কেরালা কফির সঙ্গে সঙ্গে এবার পাবেন মশলার সুগন্ধ...

Tripoto

বাঙালি জাতির দু’টি বিষয়ের উপর টান বরাবর বেশি, এক দাদার খেলা আর দুই মটন কষা। এবার ধরুন হঠাৎ করে খেলা দেখতে দেখতে প্রবল বৃষ্টি নেমে খেলা বন্ধ হয়ে গেলে বাঙালির ঠিক যতটা না হৃদয়-ভঙ্গ হয়; তার থেকেও বেশি তারা দুঃখ পায় যখন দেখে রবিবার বাড়িতে মাংসের স্টু রান্না হয়েছে। কারণ রসিয়ে-কষিয়ে মাংস রান্না নাহলে তা খেয়ে কি আর মজা হয়?

ঠিক তাই! বাঙালি যেমন খেলার মাঠে দর্শকদের মনে ঝড় তুলে দিতে পারে; ঠিক সেভাবেই কষিয়ে রান্না করেও পরিবারের সবার মন জয় করে নিতে পারে। আর এই রান্নাকে সুস্বাদু করে তুলতে আমাদের মাস্টার শেফ মায়েরা বিভিন্ন রকম মশলা ব্যবহার করে থাকে না। শুধু তাই নয়, আজ ডাক্তারেরাও বলছেন ভারতীয় মশলা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু আপনারা কী জানেন এই সমস্ত মশলা কোথা থেকে আসে? আমি কিন্তু জানি। না না ভয় পাবেন না। আমি কোনও মশলার কোম্পানির বিজ্ঞাপন করছি না! আজ আমি আমার দেখা মশলা বাগানের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।

Photo of কেরালা কফির সঙ্গে সঙ্গে এবার পাবেন মশলার সুগন্ধ... 1/1 by Deya Das
রকমারি মশলার বাহার (ছবি সংগৃহীত)

মশলার ইতিকথা-

কেরালা শব্দটির উৎপত্তি হয় মালায়লাম শব্দ “কের” এবং “আলম” থেকে, যার অর্থ হল নারকেল গাছের ভূমি। লাক্ষাদ্বীপ এবং পশ্চিমঘাট পর্বতমালার ঠিক মাঝখানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে অবস্থিত এই রাজ্যটি, যার রাজধানী তিরুবনন্তপুরম পাহাড়ের উপর অবস্থিত। তবে কেরালা শুধু নারকেল গাছের ভূমি নয়, মশলার জন্যও সমানভাবে জনপ্রিয়। তাই কেরালাকে দ্যা স্পাইস গার্ডেন অফ ইন্ডিয়া অর্থাৎ ভারতের মশলার বাগান নামে চিহ্নিত করা হয়।

স্পাইস গার্ডেনের ভূমিকা (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Kerala, India by Deya Das

এইরকম নামকরণের কারণ?

• কেরালার দুটি জায়গা যথা- ইদুক্কি এবং ওয়ায়ানদ-এ প্রধানত সব ধরনের মশলার চাষ হয়ে থাকে।

• বর্তমানে কেরালা থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মশলা সারা বিশ্বে রপ্তানি করা হয়। তাই এটি এখানকার মানুষদের একপ্রকার জীবিকা ধারণের অবলম্বন হয়ে উঠেছে।

• মশলা চাষের জন্য প্রধানত প্রচুর পরিমাণে আর্দ্রতা এবং আঁশযুক্ত পলিমাটির প্রয়োজন পরে, যা গ্রীষ্ম ও আর্দ্রতা সম্পূর্ণ জলবায়ু অন্তর্ভুক্ত জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়। গ্রীষ্ম-বর্ষাকালে কেরালাতে এইরকমই।

• আবহাওয়া ও পরিবেশ থাকার কারণে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মশলা উৎপাদন করা হয়।

Photo of কেরালা কফির সঙ্গে সঙ্গে এবার পাবেন মশলার সুগন্ধ... by Deya Das

কেরালার কিছু বিখ্যাত মশলা ও আয়ুর্বেদিক গাছের বাগান

১. পেরিয়ার স্পাইস অ্যান্ড আয়ুর্বেদিক গার্ডেন-

মুন্নারের এই মশলার বাগানটি বেশ বিখ্যাত (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Periyar spice and ayurvedic garden, Vandanmedu, Kerala, India by Deya Das

এটি কেরালার মুন্নার- ঠেক্কাডি রোডের উপর অবস্থিত। এই বাগানটিতে বিভিন্ন রকমের মশলার গাছ যেমন- দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, বাদাম, গোলমরিচ ইত্যাদি গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও অ্যালোভেরা, লাল চন্দন, আমলা, লেবু, ইউক্যালিপটাস, দূর্বাঘাস এবং ভেট্রিভার্ট- এর মতো বিভিন্ন প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদ লক্ষ করা যায়। শুধু এগুলি নয়, রকমারি অর্কিড, বিভিন্ন ধরনের জংলি ফুল, বিলুপ্ত প্রজাতির পাখি ও কফি গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এই বাগানের বাইরে রয়েছে বিভিন্ন মশলা এবং ভেষজ ওষুধের দোকান রয়েছে, যেখান থেকে আপনি খাঁটি বিশুদ্ধ মশলা এবং বিভিন্ন রোগের ওষুধ কিনে আনতে পারেন। শুধু তাই নয়, এই দোকানগুলোতে নিয়মিত ডাক্তার থাকেন। যদি আপনার কোনরকম সমস্যা হয় তাহলে তাদের সঙ্গে কথা বলে তারপর আপনি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক ভেষজ গাছপাতা বা জিনিস সংগ্রহ করতে পারেন।

