খাদ্যসংস্কৃতির সঙ্গে শিল্পসংস্কৃতির মিশেলে মেদিনীপুরের সনাতন শিল্পশৈলী: গয়না বড়ি

Tripoto
Photo of খাদ্যসংস্কৃতির সঙ্গে শিল্পসংস্কৃতির মিশেলে মেদিনীপুরের সনাতন শিল্পশৈলী: গয়না বড়ি 1/1 by Never ending footsteps
গয়না বড়ির বিভিন্ন নকশা (ছবি সংগৃহীত)

বঙ্গ সংস্কৃতি ধারার সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির খাদ্য সংস্কৃতির একধরনের চিরন্তন সূত্র। বাঙালি বরাবরই খাবারের বিভিন্ন পদকে নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার খাদ্যসংস্কৃতির ধারায় লক্ষ করা গিয়েছে একধরনের মেলবন্ধন। রান্নার মশলা থেকে শুরু করে অন্যান্য ছোট ছোট নানা বিষয়েই খাদ্য সংস্কৃতির পরম্পরা বিশেষভাবে চোখে পড়ে। বিভিন্ন তরকারিতে ডালের বড়ি ব্যবহারের পদ্ধতি বেশ পুরনো। কখনও সখনও গরম ভাতে ভাজা বড়ি, ঘি দিয়ে মেখে খাওয়ারও চল রয়েছে। তবে বাঙালির রন্ধনশৈলীর অভিনবত্ব চোখে পড়ে গয়না বড়ি তৈরির ক্ষেত্রে।

পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একটি জনপ্রিয় খাদ্য হল গয়না বড়ি। বিউলির ডাল, পোস্ত এবং বিভিন্ন রকমের মশলার সংমিশ্রণে এই বড়ি প্রস্তুত করা হয়। গয়না বড়ি আবার নকশা বড়ি নামেও সুপরিচিত। অনেক সময়ে একে কুমড়ো বড়িও বলা হয়ে থাকে। বহু পুরনো এই কুটির শিল্পের সঙ্গে মেদিনীপুর এবং তাঁর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষজন জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

গয়না বড়ির ইতিহাস

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন বাড়িতে গয়না বড়ি তৈরির রীতি অত্যন্ত প্রাচীন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বড়ি প্রস্তুতের ক্ষেত্রেও এসেছে নানা পরিবর্তন। আগে বড়িতে পোস্ত ব্যবহারের চল সেভাবে চোখে পড়ত না। ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকে গয়না বড়ির মশলার তালিকাতে পোস্তও সংযোজিত হয়। ব্রিটিশদের শাসনকালে বাংলার রাঢ় অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে পোস্ত উৎপাদন হতে শুরু করে এবং সেই থেকে প্রস্তুত আফিম চিনে রফতানির ব্যবস্থা করা হয়। এই থেকেই পোস্ত দানার সঙ্গে বাংলার সাক্ষাৎ হয় এবং বিভিন্ন উপাদান ব্যবহারের পাশাপাশি রান্নাতেও পোস্ত ব্যবহৃত হতে শুরু করে। অনেক সময়ে পোস্তর বদলে তিলও ব্যবহার করা হয় বড়ি প্রস্তুতের ক্ষেত্রে।

গয়না বড়ি যে আদতে খাদ্যসংস্কৃতির পাশাপাশি শিল্পসংস্কৃতির ধারায় এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে সে কথা বলা বাহুল্য। এই প্রসঙ্গে একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করতে পারি। ১৯৩০ সালে সেবা মাইতি নামে শান্তিনিকেতনের এক ছাত্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তার মা হিরন্ময়ী দেবী ও ঠাকুমা শরতকুমারী দেবীর তৈরী গয়না বড়ি উপহার দেন। রবীন্দ্রনাথ গয়না বড়ির শিল্পকলা দেখে এতটাই আকৃষ্ট হন যে তিনি গহনা বড়িগুলির আলোকচিত্র শান্তিনিকতনের কলা ভবনে সংরক্ষণ করার অনুমতি চেয়ে হিরণ্ময়ী দেবী ও শরতকুমারী দেবীকে চিঠি লেখেন। অন্যদিকে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরও গয়না বড়িকে শিল্প সংস্কৃতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি মনে করতেন গয়না বড়ির আদতে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। রান্না করলে তাকে একপ্রকার নষ্ট করা হয়। গয়না বড়িকে নিয়ে বিভিন্ন প্রদর্শনী করাটা প্রয়োজন। নন্দলাল বসু গয়না বড়িকে বাঙালি মায়ের গয়না বাক্সের লুকনো এক রত্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

গয়না বড়ি দিচ্ছেন হিরণ্ময়ী দেবী

Photo of খাদ্যসংস্কৃতির সঙ্গে শিল্পসংস্কৃতির মিশেলে মেদিনীপুরের সনাতন শিল্পশৈলী: গয়না বড়ি by Never ending footsteps

বিভিন্ন রকমের গয়না বড়ি

এই প্রসঙ্গে একটা বিষয় অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় গয়না বড়ি তৈরির ক্ষেত্রে কোনও রকম মডেল বা স্কেচ ব্যবহার করা হয় না। পারিবারিক ঐতিহ্যকে ব্যবহার করা হয় এক্ষেত্রে। গয়না বড়ি বৃত্ত, উপবৃত্ত, এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে বর্গাকারও হয়ে থাকে। বিভিন্ন গয়নার প্রভাব থাকে এই বড়ি প্রস্তুতের ক্ষেত্রে। মুকুট, টায়রা, বাজুবন্ধ, লকেট, কানপাশা, মাকড়ি ইত্যাদি নকশার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জ্যামিতিক নকশার পাশাপাশি নানা ধরনের প্রাকৃতিক বস্তুরও নকশা ফুটে ওঠে এর মধ্যে।

গয়না বড়ি কোথায় দেখতে পাবেন

একটা সময়ে মেদিনীপুরের কাঁথি, তমলুক অঞ্চলের নির্দিষ্ট বনেদি কয়েকটি পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল গয়না বড়ির প্রসিদ্ধি। তবে এখন বাণিজ্যকরণের ফলে এখন অনেক ক্ষেত্রেই এই বড়ি প্রস্তুতের চল বিশেষভাবে চোখে পড়ে।

(খাবারের রকমারি স্বাদ যাঁরা পছন্দ করেন তাঁরা অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন এই জায়গাগুলো থেকে)

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।