আচ্ছা বলুন তো রোড ট্রিপ বলতে প্রথমেই আপনার মাথায় কী আসে? গোয়া, লাদাখ, স্পিতি, জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা কিংবা থর তাই তো? উত্তর - পূর্ব অঞ্চলে রোড ট্রিপে কখনও গিয়েছেন? তাও আবার নিজস্ব বাইক বা গাড়ি ছাড়া? হ্যাঁ এই যাত্রাটিতে শুধুমাত্র পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সহযোগে যাত্রা করার সুযোগ রয়েছে । প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাত্রার ফলে আপনি ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলি ও ঘুরে নিতে পারেন ।
মণিপুর - মায়ানমার -
ভারত থেকে মায়ানমারে সড়কপথে যাত্রার অভিজ্ঞতাটা কিন্তু অসাধারণ । তবে আপনি যদি নিজে ড্রাইভ করে যান তাহলে খরচ সংখ্যাটা দ্বিগুণ হতে পারে । তবে আপনি খুব সহজেই খরচের অংশটা কম করে নিতে পারেন । মণিপুরের মরেহ সীমান্ত অঞ্চলের শেষ শহর ।এখানে থেকে টুরিস্ট ভিসা সহযোগে হেঁটে পৌঁছে যেতে পারেন মায়ানমার । এখানে কিন্তু ই- ভিসার ব্যবহার হয় না । ফেরার সময় ও আপনি এই পন্থা অবলম্বন করতে পারেন । তবে খুব শীঘ্রই ইমফল -মন্ডলায় আন্তর্জাতিক বাস পরিষেবা চালু হবে ।
কীভাবে যাবেন?
বিমানে -ভারতের যে কোনও বড়ো শহর থেকে পৌঁছে যান ইমফল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ।
ট্রেনে - মণিপুর পৌঁছনোর জন্য নিকটতম বিমানবন্দরটি হল-জিরিবাম। এখানে থেকে গাড়ি ভাড়া করে ৩০০কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান মরেহ ।
সড়কপথে - মরেহ যাওয়ার জন্য ইমফল থেকে আপনি ট্যাক্সি পেয়ে যাবেন ।
ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় : অক্টোবর থেকে জুন মাসটিই ভ্রমণের জন্য আদৰ্শ । এই সময় গড় তাপমাত্রা থাকে ১০ -৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস । তবে বর্ষাকালীন সময় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস এড়িয়ে যাওয়াই ভালো ।
গুয়াহাটি - আগরতলা ট্রেন যাত্রা
আপনি কি কখনও পল থেরাক্স এর নাম শুনেছেন? ইনি হলেন আমেরিকার ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখক, যিনি শুধুমাত্র ট্রেনে চেপে বিশ্বের কোণায় কোণায় ভ্রমণ করেছেন । ভারতের ক্ষেত্রেও এমন চেপে ভারতের কোণায় কোণায় ভ্রমণ করা যায় । তাই গুয়াহাটি - আগরতলা ট্রেন যাত্রা করেও ভারতবর্ষকে নতুন করে চিনে নিতে পারেন। গুয়াহাটি - আগরতলা ট্রেনযাত্রা সম্পর্কে বিশদে জানতে এখানে ক্লিক করুন ।
কীভাবে পৌঁছবেন?
বিমানে - ভারতের যে কোনও বড়ো শহর থেকে পৌঁছে যান গুয়াহাটির লোকপ্ৰিয় গোপীনাথ বরদলোই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ।
ট্রেনে - ভারতের প্রধান শহরগুলি থেকে রাজধানী বা শতাব্দী এক্সপ্রেস চেপেও পৌঁছে যেতে পারেন গুয়াহাটি ।
সড়কপথে - সিকিম বা পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাসে চেপে পৌঁছে যেতে পারেন গুয়াহাটি ।
ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় - অক্টোবর থেকে জুন মাসটিই ভ্রমণের জন্য আদৰ্শ । এই সময় গড় তাপমাত্রা থাকে ১০ -৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস । তবে বর্ষাকালীন সময় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস এড়িয়ে যাওয়াই ভালো ।
কোথায় থাকবেন?
রী- সান ( দুইশয্যা সহ হোটেলের খরচ - ৭০০ টাকা ), হোটেল লীলাবতী গ্র্যান্ড ( খরচ - ১৮৭২ টাকা ) বিশদে জানতে এখানে ক্লিক করুন ।
আগরতলা থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব মাত্র ৪ কিমি । এখানে আপনি পায়ে হেঁটে কিংবা রিক্সা করে পৌঁছে যেতে পারেন । আপনি যদি বাংলাদেশ টুরিস্ট ভিসা ছাড়াও আগরতলা পৌঁছে যান তাহলে আগরতলার ভিসা অফিস থেকে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। আর বাসে বা ট্রেনে চেপে ঢাকা পৌঁছে যেতে পারেন ।
কীভাবে পৌঁছবেন?
বিমানে - ভারতের যে কোনও বড়ো শহর থেকে পৌঁছে যান আগরতলার মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বিমানবন্দর ।
ট্রেনে - ভারতের প্রধান শহরগুলি থেকে ট্রেনে চেপে ও পৌঁছে যেতে পারেন আগরতলা ।
সড়কপথে - বাসে চেপে আগরতলা পৌঁছানোর তেমন অবকাশ নেই । তাই ট্রেন বা বিমানেই আগরতলা পৌঁছতে পারেন ।
ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় - অক্টোবর থেকে জুন মাসটিই ভ্রমণের জন্য আদৰ্শ । এই সময় গড় তাপমাত্রা থাকে ১০ -৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস । তবে বর্ষাকালীন সময় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস এড়িয়ে যাওয়াই ভালো ।
কোথায় থাকবেন?
