কাশীর তুল্য মহাদেবের দর্শনে চলে আসুন নদীয়ার শিবনিবাসে...

Tripoto
Photo of কাশীর তুল্য মহাদেবের দর্শনে চলে আসুন নদীয়ার শিবনিবাসে... 1/9 by Deya Das

নদিয়া থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে একটি ছোট্ট গ্রাম মাজদিয়া; যার নাম হয়ত অনেক মানুষের অজানা। তবে এই গ্রামেই রয়েছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ এবং পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় ও পুরাতন কষ্টি পাথরের শিবলিঙ্গ।

Photo of কাশীর তুল্য মহাদেবের দর্শনে চলে আসুন নদীয়ার শিবনিবাসে... 2/9 by Deya Das

স্থানীয় লোককথা অনুযায়ী বলা হত “শিবনিবাস তুল্য কাশী, ধন্য নদী কঙ্গনা।” কিন্তু কেন শিবনিবাসকে কাশীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে? আর কেনই বা শিব দর্শনে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে এই মন্দিরে উপস্থিত হয়? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা পৌঁছে গেলাম মাজদিয়া শিবনিবাসে।

Photo of কাশীর তুল্য মহাদেবের দর্শনে চলে আসুন নদীয়ার শিবনিবাসে... 3/9 by Deya Das

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, নসরত খাঁ নামে একজন দুর্ধর্ষ ডাকাতকে দমন করার পর মাজদিয়ার এক গভীর অরণ্যে এসে উপস্থিত হন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র। পরদিন সকালে তিনি সেখানকার এক নদীর জলে মুখ ধুতে গেলে জলের স্রোতে ভেসে আসা একটি রুই মাছ লাফিয়ে রাজার পায়ে পরে। এই ঘটনা দেখার পরে রাজা তাঁর আত্মীয়দের কথা শুনে বাংলায় বর্গী আক্রমণের সময় তাঁর রাজধানীকে সাময়িকভাবে মাজদিয়ায় শহরে আনেন। সেই সময় রাজধানী মাজদিয়াকে সুরক্ষা বলয়ে নিয়ে আসার জন্য খাল কেটে ইচ্ছামতী ও চূর্ণী নদীকে একত্রে জুড়ে দিয়ে একটি জনপদ গঠন করেছিলেন। যেই খালটি আজও কঙ্কণা নদী নামে পরিচিত। এইস্থানে পৌঁছে তিনি শিব প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেইস্থানের নামকরণ করেন শিবনিবাস।

Photo of কাশীর তুল্য মহাদেবের দর্শনে চলে আসুন নদীয়ার শিবনিবাসে... 4/9 by Deya Das

১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে মাজদিয়ার এই মন্দিরটি রাজ রাজেশ্বর মন্দির নামে বিখ্যাত হয়। মন্দিরের সুউচ্চ চূড়াটি নদীর ঘাট থেকেই দেখতে পাওয়া যায়। আটকোণা সরু থামের মিনার বিশিষ্ট এই মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ১২০ ফুট। মন্দিরের ভিতরে রয়েছে কষ্টি পাথরের শিবলিঙ্গ যার উচ্চতা ১১ ফুট ৯ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৩৬ ফুট। স্থানীয় লোকেরা এই মন্দিরটিকে বুড়ো শিব মন্দির বলে থাকেন। এই মন্দিরে আসলে সিঁড়ি দিয়ে উঠে শিব লিঙ্গের মাথায় জল ঢালতে হয়। এইস্থানে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ১০৮ টি মন্দির এবং একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন। তবে বর্তমানে সবকিছু ক্ষয়প্রাপ্ত হয় মাত্র তিনটি মন্দিরের অবশিষ্ট রয়েছে।

Photo of কাশীর তুল্য মহাদেবের দর্শনে চলে আসুন নদীয়ার শিবনিবাসে... 5/9 by Deya Das

রাজ রাজেশ্বর মন্দির পূর্ব দিকে রয়েছে চার চালা ৬০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট দ্বিতীয় মন্দিরটি; যার নাম রাজ্ঞীশ্বর মন্দির

Photo of কাশীর তুল্য মহাদেবের দর্শনে চলে আসুন নদীয়ার শিবনিবাসে... 6/9 by Deya Das

মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়-এর দ্বিতীয় পত্নী ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা শিবলিঙ্গটির উচ্চতা প্রায় ৭ ফুট। এই মন্দিরটির পাশেই রয়েছে চার ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট রাম সীতা মন্দির। চার চালার এই মন্দিরের ভিতরে সিংহাসনে রয়েছেন কষ্টিপাথরের রামচন্দ্র অষ্টধাতুর দেবী সীতা সঙ্গে লক্ষণ। শিবনিবাসে এসে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র অগ্নিহোত্রী বাজপেয়ী যজ্ঞ সম্পন্ন করেছিলেন বলে এই স্থানকে কাশির ন্যায় মর্যাদা দেওয়া হয়।

Photo of কাশীর তুল্য মহাদেবের দর্শনে চলে আসুন নদীয়ার শিবনিবাসে... 7/9 by Deya Das

শিবনিবাসে সারাবছর দর্শনার্থীদের দেখা মিললেও শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার শিবলিঙ্গে জল ঢালার জন্য লক্ষাধিক মানুষের ঢল নামে। প্রতিবছর ভীম একাদশীতে এখানে মেলা বসে এবং শিবরাত্রি পর্যন্ত চলে।

Photo of কাশীর তুল্য মহাদেবের দর্শনে চলে আসুন নদীয়ার শিবনিবাসে... 8/9 by Deya Das

পথনির্দেশ-

Photo of কাশীর তুল্য মহাদেবের দর্শনে চলে আসুন নদীয়ার শিবনিবাসে... 9/9 by Deya Das

শিয়ালদহ থেকে গেদে লোকালে মাজদিয়া পৌঁছানো যায়। সেখান থেকে টুকটুকি করে শিবনিবাস যাওয়া যায়।

অথবা;

শিয়ালদহ থেকে কৃষ্ণনগর লোকাল ধরে কৃষ্ণনগরে পৌঁছে সেখানে থেকে টুকটুকিতে বাসস্ট্যান্ড আসতে হবে। তারপর বাসস্ট্যান্ড থেকে মাজদিয়ার বাসে করে শিবনিবাস মোড়ে নামতে হয়।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।