আক্ষরিক অর্থেই এখানে যেন ধুয়ে যাবে সব পাপ পুণ্যের হিসেব। কারণ গুজরাটের ভাবনগরের নিষ্কলঙ্ক মহাদেব মন্দির কিন্তু জোয়ারের সময় থাকে জলের তলায় নিমজ্জিত, আবার ভাটার সময় যেন সম্পূর্ণ মন্দিরটি সমুদ্রস্নান করে উঠে আসে জনসমক্ষে।
নিষ্কলঙ্ক মহাদেব মন্দিরের বৈশিষ্ট্য
আরব সাগরের তিরে কোলিয়াক গ্রামের সমুদ্রতট থেকে মন্দিরটির অবস্থান প্রায় ১.৫ থেকে ২ কিমি সমুদ্রের ভিতরে। একমাত্র ভাটার সময়েই জল নেমে গেল দর্শনার্থীদের পক্ষে এখানকার শিবলিঙ্গের দর্শন পাওয়া সম্ভব হয়। আর জোয়ারের সময় দূর থেকে শুধু দেখতে পাওয়া যায় জলস্তরের উপরে মন্দিরের ভাসমান পতাকাটি। পূর্ণিমা এবং অমাবস্যার রাতে জোয়ার ভাটার খেলায় আরও স্পষ্ট ভাবে অনুভব করা যায় মন্দিরটির এভাবে জলের আড়ালে হারিয়ে যাওয়া এবং তারপর আবার ভক্তদের কাছে ফিরে আসার। তাই মাসে এই কয়েক দিন দর্শনার্থীরা বেশি করে ভিড় করেন নিষ্কলঙ্ক মহাদেব মন্দিরের প্রাঙ্গনে।
নিষ্কলঙ্ক মহাদেব মন্দিরের পৌরাণিক কাহিনি
পৌরাণিক মতে কথিত আছে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর এই মন্দিরটির নির্মাণ হয় পাণ্ডবদের দ্বারা... কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে কৌরবদের পরাজিত করার পর পঞ্চপাণ্ডব তাঁদের কৃত হত্যাকাণ্ডের কারণে অনুতপ্ত হন এবং পরিবার ও বন্ধু হত্যার দায় থেকে মুক্তি পেতে শ্রীকৃষ্ণের শরণাপন্ন হন। শ্রীকৃষ্ণ তাঁদেরকে একটি কালো পতাকা এবং একটি কালো গাভী প্রদান করেন এবং বলেন পতাকা নিয়ে গাভীটিকে অনুসরণ করতে। যে মুহূর্তে পতাকা ও গাভীটি কালো রঙের বদলে সাদা রঙে রূপান্তরিত হবে, সেই মুহূর্তে পাণ্ডবদের প্রায়শ্চিত্ত সম্পূর্ণ হবে।
বহু বছর ধরে গাভীটিকে অনুসরণ করার পরে অবশেষে কলিয়াক গ্রামের সমুদ্রপ্রান্তে দেখা যায় যে পতাকা এবং গাভী, উভয়েই শ্বেতবর্ণ ধারণ করেছে। কালবিলম্ব না করে পাণ্ডবরা এই স্থানেই মহাদেবের পূজা শুরু করেন এবং তাঁদের কৃতকর্মের জন্যে ক্ষমা চান।
কথিত আছে পাণ্ডবদের নিষ্ঠায় সন্তুষ্ট হয়ে মহাদেব দেখা দেন এবং তাঁর মহিমার ফলে মন্দির প্রাঙ্গনে ৫টি শিবলিঙ্গের আবির্ভাব হয়, যা আজও দৃশ্যমান। পাণ্ডবরা ওই পাঁচটি লিঙ্গ কেন্দ্র করে ওই স্থানেই মন্দিরটির স্থাপনা করেন এক অমাবস্যার রাতে। মন্দিরের নামকরণ হয় নিষ্কলঙ্ক মহাদেব মন্দির। রূপকার্থে এবং অক্ষরিকভাবে, সকল পাপ সমুদ্রের জলে বিসর্জন দিয়ে কলঙ্কমুক্ত হওয়ার উপায় এই মন্দিরের দর্শন করে পুজো দেওয়ার মধ্যে।
নিষকলঙ্ক মন্দিরে কখন যাবেন : মন্দির প্রতিদিন খোলা থাকলেও, প্রতিদিন মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্যেই দর্শন সম্ভব। পূর্ণিমা এবং অমবস্যার দিনে মন্দির দর্শনের পক্ষে শুভ।