উত্তর-পূর্ব ভারতে অনুষ্ঠিত বেশ কিছু উৎসবের মেজাজ একেবারেই অন্যরকম , করোনা পরিস্থিতিকে কাটিয়ে আপনার বাকেট লিস্টের নতুন সংযোজন হতে পারে অজানা-অদেখা এইসকল স্থানগুলিই, তাই অবশ্যই চোখ রাখুন এই তালিকাতে।
লোসার উৎসব, অরুণাচল প্রদেশ
লোসার উপত্যকার তাওয়াং-এর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল লোসার উৎসব। নববর্ষ উদযাপনের উৎসব হিসেবেই বিশেষ পরিচিত এই লোসার। তিব্বতি দুটি শব্দ ‘লো’, যার মানে 'বছর' আর অন্যদিকে ' সার' শব্দের অর্থ 'নতুন'... অর্থাৎ নতুনের আগমন এবং অশুভ শক্তির পরিত্রাণে এই উৎসবের যাবতীয় আয়োজন এমনটা বলা যেতে পারে।
প্রায় পনেরো দিন ব্যাপী এই পার্বণের প্রথম তিনটি দিন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। লোসারের প্রথম দিনে, স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করেন এবং ঘর সাজান আটটি মঙ্গলসূচক প্রতীক দিয়ে - যার মধ্যে থাকে একটি বহুমূল্য ছাতা, এক জোড়া সোনালি মাছ, একটি জয়ধ্বজা, শঙ্খ, পদ্মফুল, ধর্মচক্র, অলংকৃত সম্পদদানি আর শ্রীবৎস চিহ্ন - যাদের একসঙ্গে বলা হয় 'তাশি দাৰ্জি'।
গ্যালপো লোসার বা এই উৎসবের দ্বিতীয় দিন প্রধানত উৎসর্গ করা হয় রাজার প্রতি। দিনের বেলা লোকজন তাদের আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুবান্ধবদের বাড়ি যান এবং প্রচলিত রীতি অনুযায়ী মুখোশ পরে মনপা নাচে অংশগ্রহণ করেন। রাত্রিবেলায় আতশবাজি পুড়িয়ে অশুভ আত্মাদের বিদায় জানানো হয়।
লোসারের তৃতীয় দিনে স্থানীয়রা কাছাকাছি মঠ বা গুম্ফাতে যান এবং সেখানে প্রথা মেনে পুজো দেন, পতাকা উত্তোলন করেন। খাদ্য বা বস্ত্র বিতরণ এবং উপহার দেওয়াপ রীতিও এই উৎসবের অন্যতম প্রধান অঙ্গ।
লোসার উৎসবের সময়কাল: তিব্বতীয় লুনিসোলার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের প্রথম দিনে লোসার উদযাপন করা হয়। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সময়টা সাধারণত ফেব্রুয়ারী বা মার্চ মাস নাগাদ।
মাজুলি উৎসব, অসম
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে মাজুলি উৎসব নর্থ ইস্টের অন্যতম সুন্দর এবং মনমাতানো অনুষ্ঠান। লুইট নদীর তীরে গড়মুড়ে উদযাপিত ৪ দিন ব্যাপী এই উৎসব শুধুমাত্র মাজুলি এলাকার নব্য-বৈষ্ণবদের জন্যই নয়, এই উৎসব কিন্তু একাধারে সমগ্র আসামের-ই উৎসব।
একই মঞ্চে বিভিন্ন আসামি জাতি সম্প্রদায়ের লোকেদের একত্রিত হওয়া এবং তাদের ব্যক্তিগত সংস্কৃতিকে তুলে ধরা মাজুলি উৎসবের অন্যতম চিত্তাকর্ষক বিষয় । এই উৎসব চলাকালীন, একটি বড় প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। যেখানে আপনি দেখতে ও কিনতে পাবেন বিভিন্ন হস্তশিল্পের নিদর্শন - হ্যান্ডিক্রাফটস, আদিবাসী পোশাক, মৃৎশিল্প, বাঁশের তৈরি বস্তু প্রভৃতি।
মাজুলি উৎসবের সময়কাল: প্রতি বছর নভেম্বর মাসে মাজুলি উৎসব উদযাপিত হয়।
নংক্রেম নাচ উৎসব, মেঘালয়
প্রতিবছর "কা ব্লেই সিন্সার" নামক মাতৃরূপী সর্বশক্তিশালী দেবীকে তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, যাতে কৃষির ফলন ভাল হয় ও জনগণের সার্বিক উন্নতি বজায় থাকে।
