এক মাস ধরে কোনওরকম খরচ না করে ঘুরে বেড়াতে পারবেন আপনিও। কীভাবে? 

Tripoto

অফিসে বসে বসে আপনার বসের উপর রাগ করে আর কতদিন চালাবেন। মাত্র একটি শহরেই বা কতদিন আটকে থাকবেন। তাই ফাইনাল এক্সাম দেওয়ার পরে, চাকরি ছেড়ে ঘুরে বেড়ানোই হয়ে উঠল আমার ধ্যান জ্ঞান। আমি প্রথমে একটি ট্রেনিং এর জন্যে আগ্রা যাই, কিন্তু সেখানে থেকে যাই অনেকদিন বেশি। উপলব্ধি করি যে আমি হয়তো ঘুরে বেড়াতেই চাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, চার দেওয়ালের ঘেরাটোপে আটকে না থেকে।

কিন্তু, তার আগে আমার সামনে ছিল বড়সড় এক প্রশ্নচিহ্ন। আমি ছিলাম সম্পূর্ণ কর্পদকশূন্য। ভাবছি কয়েক মাস ধরে ভারত ভ্রমণের কথা, কিন্তু ব্যাঙ্কে পরে আছে মাত্র কয়েক হাজার টাকা - যা দিয়ে হয়তো দু'বেলা টানা খাবার জোগাড় করাই মুশকিল হয়ে উঠবে। থাকার জায়গার ভাড়া, টিকিট, আর ভ্রমনসংলগ্ন অন্যান্য সব খরচের কথা না হয় বাদ দিলাম। তবুও আমি কিন্তু এগিয়ে গিয়েছিলাম।

যাত্রাপথ

আগ্রা - জয়পুর - পুষ্কর - যোধপুর - নিউ দিল্লি - দেওরিয়া তাল - চন্দ্রশীলা পিক - নিউ দিল্লি - গোয়া

যাত্রাসময়

তিন মাস : প্রথমে আমি শুধুই আগ্রা এবং রাজস্থানে যাবার কথা ভেবেছিলাম, কিন্তু আসতে আসতে আমি গোটা ব্যাপারটা আরও উপভোগ করতে শুরু করি এবং বিভিন্ন সুযোগ গ্রহণ করি। তাই আমার লিস্টে আসতে আসতে পাহাড় পর্বত , বিচ যোগ হয়। নভেম্বরে আগ্রা দিয়ে শুরু, নভেম্বরের শেষ থেকে মাঝ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজস্থান, ক্রিসমাসে চন্দ্রশীলা পিক আর সবশেষে জানুয়ারিতে গোয়াতে ট্রিপের শেষ।

খরচের হিসেব

আগ্রার হোস্টেলে থাকাকালীন আমার হোস্টরা তাজমহলের কাছে সূর্যাস্ত দেখার এক অসাধারণ সুন্দর স্পটের কথা জানতেন। তাঁরাই গেস্টদের নিয়ে যেতেন। কিন্তু দুর্ঘটনায় আমার হোস্ট আহত হলে, একদিন তিনি আমাকে বলেন নতুন কিছু গেস্টদের সেই জায়গা থেকে ঘুরিয়ে আনতে। আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই এবং বুঝতে পারি যে গল্প বলতে, নানান মানুষজনকে কোনও জায়গা ঘুরিয়ে দেখাতে আমার কতটা ভাল লাগে।

ওনারা নতুন একটি ক্যাফে খুলেছিলেন। তার বিভিন্ন আসবাবপত্র রং করতে আমি সাহায্য করি, ক্যাফের দেওয়ালে নানান আর্টওয়ার্ক আঁকি, অন্য গেস্টদের চেক-ইন করতে সাহায্য করি, বলা যায় হোস্টেল ম্যানেজারের কাজে বেশ হাত পাকিয়ে নি।

প্রতিদিন নতুন নতুন ট্র্যাভেলারদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে, তাদেরকে নানা ভাবে সাহায্য করতে পেরে আমি খুব খুশি হচ্ছিলাম, হস্পিটালিটি, টুরিং এবং নানা ধরণের মানুষের সম্পর্কে আমি জানতে পারছিলাম। আর সঙ্গে সঙ্গে আমি সারা শহর জুড়ে ঘুরতেও পারছিলাম এবং এর পুরোটাই বিনামূল্যে।

Photo of এক মাস ধরে কোনওরকম খরচ না করে ঘুরে বেড়াতে পারবেন আপনিও। কীভাবে?  1/2 by Aninda De
ট্যুরিস্টদের সঙ্গে বেশ ভাল একটা সময় কাটাতে পারেন (ছবি সংগৃহীত)

আমার আগ্রার হোস্টেলের অভিজ্ঞতা জানতে হলে এখানে ক্লিক করুন

এরপরে আমি রাজস্থানের বিভিন্ন হোস্টেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভলান্টিয়ার হিসাবে যোগ দিই, সঙ্গে সঙ্গে আমার লক্ষ্য ছিল রাজস্থানের ইতিহাস এবং সংস্কৃতিকে একেবারে সামনে থেকে দেখা। শুধুমাত্র একটি রুকস্যাকের উপর ভরসা করে রাজস্থান আর আগ্রাতে একমাস কাটিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আমি শুরুতে একটু চিন্তায় ছিলাম, কিন্তু ভাগ্যক্রমে ঘটনা মোড় নেয় অন্যদিকে।

Photo of এক মাস ধরে কোনওরকম খরচ না করে ঘুরে বেড়াতে পারবেন আপনিও। কীভাবে?  2/2 by Aninda De
এমন ছোট ছোট কাজেও আনন্দ পেতে পারেন (ছবি সংগৃহীত)

