পৌরাণিক কাহিনি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সম্মিলিত নিদর্শন অরুণাচল প্রদেশের পরশুরাম কুণ্ড...

Tripoto
Photo of পৌরাণিক কাহিনি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সম্মিলিত নিদর্শন অরুণাচল প্রদেশের পরশুরাম কুণ্ড... 1/1 by Surjatapa Adak
নিখাদ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পরশুরাম কুণ্ড (ছবি সংগৃহীত)

সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে বেশ অনেকগুলি হিন্দু ধর্মস্থান রয়েছে । তবে উদিত সূর্যের দেশ অরুণাচল প্রদেশের পরশুরাম কুন্ডটি অনেকের কাছেই অজানা । আমরা প্রত্যেকেই অরুণাচল প্রদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্পর্কে অবহিত, তবে এই রাজ্যের ইতিহাসটাও কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ । অত্যাশ্চর্য ফোর্ট থেকে মনেস্ট্রি কিংবা প্রাচীন মন্দির থেকে সুসজ্জিত পার্বত্য অঞ্চল সমস্ত কিছুই একই রাজ্যে অবস্থিত ।

কথিত আছে একদা বিখ্যাত মুনিঋষি এবং হিন্দু দেবতারা এই অঞ্চলেই বসবাস করতেন । সুতরাং, ভ্রমণকালে আপনি অরুণাচল প্রদেশে অনেক গুলি ধর্মস্থানের সন্ধান পেতে পারেন । স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস এই পরশুরাম কুণ্ডটি প্রায় কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন । তাই নিঃসন্দেহে এই স্থানটি আপনার ভ্রমণ তালিকায় শ্রেষ্ঠত্বের জায়গা করে নিতে পারে।

অবস্থান -

পরশুরাম কুণ্ডটি ব্রহ্মপুত্র মালভূমি অঞ্চলের লোহিত নদীর সন্নিকটে এবং অরুণাচল প্রদেশের লোহিত জেলার তাজু অঞ্চলের উত্তরে অবস্থিত। ভারতের আসাম এবং মণিপুর রাজ্যের কাছে এই স্থানটি বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও প্রতিবেশী দেশ নেপাল থেকেও পরশুরাম কুণ্ড দর্শনের জন্য তীর্থযাত্রীদের আগমন ঘটে ।

পরশুরাম কুণ্ডের পৌরাণিক কাহিনি -

মিথ-পুরাণের কাহিনি

Photo of Parsuram Kund, Arunachal Pradesh, India by Surjatapa Adak

পুরাকথা অনুসারে পরশুরাম হলেন ভগবান বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার । একদা পরশুরামের পিতা ঋষি জামাদাগ্নি তার মাতাকে হত্যার নির্দেশ দেন । পিতার আদেশ রক্ষার্থে, পরশুরাম একটি কুঠারের দ্বারা তাঁর মা রেণুকার শিরচ্ছেদ করেন । যেহেতু তিনি একটি জঘন্য অপরাধে অভিযুক্ত, সেই কারণেই কুঠার থেকে পরশুরাম নিষ্কৃতি পান না; কুঠারটি তার হাতেই আবদ্ধ থাকে ।

পিতা জামাদাগ্নি তাঁর পুত্রের আনুগত্যে মুগ্ধ হন এবং পুরস্কার স্বরূপ পরশুরামের ইচ্ছানুযায়ী বর দেন । বর হিসেবে পরশুরাম তাঁর মায়ের জীবন ফিরে পেতে চেয়েছিলেন । কিন্তু পরশুরামের মা রেণুকা জীবন ফিরে পেলেও, পরশুরাম কুঠার থেকে মুক্তি পান না । মাকে হত্যার মতোর ভয়ংকর অপরাধ পরশুরামকে তাড়া করে বেড়ায়।

ছবি সংগৃহীত

Photo of পৌরাণিক কাহিনি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সম্মিলিত নিদর্শন অরুণাচল প্রদেশের পরশুরাম কুণ্ড... by Surjatapa Adak