হোটেল ষ্টার (ডবল বেডরুম এর খরচ ৬৫০ টাকা ), হোটেল জিঞ্জার ( ডবল বেডরুম এর খরচ ২৮৭৯ টাকা ) । বিশদে জানতে এখানে ক্লিক করুন ।
আপনার কী প্যাসেঞ্জার ট্রেনের মাধ্যমে ছোট্ট গ্রাম ঘুরে আদিবাসী মানুষদের ঐতিহ্য রীতি নীতি জানতে ভালো লাগে? তাহলে গুয়াহাটি- জিরিবাম (মণিপুর ) ট্রেন ধরে স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনধারাকে দর্শন করে নিতে পারেন । প্রথমে গুয়াহাটি - আগরতলা রুটের ট্রেন ধরে পৌঁছে যান বদরপুর জংশন । এখান থেকে অরুণাচল প্রদেশ গামী ট্রেনে চেপে পৌঁছে যান জিরিবাম । যাত্রাপথে আপনার জন্য অপেক্ষমান রয়েছে ঘন সবুজ অরণ্য, পর্বতশৃঙ্গ, ছোট ছোট গ্রাম, এবং আদিবাসী জনজীবন ।
কীভাবে যাবেন?
বিমানে - প্রথমে পৌঁছে যান ইমফল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর । এখান থেকে ইমফল থেকে পৌঁছে যেতে পারেন জিরিবাম ।
ট্রেনে - জিরিবাম পৌঁছানোর জন্য ধর্মনগর, বদরপুর থেকে অরুণাচল প্রদেশগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেনে চেপে পৌঁছে যেতে পারেন ।
সড়কপথে - জিরিবাম পৌঁছানোর জন্য কোনো বাস পরিষেবা নেই ।একমাত্র ইমফল থেকে এখানে পৌঁছতে পারেন ।
ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় - অক্টোবর থেকে জুন মাসটাই জিরিবাম ভ্রমণের জন্য আদর্শ ।
গুয়াহাটি - ভৈরবী -
গুয়াহাটি থেকে ভৈরবী (মিজোরাম ) যাওয়ার জন্য বদরপুর হয়ে গুয়াহাটি - জিরিবাম রুট ধরেই পৌঁছে যেতে পারেন । যাত্রাপথে আপনি মিজো গ্রাম দেখতে পারেন এবং স্থানীয় খাদ্যগুলি চেখে নিতে পারেন । ভৈরবী এখানকার সর্বশেষ স্টেশন । তাই এখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যেতে পারেন মিজোরামের রাজধানী আইজল ।
কীভাবে যাবেন?
বিমানে - ভারতের যে কোনও স্থান থেকে পৌঁছে যান মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বিমানবন্দর । সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যান গন্তব্যে।
ট্রেন - ভারতের শহরগুলি থেকে ভৈরবী পৌঁছানোর সরাসরি ট্রেন উপলব্ধ নেই । তাই বদরপুর এবং অরুণাচল জংশন স্টেশন থেকে প্যাসেঞ্জার ট্রেনে এখানে পৌঁছতে পারেন ।
সড়কপথে - ভৈরবী পৌঁছানোর জন্য কোনও বাস পরিষেবা উপলব্ধ নেই ।
ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় : অক্টোবর থেকে জুন মাস ভৈরবী ভ্রমণের জন্য শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে পরিগণিত হয় ।
আপনি কি কখনও শুধুমাত্র পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এর সাহায্যে উত্তর-পূর্ব অঞ্চল ভ্রমণ করেছেন? তাহলে আপনার অভিজ্ঞতাটা ট্রিপোটোর সাথে ভাগ করে নিতে কিন্তু ভুলবেন না ।
ডিব্রুগড় - আলো - মেচুকা -
দূরে সবুজ পাহাড় থেকে মেচুকা নদীর উৎপত্তি লাভ করে মেচুকা গ্রামের পথ বেয়ে এঁকে বেঁকে বেয়ে চলা ইত্যাদি ছবির মতো দৃশ্যপটের সাক্ষী থাকতে পৌঁছে যান মেচুকা । একটা গাড়ি ধরে মেচুকা গ্রামে পৌঁছতেও আপনি প্রকৃতির গূঢ় উপলব্ধি করতে পারেন । আসামের ডিব্রুগড় পৌঁছে ফেরি সহযোগে ব্রহ্মপুত্র নদী পাড় করে বাস ধরে আলো পৌঁছে সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে এখানে চলে আসতে পারেন ।
ডিব্রুগড়- কীভাবে যাবেন?
বিমানে - ভারতের যে কোনও বড়ো শহর থেকে পৌঁছে যান ডিব্রুগড়ের চাবুয়া বিমানবন্দর ।
ট্রেনে - ডিব্রুগড় শহর এবং ডিব্রুগড় নামে মোট দুইটি রেলস্টেশন আছে যা ভারতের বড়ো শহরগুলি থেকে পৌঁছে যাওয়া যায় ।
সড়কপথে - গুয়াহাটি থেকে কোহিমা - ডিব্রুগড় যাওয়ার অনেক বাস উপলব্ধ আছে ।
ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় - অক্টোবর থেকে জুন মাসটি ভ্রমণের জন্য আদর্শ । এই সময় তাপমাত্রা বেশ অনুকূল থাকে । বর্ষাকালীন সময় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসটি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো ।
কোথায় থাকবেন?
ভাস্কর হোমস্টে ( ডবল বেডরুমের খরচ - ১০০০ টাকা ), হোটেল নটরাজ ( ডবল বেডরুমের খরচ - ২৩০০ টাকা) বিশদে জানতে এখানে ক্লিক করুন ।