আমার রাজস্থানের হোস্টেলের অভিজ্ঞতা জানতে হলে এখানে ক্লিক করুন

আমার এক বন্ধু যে নিজে একটি ট্র্যাভেল কোম্পানি চালায়, ভারতবর্ষ জুড়ে নানা দিকে ট্রিপ অর্গানাইজ করে, এইসময় দিল্লিতে নিজের বাড়ি গিয়েছিল। ডিসেম্বর মাসে দেওরিয়া তাল এবং চন্দ্রশীলার দিকে তার বেশ কিছু ট্রিপ করার কথা ছিল এবং হঠাৎ করেই তার থেকে জানতে পারি যে ক্রিসমাসের সময় এই ট্রিপগুলো ম্যানেজ করার জন্যে তার কারও সাহায্যের প্রয়োজন।

আমি নিজের ক্যালেন্ডার দেখে বুঝলাম যে রাজস্থানের ইতিহাসের হাতছানির ফাঁকে যে অল্প কিছু সময় আছে, তার মাঝে আমি চন্দ্রশীলা ট্রেকটি পুরোটাই করে নিতে পারব।

মানে, চন্দ্রশীলা তে ক্যাম্পিং = একদম নিখরচায়!

আর জয়পুরের রোডহাউস হোস্টেলে কাজ করার সময় জানতে পারি যে ডিসেম্বর এবং জানুয়ারিতে তাদের গোয়া হোস্টেলের দেখভাল করার লোক প্রয়োজন। আর তাই এভাবে জানুয়ারিতেও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গোয়ার বিচে আলোছায়ায় ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে যাই আমি।

বিভিন্ন সমস্যা

বিভিন্ন হোস্টেলগুলো থেকে আমি থাকা খাওয়ার ব্যাপারটা সামলে নিলেও, এই জায়গাগুলোতে যাওয়া আসার জন্য কিন্তু টিকিট খরচা কিন্তু আমাকেই করতে হচ্ছিল। আর বেড়াতে যাওয়ার সময় এটা ওটা নানারকম খরচ হয়, যা আমাকেই দেখতে হচ্ছিল। এছাড়াও, অনেকদিন ধরে ট্র্যাভেল করলে হাতে কিছু টাকা জমানো থাকা দরকার, কোনও ইমার্জেন্সিতে প্রয়োজন হতে পারে।

এই কারণে আমি বেশ কিছু ট্র্যাভেল মিডিয়া কোম্পানি এবং ওয়েবসাইটের সঙ্গে লেখালিখি এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজে যুক্ত হই, যাতে নিয়মিত কিছু টাকা আসতে থাকে। আমি আমার অভিভাবকদের কাছ থেকে কোনও টাকা নিতে চাইনি।

পিঠে ব্যাকপ্যাক আর হাতে গুগল ম্যাপ খুলে দুনিয়া দেখার অ্যাডভেঞ্চার দূর থেকে দেখতে বেশ ভাল লাগলেও, কোনও স্থায়ী বাসস্থান না থেকে এভাবে তিন মাস ঘুরে বেড়ানো একেবারেই সোজা নয়। আর আপনি যদি মহিলা হন, তাহলে কিন্তু আরও কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।

আমার ডৰ্মের বিভিন্ন মহিলাদের থেকে কিন্তু আমি নানান ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথাও কিন্তু শুনেছি, রাস্তায় মানুষজন তাদের পিছু নিয়েছে বা স্পর্শ করেছে বা বিভিন্ন উলটো পালটা জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। মহিলাদের সঙ্গে হওয়া নানা আশঙ্কাজনক ঘটনার কথা শুনে মানসিক চাপে আমার বেশ কিছুবার মনে হয়েছে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা।

আবার অনেকসময় রাতের বেলা একলা শুয়ে শুয়ে আমি আমার বন্ধুদের বা কারও সঙ্গে আমার দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা শেয়ার করার মতো লোকের অভাব বোধ করেছি। কী খেলাম, কী দেখলাম, কীভাবে আমার পায়ে ব্যাথা লাগল, এসব শোনার জন্যে পাশে কেউ ছিল না, হোস্টেলের ছোট্ট কুকুরছানাটি বাদে। সেই ছিল আমার খেলাধুলার সাথী।

তবে দিনের শেষে রোজ-ই আমার কাছে হয়ে উঠেছে নতুন অভিজ্ঞতা। অচেনা বিয়েবাড়িতে খেয়ে এসেছি, অজানা বরযাত্রীদের সঙ্গে নেচে এসেছি সারারাত, নতুন বন্ধু পেয়েছি, তাদের জীবন, তাদের পৃথিবীর কথা জানতে পেরেছি। এই অভিজ্ঞতাগুলো শুধুমাত্র শিক্ষামূলক হয়ে থেমে থাকেনি, আমি প্রতিটি দিনকে ভালোবেসেছি। তাই প্রতি মুহূর্তে আমি এভাবেই থাকতে চাই, অন্য কোথাও, অন্য কোনওভাবে নয়।

এই লেখাটা যখন শেষ করছি, তখন ভাবছি আগামিকাল আলসিসারের ম্যাগনেটিক ফিল্ড ফেস্টিভ্যালে যাওয়ার কথা - আমার এই যাত্রাটা এতটাই ঘটনাবহুল, নিত্যনতুন। মরুভূমি থেকে, সমুদ্র থেকে, পাহাড় থেকে আবার নতুন নতুন গল্প আমি নিয়ে আসব... ততদিন, বন্ধু, ভাল থাকবেন।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।

(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)