১৯১৭ সালে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতের প্রথম সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয়। এই সময় বিহারের চম্পারণে নীল চাষকে কেন্দ্র করে নীলকর সাহেবদের প্রতি নীলচাষীদের অসন্তোষ ও বিক্ষোভ জমতে শুরু করেন। ইতিহাসের এই চম্পারন সত্যাগ্রহের কথা হয়তো সবার জানা। কিন্তু বিহারের চম্পারণ যে শুধু সত্যাগ্রহ আন্দোলনের জন্য বিখ্যাত এমন নয়।
বিহার ও নেপালের বর্ডারের পাশে ঘোড়াশোহণ নামে একটি গ্রাম আছে, যেখানে একসময় মাটির হাঁড়িতে মাংস রান্নার প্রচলন ছিল। পরবর্তীতে সেই রান্নার পদ্ধতি আস্তে আস্তে চম্পারণ এসে পৌঁছোলে পদটি চম্পারণ মটন নামে পরিচিত হতে শুরু করে। বর্তমানে এই সুস্বাদু লোভনীয় পদটি খাদ্যপ্রেমীদের মন জয় করে বিশ্বের দরবারে নিজের স্থান করে নিয়েছে।
এই আহুনা মাংস বা চম্পারণ মটন তৈরির পদ্ধতি
ভোজপুরি ভাষায় আহুনা শব্দের অর্থ হল মাটির হাঁড়ি।সাধারণত ছোট ছোট ছিদ্রযুক্ত মাটির হাঁড়িতে এই মাংসটি রান্না করা হয়। তাই এই পদটির নাম হান্ডি মটন বা আহুনা বা বাটলোহি বা মটকা মটন। প্রথম একটি পাত্রের মধ্যে মাংস সাথে পিঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি, আদা বাটা, গোটা রসুন এবং বিভিন্ন রকমের মশলা মাখানো হয়। তারপর আগের থেকে জাল দেওয়া ঠান্ডা করে রাখা সর্ষের তেল দিয়ে সেটিকে পুনঃরায় প্রলেপ দেওয়া হয়, যাতে মশলাগুলি মাংসের গায়ে লেগে থাকে। এবার ওই ছিদ্রযুক্ত মাটির হাঁড়ির গায়ের ছিদ্রগুলি বন্ধ করার জন্য সর্ষের তেলের একটি প্রলেপ দেওয়া হয়। তারপর মাংসের এই মিশ্রণটি হাঁড়ির মধ্যে ঢেলে আটা দিয়ে ভালো করে ঢাকনাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে হাঁড়ির ভিতরের বাষ্প বাইরে না বের হতে পারে। এরপর হাঁড়ির ঢাকনাটির মাথায় একটি ছোট্ট ছিদ্র করে সেটিকে আগুনের আঁচে বসিয়ে দেওয়া হয়। এই পুরো রান্নাটি সম্পন্ন হতে প্রায় ১ ঘণ্টা সময় লাগে। এর মধ্যে সেই গরম হাঁড়িটিকে হাতে নিয়ে মাংসের মিশ্রনটিকে ভাল করে নাড়িয়ে দেওয়া হয়; যাতে সব দিক থেকে সমানভাবে মাংসটি সিদ্ধ হয়। এক ঘন্টা পর আগুনের আঁচ থেকে মাংসের হাঁড়িটিকে নামিয়ে হাঁড়ির মুখের ছিদ্রটিকে বন্ধ করে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দেওয়া হয়। এতে যদি কোনও মাংস আধা সিদ্ধ অবস্থায় থাকে তাহলে এই ভাপেই সেটি তৈরি হয়ে যায়। প্রধানত এই পুরো রান্নাটি যেহেতু ভাপে বা স্টিমে করা হয়, তাই এটিকে দম স্টাইল মটনও বলা হয়।
বিহারের বিখ্যাত কিছু চম্পারণ মটনের রেস্তরাঁ
১. ওল্ড চম্পারণ মিট হাউস - ০৯৪৩০০৬০৩৬৮
২. নারায়ণী রেস্টুরেন্ট এন্ড চম্পারণ মিট হাউস- ০৭৯৪৭৩৩৪৯৬৯
তবে সুখবর এখন কলকাতাতেও বসে চম্পারণ মটনের স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে।
কলকাতা চম্পারণ মিট কর্নার- ০৭৯৮০৮৬৮৮৮০
কথায় বলে বাঙালি খেতে ও খাওয়াতে উভয়ই ভালোবাসে। আর সেই খাওয়া যদি হঠাৎ করে ঘুরতে গিয়ে সেখানকার বিখ্যাত কোন পদ হয়; তাহলে তো কথায় নেই। সুতরাং দেরি না করে ঝটপট বেরিয়ে আসুন বিহারে আর সঙ্গে চম্পারণ মটনের স্বাদ গ্রহণ করতে কিন্তু একদম ভুলবেন না।