ভ্রমণের সময়- সকাল ৯টা থেকে সন্ধে ৬টা অবধি।

২. গ্রিনল্যান্ড স্পাইস গার্ডেন-

এখানেও পাবেন রকমারি মশলার সম্ভার (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Green Land Spice Garden, Springvalley, Periyar, Kerala, India by Deya Das

এই বাগানটি কোচিন-মুন্নার বাইপাস রোডের ধারে অবস্থিত। মুন্নার প্রধানত চা বাগানের জন্য বিখ্যাত হলেও মুন্নারে অবস্থিত এই বাগানটি দেখার পরে আপনি অত্যাশ্চর্য হয়ে পড়বেন। এখানেও বিভিন্ন ধরনের ভারতীয় মশলার গাছ দেখতে পাবেন। সাথে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ফল এবং অজানা সব ফুলের গাছ। এই বাগানটি করে দেখার জন্য আপনার সঙ্গে একজন পথপ্রদর্শক থাকবে। তিনি প্রতিটি গাছের কী গুনাগুন সেগুলি আপনাকে ব্যাখ্যা করে জানাবেন।

ভ্রমণের সময়- সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা।

৩. বানাসুরা স্পাইসেস এন্ড আয়ুর্বেদিক গার্ডেন-

এই বাগানটি পাদিঞ্জারাথারা ড্যাম রোডে অবস্থিত। এখানেও আপনি একজন পথপ্রদর্শকের সাহায্যে বাগান করে দেখতে পারবেন। এছাড়াও বিভিন্ন রকম শারীরিক অসুস্থতা যেগুলি সাধারণত ওষুধের দ্বারা সম্ভব নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, সেগুলি সারানোর জন্য বিভিন্ন রকম ভেষজ গাছ এখানে দেখতে পাবেন।

ভ্রমণের সময়- ২৪ ঘণ্টা।

৪. অনাক্কাড়া স্পাইস অ্যান্ড আয়ুর্বেদিক গার্ডেন-

Photo of Anakkara spice garden, Munnar-Kumily Highway, Anakkara, Kerala, India by Deya Das

এটি মুন্নার এবং কুমিলি সড়কের উপর অবস্থিত।

ভ্রমণের সময়- সকাল ৮.৩০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা।

৫. শালিমার স্পাইস গার্ডেন-

শালিমার স্পাইস গার্ডেন (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Amritara Shalimar Spice Garden, Thekkady, Kumily Alady Rd, Viswanathapuram, Thekkady, Periyar, Kerala, India by Deya Das

ঠেক্কাডি-তে অবস্থিত এই বাগানটিকে সমস্যার জন্য জনপ্রিয় নয়, এখানে এসে কিছুটা সময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ভ্রমণকারীদের থাকার যথাযথ ব্যবস্থা রয়েছে। তাই এই জায়গাটি ভ্রমণকারীদের কাছে খুবই পছন্দের। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তির জন্য আয়ুর্বেদিক অঙ্গসংবাহন করা হয়।

ভ্রমণের সময়- ২৪ ঘণ্টা।

উপরিউক্ত প্রতিটি জায়গার নিজস্ব একটি করে ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখান থেকে আপনি চাইলে অনায়াসে মশলা এবং আয়ুর্বেদিক ওষুধপত্র কিনতে পারবেন।

পরিশেষে বলা যায়, কেরালা বিশ্বের দরবারে মশলার এক অমূল্য ভান্ডার, যেখানকার মশলা অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর সুস্বাদু এবং মূল্যবানও বটে। তাই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মশলাপ্রেমী খাদ্যরসিক ব্যক্তিরা বারবার ছুটে আসেন কেরালায় এই সমস্ত মশলার স্বাদ গ্রহনের আশায়।

Photo of কেরালা কফির সঙ্গে সঙ্গে এবার পাবেন মশলার সুগন্ধ... by Deya Das

বিশেষ সতর্কীকরণ-

এই সমস্ত জায়গাগুলিতে ঘুরতে গেলে গাছ থেকে হঠাৎ করে কোন পাতা ছিঁড়ে তার ঘ্রাণ বা সেটি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করবেন না। এতে যে কোন বিপদ ঘটতে পারে। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারগুলি নজর রাখা আবশ্যিক। আর আপনার কোন শারীরিক সমস্যা থাকলে প্রথমে ডাক্তারের থেকে পরামর্শ নিয়ে তারপরই এই সমস্ত আয়ুর্বেদিক ওষুধগুলি সেবন করবেন।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।