আগরতলা থেকে ১৭৮ কিলোমিটার দূরে এবং কৈলাসহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে রঘুনন্দন পাহাড়ে ঊনকোটি অবস্থিত, যা ত্রিপুরার অন্যতম শিবতীর্থ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বাংলায় ঊনকোটি শব্দের অর্থ হল এক কোটি থেকে একটি কম। ঐতিহাসিকদের মতে প্রায় অষ্টম বা নবম শতাব্দীতে ঊনকোটির অভিনব ভাস্কর্য তৈরি হয়, যা আজও পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলেছে। প্রতিবছর শিবরাত্রি, মকর সংক্রান্তি এবং অশোকষষ্ঠীতে ঊনকোটিতে একটি বিখ্যাত মেলার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতেও মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়।
নামকরণের ইতিহাস
হিন্দু পুরাণে কথিত আছে, কালু কামার নামে একজন স্থাপত্যকলার দেবী পার্বতীর ভক্ত ছিলেন। একবার দেবী পার্বতী মহাদেবের সঙ্গে কৈলাসে যাওয়ার সময় কালু কামার বায়না ধরে তাদের সঙ্গে যাবেন। কিন্তু দেবাদিদেব মহাদেব কালুকে একটি শর্ত দেন। তিনি যদি এক রাতের মধ্যে এক কোটি দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করতে পারেন তবেই তাকে সঙ্গে নেবেন। কালু কামার এক রাতের মধ্যে এক কোটি থেকে একটি কম ঊনকোটি মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন। আর সেই থেকেই জায়গাটির নাম হয় ঊনকোটি।
আবার অন্যদিকে বলা হয়, দেবাদিদেব মহাদেব একবার ত্রিপুরার উপর দিয়ে বেনারস যাচ্ছিলেন। মহাদেব এবং সমস্ত দেবতাদের ধরে সংখ্যা হয়েছিল এক কোটি। যাত্রাপথে সন্ধে নামলে রাত্রিবাসের জন্য তারা রঘুনন্দন পাহাড়ে থেকে যায়। পথ পরিশ্রমে দেহের ক্লান্তিতে দেবতারা অচেতন হয়ে গভীর ঘুমে ঢলে পরেন। তারপর দিন সূর্যোদয়ের পর বেনারসের উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে দেখা যায় মহাদেব ছাড়া আর কোন দেবতার নিদ্রাভঙ্গ হয় না। তাই মহাদেব কিছুটা বিরক্ত হয়ে বেনারসের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং বাকি দেবতারা গভীর নিদ্রায় চিরকাল পাথর হয়ে সমাধিস্থ হয়ে থাকেন। এই সমস্ত দেবতা সংখ্যা ছিল ঊনকোটি। আর তারপর থেকেই রঘুনন্দন পাহাড় হয়ে গেল শিবতীর্থ ঊনকোটি।
আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু
রঘুনন্দন পাহাড়ের গায়ে যে মূর্তিগুলি খোদাই করা রয়েছে তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল জটাধারী শিব এবং ৩০ ফুট উঁচু কাল ভৈরবের মূর্তি। এছাড়াও রয়েছে গণেশ দুর্গা বিষ্ণুরাম রাবণ হনুমান নন্দীর মূর্তি। গণেশকুণ্ড ঊনকোটির একটি প্রধান আকর্ষণ। এই গণেশ কুণ্ডর পাথরের দেওয়ালে রয়েছে তিনটি গণেশ মূর্তি এবং ডানপাশে রয়েছে চতুর্ভুজ বিষ্ণুমূর্তি।
আশেপাশে ভ্রমণের স্থান
• উদয়ন বৌদ্ধবিহার
• চতুর্দশ দেবতার মন্দির
• ভবতারিণী মন্দির কুমারঘাট
• ১৭ মিয়ার হাওর
• মা ভবতারিণী মন্দির কালীশাসন
• লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির
কোথায় থাকবেন
• ঊনকোটি টুরিস্ট লজ
• সুইস ভ্যালি রিসর্ট
• গ্রিনলিফ গেস্ট হাউস
• লাওয়াচারা ইকো কটেজ
পথ নির্দেশনা
• আগরতলা থেকে কৈলাসহর পর্যন্ত বাসে বা প্রাইভেট ছোট গাড়িতে যাওয়া যায়। তবে এছাড়াও ত্রিপুরার পর্যটন কেন্দ্র থেকে সরাসরি বাসের পরিষেবা দেওয়া হয়।
• রেলপথে গেলে কুমারঘাট ও ধর্মনগরের নামতে হবে তারপর সড়কপথে গাড়ি করে যেতে হবে।
• কৈলাশ শহরে ছোট্টো একটি বিমানবন্দর থাকলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে তা বন্ধ রয়েছে।