নংক্রেম নাচ উৎসব মূলত খাসি জনগোষ্ঠীর নবান্ন উৎসব। ৫ দিন ব্যাপী এই পার্বণ শুধুমাত্র খাইরিম রাজ্য নয়, সমগ্র নর্থইস্ট ভারতবর্ষের অন্যতম উৎসব। খাসি জনজাতির লোকজন প্রতি বছর বিপুল উৎসাহে আর সমারোহে এই ধর্মীয় নৃত্যোৎসবটি পালন করেন। শিলং থেকে অনতিদূরে খাইরিম সিয়ামশিপ এর রাজধানী স্মিত-এ এটি পালন করা হয়। খাসি পর্বত এলাকায় এই পার্বণটির নাম 'সাদ নংক্রেম'। সাদ নংক্রেম-এর সাথে পাঁঠাবলির প্রচলন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, স্থানীয়দের ভাষায় যার নাম পমব্ল্যাং।
নংক্রেম উৎসবের সময়কাল: প্রতি বছর নভেম্বর মাসে নংক্রেম উৎসব উদযাপিত হয়।
অন্থুরিয়াম উৎসব, মিজোরাম
মিজোরামকে পর্যটকদের কাছে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে ও উত্তর পূর্ব ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে প্রায় ৩ দিন ব্যাপী এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। আইজ়ল থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে পর্বত কোলে বিছানো রেইক নামে পরিচিত এই গ্রামটিই প্রধানত এই উৎসবের কেন্দ্রস্থল।
নাচ, গান, হ্যান্ডলুম আর হ্যান্ডিক্রাফটসের প্রদর্শনী, আর সাংস্কৃতিক খেলাধুলা এই উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ট্রাডিশনাল পোশাক পরা, তিরন্দাজি, রাইফেল শুটিং আর মাছ ধরার প্রতিযোগিতাও ধুমধাম সহকারে পালন করা হয়।
রহস্যময়ী রেইক পাহাড়ের পটভূমিতে এই আনন্দোৎসব আপনার শরীর আর মন কে তরতাজা করে তুলতে বাধ্য।
অন্থুরিয়াম উৎসবের সময়কাল: সেপ্টেম্বর
আওলিং উৎসব, নাগাল্যান্ড
কন্যাক নাগা উপজাতির মানুষরা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বসন্তের আগমন সূচনা করেন আওলিং উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে।
নর্থ ইস্টের বিভিন্ন পালা পার্বণের মধ্যে আওলিং উৎসব অন্যতম। ৬ দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানের প্রথম দিনটিকে কন্যাক নববর্ষ বলে গণ্য করা হয়। এই উৎসব চলাকালীন এখানকার জনজাতির সদস্যরা পশুবলি, নাচগান, মহাভোজ আর গ্রামে গ্রামে স্বচ্ছতা অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।
আওলিং উৎসবের সময়কাল: এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ
খার্চি পূজা, ত্রিপুরা
ত্রিপুরার অন্যতম বিখ্যাত উৎসব খার্চি পূজোর সারমর্ম মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা। সাত দিন ধরে খার্চি পূজো চলাকালীন ত্রিপুরাবাসীরা নিয়ম নিষ্ঠা ভরে চোদ্দ জন দেবদেবীকে পুজোর অর্ঘ্য অর্পণ করেন।
পুরোনো আগরতলার চতুর্দশ মন্দিরে এই পূজো হয়। পূজোর তিথিতে শ্লোকজপ সমারোহে চতুর্দশ দেবতার বিগ্রহ গুলিকে সাইদ্রা নদীতে নিয়ে যাওয়া হয়। মূর্তিস্নান-এর পর তাদের কে সিঁদুর এবং বিভিন্ন ফুলমালা দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়।
খার্চি পূজার সময়কাল: জুলাই
চেইরাওবা, মনিপুর
মনিপুরী নববর্ষের আরেক নাম চেইরাওবা বা সাজিবু চেইরাওবা।
নববর্ষ উৎসব চলাকালীন বিভিন্ন স্পেশাল ডিশ তৈরি করা হয় ও দেবতাদের উৎসর্গ করা হয়। চেইরাওচিং পাহাড় চূড়ার শিখরে ওঠাও এই অনুষ্ঠানের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যেহেতু স্থানীয় বিশ্বাস অনুযায়ী উঁচু পাহাড়ে চড়াই এর মাঝেই আছে জাগতিক জীবনে উন্নতির শিখরে ওঠার প্রতীক।
চেইরাওবা উৎসবের সময়কাল: এপ্রিল
নর্থ-ইস্টের উৎসব আর পার্বণের কোন খামতি নেই, আসছে বছর আপনি কোথায় কোথায় যাচ্ছেন?
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন।
(এটি একটি অনুবাদকৃত/অনুলিখিত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)