কথায় আছে ভারত দর্শন = বিশ্ব দর্শন । কারণ এই ভারতের মাটিতেই রয়েছে আসমুদ্র - হিমাচল থেকে ব্যাকওয়াটারের সৌন্দর্য দর্শন । আর এই ব্যাকওয়াটার বলতেই অজান্তেই মনের মধ্যে উঁকি দেয় কেরালার কথা । হাউসবোটে চেপে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনুধাবন করার মধ্যে একটা অন্যধরণের রোম্যান্টিসিজিম লুকিয়ে রয়েছে । তাই এমনি স্মৃতিমধুর ছুটি কাটাতে পৌঁছে যেতে পারেন আলাপপুযা বা আল্লেপ্পি ।
প্রাচ্যের ভেনিস -
২১ শতকের গোড়ার দিকে ইন্ডিয়ান এম্পায়ারের ভাইস রয় আল্লেপিতে ভ্রমণ করতে এসেছিলেন । সেই সময় কেরালার প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে অভিভূত হয়ে, ভাইস রয় মনে করেন এই রাজ্যটি সবচেয়ে পরিছন্ন এবং বিশুদ্ধ নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য এই স্থানটি একেবারে আদর্শ ।
এছাড়াও এই শহরের দৃশ্যপটের সাথে ইতালির ভেনিস শহরের বেশ অনেকখানি সাদৃশ্য খুঁজে পান এবং সেই সময়ই আলেপ্পিকে ভেনিস অফ দ্য ইস্ট বা প্রাচ্যের ভেনিস হিসেবে অভিহিত করেন । দুই পাড়ে সারি সারি সবুজ গাছের সমাহার এবং চাষের জমির মাঝে ব্যাকওয়াটারে ভ্রমণ নিঃসন্দেহে আপনার ভেনিস ভ্রমণের স্বপ্নকে সার্থক করতে পারে ।
আল্লেপির দর্শনীয় স্থান -
আলেপ্পির দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে প্রধান হল - আল্লেপ্পি সমুদ্রসৈকত। এখান থেকে আরব সাগরের একটা অসাধারণ দৃশ্য এর সান্নিধ্য পেতে পারেন । আপনি যদি প্রকৃতই ভাগ্যশালী হয়ে থাকেন তাহলে ডলফিনেরও দর্শন পেতে পারেন। মূলত সমুদ্রতটে বসে প্রকৃতির সৌন্দর্য রোমন্থন করার জন্য এটি আদর্শ স্থান ।
২. মারারি বিচ -
আল্লেপি শহর থেকে ১১কিমি অদূরে অবস্থিত মারারি বিচ । এখানে বেশ অনেকগুলি আয়ুর্বেদিক সেন্টার এবং বিচ রিসোর্ট রয়েছে । এই বিচ থেকে সূর্যাস্ত দর্শন কিংবা বিচ তীরবর্তী সারি বাঁধা নারকেল গাছ গুলির অবস্থান একটা রোমাঞ্চকতার সৃষ্টি করে ।
৩. কেরালার ব্যাক ওয়াটার -
কেরালা সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ব্যাকওয়াটারের জন্যই । হাজার হাজার পর্যটক শুধুমাত্র এই ব্যাকওয়াটার হাউসবোটে রাত্রিবাস করার জন্য কেরালাকে বেছে নেন। শুধু তাই নয়, এখানে আপনি নানান পরিযায়ী পাখী এবং সামুদ্রিক জীবের খোঁজ পেতে পারেন ।
৪. ভেম্বনদ লেক -
ভারতের দীর্ঘতম লেক হলো কেরালার ভেম্বনদ লেক। যা প্রায় ২০৩৩.০২ বর্গ কিমি অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ।এই লেকটি লুপ্তপ্রায় সামুদ্রিক জীব, পাখীদের প্রধান বাসস্থান হিসেবে পরিচিত । প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, কেরালায় অনুষ্ঠিত বিখ্যাত বার্ষিক স্নেক বোট রেসিং উৎসব এই লেককে কেন্দ্র করেই সম্পন্ন হয় । তবে স্থানীয় ভাষায় এটি পুন্নামাদা লেক নামে পরিচিত ।
৫. কারুমাদিক্কুত্তান -
কারুমাদিক্কুত্তান হলো নবম শতকের কালো গ্রানাইট পাথর দ্বারা নির্মিত একটি বৌদ্ধ মূর্তি । তবে দুর্ভাগ্যবশত, একসময় সেই প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তির বাঁদিকের অংশটি হারিয়ে গিয়েছিল , এই ঘটনার পর কেরালা সরকার কর্তৃপক্ষ এটির সংরক্ষণের দায়ভার নিয়েছেন ।
৬. মান্নারাসলা মন্দির -
হিন্দুদের প্রচলিত কিংবদন্তীকে কেন্দ্র করেই এই মন্দির নির্মাণ করা হয় । এই মন্দিরে স্থাপিত আছেন হিন্দুদের অন্যতম প্রধান দেবতা নাগরাজ । সেই কারণেই এই মন্দিরে প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় । অসাধারণ স্থাপত্য শিল্পের একটি উৎকৃষ্ট নিদর্শন হলো এই মন্দিরটি ।এখানে পুরানে বর্ণিত নাগরাজের প্রায় ৩০০০ টি চিত্র এর দর্শন পেতে পারেন ।
৭. সেন্ট মেরি ফরেন চার্চ -
ভারতের অন্যতম চার্চ সেন্ট মেরি ফরেন চার্চটি এই কেরালাতেই অবস্থিত । ১৮৭০ সালে নির্মিত এই চার্চটি তৎকালীন স্থাপত্য এর অনন্য নিদর্শন তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।
কোথায় থাকবেন?
গুগল সার্চ করে বা হোটেল বুকিং অ্যাপের সাহায্যে আল্লেপিতে রাত্রিবাস করার হোটেলের সন্ধান পেয়ে যাবেন । এছাড়াও হাউসবোটে থেকে রোমান্টিক সময় কাটানোর জন্য হ্যাপি হাউসবোট ( ফোন নং - ৯৫২৬২০০৪০০), এক্সেটিকা ক্রুসেস কেরালা, কেরালা হাউসবোট ( ফোন নং - ৯৫২৬২৩২২২১) সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ।
খরচ -
হাউসবোটে রাত্রিবাসের খরচ - ১০,০০০ টাকা থেকে শুরু ।
হোটেলে রাত্রিবাসের খরচ - ১৫০০ টাকা থেকে শুরু ।
কিভাবে যাবেন?
বিমানে - কলকাতা বিমানবন্দর থেকে আল্লেপ্পি পৌঁছানোর বিমান উপলব্ধ রয়েছে । বিমানবন্দর থেকে গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যেতে পারেন গন্তব্যে ।
ট্রেনে - হাওড়া বা শালিমার স্টেশন থেকে এর্ণাকুলাম এক্সপ্রেস ধরে পৌঁছে যান এর্ণাকুলাম বা কোচিন । স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে ৫৩কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান আলাপপুযা ।