আমাদের প্রত্যেকের কাছেই হিল স্টেশন মানেই মানেই রূপকথার রাজ্য । শীতল মনোরম পরিবেশে আচ্ছাদিত হিল স্টেশনের মূল আকর্ষণ হল পাহাড় এবং পাইনের ঘন অরণ্য কিংবা রঙিন অর্কিডের মনভোলানো রূপদর্শন। পাহাড়ি অঞ্চলগুলি রুক্ষ প্রকৃতির হলেও পাহাড়ের কোমলতা, সিন্গ্ধতা, মায়াময়তা একমাত্র পাহাড়-প্রেমিক মানুষই বোঝেন । এমনই পাহাড়ের নানান বর্ণময় অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকতে পৌঁছে যান মিরিকে ।
অবস্থান
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭৬৭ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার ছোট্ট পাহাড়ি শহর হল মিরিক । মিরিক শব্দটি লেপচা ভাষার মির-ইয়ক ( যে স্থানটি একদা আগুনে ভস্মীভূত হয়ে নতুনভাবে নির্মিত হয়েছে ) থেকে উৎপত্তি হয়েছে ।
দর্শনীয় স্থান -
মিরিকের প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলি হল -
১. সামেন্দু লেক-
মিরিকের প্রসিদ্ধ ভ্রমণস্থানগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান ভ্রমণস্থান হল সামেন্দু লেক। লেকের অদূরে কাঞ্চনজঙ্ঘার অবস্থান এবং ওক, পাইন ইত্যাদি গাছের অবস্থান মিলিয়ে অঞ্চলটিতে দৈবিকতার সৃষ্টি করেছে । প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, এই কৃত্রিম লেকটি ১৯৭০ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃপক্ষ পর্যটনের উদ্দেশ্যে নির্মাণ করেন । এই বিশাল লেকে বোটিং করে আপনি পার্বত্য অঞ্চলের প্রকৃতিকে উপভোগ করতে পারেন ।
২. বুঙ্কুলুং
আপনি যদি অফবিট ট্যুর করতে ভালোবাসেন তাহলে গাড়ি ভাড়া করে মিনিট খানেক দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যেতে পারেন বুঙ্কুলুং। এটি মূলত মিরিকের একটি প্রধান চাষক্ষেত্র । এই গ্রামটিতে ভ্রমণ করে পাহাড়ি গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলাপ করে নিতে পারেন । এছাড়াও প্রকৃতির অসাধারণ রূপদর্শনের জন্যও এই স্থানটিকে অনায়াসেই বেছে নিতে পারেন ।
৩. বোকার মনেস্ট্রি
মিরিক লেক থেকে কয়েক কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যেতে পারেন বোকার মনেস্ট্রি। চৈনিক স্থাপত্য শিল্পের অনুকরণে গঠিত এই মনেস্ট্রিটির প্রধান দেবতা হলেন ভেঙেরবল কাবজে বোকার রিপনছে ।
৪. মিরিক চা বাগান
দার্জিলিং মানেই চা বাগান । তাই মিরিক ভ্রমণে গিয়ে চা বাগান ভ্রমণ না করলে পাহাড় ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায় । এই চা বাগান গুলি ভ্রমণ করে চা নির্মাণের প্রক্রিয়াগুলি জেনে নিতে পারেন । তবে অযথা চা পাতা তোলার চেষ্টা করবেন না। ইচ্ছা করলে ভ্রমণের স্মৃতি হিসেবে বিস্তীর্ণ চা বাগানকে ক্যামেরাবন্দি করে নিতে পারেন ।
৫. রামেটায় ধারা
অন্যান্য হিল স্টেশনগুলির মতো মিরিকেও একটা ভিউ পয়েন্ট রয়েছে ; যা রামেটায় ধারা নামে পরিচিত । এখান থেকে আপনি তুষারশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দর্শন করে নিতে পারেন ।
এছাড়াও মিরিক থেকে আপনি অরেঞ্জ অর্কিড, মিরিক চার্চ, পশুপতি মার্কেট দর্শন করে নিতে পারেন ।
কোথায় থাকবেন?
মিরিকে প্রচুর হোটেল এবং হোমস্টে রয়েছে । অনলাইনে সার্চ করে আপনার পছন্দ মতো হোটেল ভাড়া করে রাত্রিবাস করতে পারেন ।
ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় -
মিরিক শহরটি বছরের যে কোনও সময় ভ্রমণের উপযোগী । তবে বর্ষাকালীন সময়টা এখানে ভ্রমণের পরিকল্পনা না করাই ভালো ।
কীভাবে যাবেন?
বিমানে - কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বিমানে চেপে পৌঁছে যান বাগডোগরা বিমানবন্দর । সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ৪৮ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যেতে পারেন গন্তব্যে ।
ট্রেনে - শিয়ালদহ স্টেশন/ হাওড়া/ কলকাতা স্টেশন ট্রেনে ধরে প্রথমে পৌঁছে যান নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন । এরপর স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে ৫৭ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান বাঙালির অন্যতম প্ৰিয় হিল স্টেশন মিরিকে ।