অনুশোচনার তাড়নায় মুক্তি পেতে ঋষিগণের উপদেশ অনুযায়ী তিনি পবিত্র লোহিত নদীতে নিজের হাত শুদ্ধ করেন । যখনই তিনি এই পবিত্র নদীর জলে নিজের হাত নিমজ্জিত করলেন, তৎক্ষণাৎ তাঁর হাত থেকে কুঠারটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তিনি পাপ থেকে মুক্তি পান । পরবর্তী কালে, এই স্থানটি সাধুদের আরাধনা করার প্রধান স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয় এবং পরশুরাম কুণ্ড হিসেবে পরিচিতি পায় ।

কুণ্ডের ধর্মীয় তাৎপর্য -

ছবি সংগৃহীত

Photo of পৌরাণিক কাহিনি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সম্মিলিত নিদর্শন অরুণাচল প্রদেশের পরশুরাম কুণ্ড... by Surjatapa Adak

বর্তমানে হাজার হাজার দর্শণার্থী এবং সাধু - সন্তদের কাছে পরশুরাম কুণ্ডটি প্রধান তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে । ধর্মপ্রাণ মানুষদের বিশ্বাস, এই কুণ্ডে স্নান করার পর সমস্ত রকম পাপ থেকে সহজেই নিষ্কৃতি পাওয়া যায় । বিশেষত জানুয়ারি মাসে মকর সংক্রান্তির দিনে এই কুণ্ডে স্নান করা খুবই পুণ্যের বলে মনে করা হয় ।

ইতিহাস সংক্রান্ত তথ্য -

অসাধারণ সৌন্দর্যে ঘেরা পরিবেশ (ছবি সংগৃহীত)

Photo of পৌরাণিক কাহিনি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সম্মিলিত নিদর্শন অরুণাচল প্রদেশের পরশুরাম কুণ্ড... by Surjatapa Adak

পুরাণে বর্ণিত এই পরশুরাম কুণ্ডটি একজন সাধু নির্মাণ করেন । তবে ১৯৫০ সালে আসামের ভূমিকম্পে ভারতের উত্তর -পূর্ব অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্থ হয়, সেই সঙ্গে এই কুণ্ডটিও মাটির নিচে ঢাকা পড়ে যায় । কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল, বড়ো বড়ো পাথরে ঢাকা এই স্থান থেকেই কিছু দিন পর কুণ্ডের প্রবাহমানতা লক্ষ করা যায় । বর্তমান দিনেও, এই কুণ্ডটি বেশ গভীর, জলমগ্ন এবং খরস্রোতা । পুনরায় এই কুণ্ডের প্রবাহমানতার ঘটনা সত্যি সত্যিই রহস্যের সঞ্চার করে ।

কী কী করবেন?

ছবি সংগৃহীত

Photo of পৌরাণিক কাহিনি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সম্মিলিত নিদর্শন অরুণাচল প্রদেশের পরশুরাম কুণ্ড... by Surjatapa Adak

১.সবুজ পাহাড়ে মোড়া পবিত্র কুন্ড দর্শন করে, পৌরাণিক ঘটনার সাক্ষী থাকতে পারেন ।

২. ট্রেকিং, বোটিং, ক্যাম্পিং করে নতুন অ্যাডভেঞ্চার খুঁজে পেতে পারেন ।

৩.প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন ।

৪. ২য় শতকে নির্মিত পরশুরামেশ্বরা মন্দির দর্শন করে প্রাচীন ইতিহাসের স্মৃতিরোমন্থন করে নিন ।

ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় -

বছরের যে কোনও সময় পরশুরাম কুণ্ড ভ্রমণ করা যায় । তবে তীর্থযাত্রার পাশাপাশি আপনি যদি প্রকৃতির কোমলতা এবং মাধুর্য্যকে উপলব্ধি করতে চান তাহলে অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময়টিকে বেছে নিতে পারেন ।

কীভাবে যাবেন?

বিমানে -

কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বিমানে চেপে পৌঁছে যান ডিব্রুগড় বিমানবন্দর । সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ২০০কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান গন্তব্যে ।

ট্রেনে -

হাওড়া থেকে কামরূপ এক্সপ্রেস চেপে পৌঁছে যান তিনসুকিয়া স্টেশন । স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে বা বাসে চেপে ১৬০ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান পরশুরাম কুণ্ড।

পুরাকথা বিজড়িত এই ঐতিহাসিক স্থানটির ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কতটা রোমাঞ্চকর হল আমাদের লিখে জানাতে কিন্তু অবশ্যই ভুলবেন না ।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।