙ্গের বক্রেশ্বর
পশ্চিমবঙ্গে এই একটিই উষ্ণ প্রস্রবণ রয়েছে। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, একই সাথে এটি কিন্ত পশ্চিমবঙ্গে বিখ্যাত তীর্থযাত্রা ও বটে । তবে অন্যান্য উষ্ণ প্রস্রবণগুলির তুলনায় বক্রেশ্বর কিন্তু এক্কেবারে আলাদা।বক্রেশ্বরের উষ্ণ প্রস্রবনের মধ্যে রয়েছে হিলিয়াম গ্যাস।
৮. মেঘালয়ের যাকরেম
শিলং থেকে ৬৪কিমি অদূরে অবস্থিত যাকরেম শহরটি একসময় পর্যটকদের নজরের আড়ালেই ছিল। কিন্তু বর্তমানে যাকরেমে অবস্থিত উষ্ণ প্রস্রবণের কারণেই পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন। এটি এখন ন্যাচারাল স্পা হিসেবে ও লোকমুখে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
৯. ওড়িশার আত্রী
ওড়িশার বিখ্যাত উষ্ণ প্রস্রবনটি হল আত্রী। এই প্রস্রবণটি খুরদা শহর থেকে ১৫ কিমি দূরে অবস্থিত। বছরের বেশিরভাগ সময়েই এই প্রস্রবনের তাপমাত্রা থেকে ৫৫ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট। স্থানীয় মানুষের মতে এই প্রস্রবণে স্নান করে ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।
১০. মহারাষ্ট্রের আরাবল্লি উষ্ণ প্রস্রবণ
এই উষ্ণ প্রস্রবণটি মহারাষ্ট্রের রত্নাগিরি জেলায় অবস্থিত। আরাবল্লি উষ্ণ প্রস্রবণের সারাবছরের গড় তাপমাত্রা ৪০ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থাকে।
উপরিউক্ত উষ্ণ প্রস্রবণগুলির মধ্যে আপনি কোনটির সাথে পরিচিত? ট্রিপোটো বাংলা আপনার উত্তরের অপেক্ষায় রইল।