প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আকাশের দিকে তাকালে যেন মনে হচ্ছে মায়ের আগমন কাল যেন এগিয়ে আসছে। আর সঙ্গে নিয়ে আসছে কিছুদিনের জন্য কাজের বিরতি। পুজোয় সবার জন্য কেনাকাটা করার পর আপামর বাঙালির পকেটে কিন্তু একটু টান ধরে। দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও এই মুহূর্তে আর্থিক অনটনে থাকায় তা আর সম্ভব হয় না। তবুও কাছাকাছি নিজের ছোট্ট বাজেটের ( মোটামুটি পাঁচ হাজার টাকা) মধ্যেই কিন্তু পুজোর ক'দিন ঘুরে আসা যায়। কোথায় কোথায় যাবেন? সেই কথাই আজ আমরা বলে দেব।
১. বকখালি
কলকাতা থেকে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ আপনি অনায়াসে গাড়িতে চলে যেতে পারবেন। এটি দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম একটি বদ্বীপ অঞ্চল। বঙ্গোপসাগরের উপর গড়ে ওঠা এই দক্ষিণমুখী অর্ধচন্দ্রাকৃতির সমুদ্র সৈকতটি পৃথিবীর বিরলতম অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি, যেখানে সূর্যোদয়- সূর্যাস্তের এক চমৎকার দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। মন ভাল করতে তিন-চারদিন বকখালি ঘুরে যেতে পারেন।
কোথায় কোথায় ঘুরবেন-
• বকখালি সমুদ্র সৈকত
• হেনরিস আইল্যান্ড
• জাম্বুদ্বীপ
• ফ্রাসেরগঞ্জ ওয়ার্ল্ড পার্ক
• বিশ্বলক্ষ্মী মন্দির
• ক্রোকোডাইল ব্রিডিং সেন্টার
কোথায় থাকবেন-
মৌসুনি দ্যা ডলফিন ক্যাম্প, মৌসুনি মুক্তা বিলাস ক্যাম্প, ননগড় ক্যাম্প, লাহিড়ী নিবাস বাংলো প্রভৃতি জায়গায় আপনি থাকতে পারেন।
২. রায়চক
হঠাৎ করে গঙ্গা দেখতে মন করলে বা গঙ্গার পাড়ে বসে এক কাপ চায়ের আনন্দ উপভোগ করতে চাইলে আপনি অনায়াসে রায়চক চলে আসতে পারেন। কলকাতা থেকে রায়চকের দূরত্ব মাত্র ৫৪ কিলোমিটার।
কী কী দেখবেন-
• রায়চক ফোর্ট
• ডায়মন্ড হারবার
• চিংড়িকালী ফোর্ট
• ডায়মন্ড হারবারের লাইট হাউস
• রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম
• জয়নগর
• গাড়িয়ারা
• হুগলি নদী
কোথায় থাকবেন-
গঙ্গা কুটির, রায়চক ফোর্ট, গার্ডেনিয়া ২৯, নিজস্ব বাংলো, তরুছায়া ইত্যাদি।
৩. তালসারি
দীঘা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে উড়িষ্যার বালেশ্বরে অবস্থিত তালসারি সমুদ্র সৈকতটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর। তাল গাছ, নারকেল গাছ ও কাজু গাছের দ্বারা বালুকাময় সমুদ্রতটে প্রতিদিন লাল কাঁকড়ার মেলা বসে।
পড়ন্ত বিকালে জোয়ারের সময় সমুদ্রের পাড় ধরে হাঁটার সময় হয়তো আপনাকে বিভিন্ন রকম জলজ প্রাণী স্পর্শ করবে। তালসারিতে অবস্থিত সুবর্ণরেখা নদী বঙ্গোপসাগরে মিশেছে।
কোথায় থাকবেন-
নিউ দীঘা, ওল্ড দিঘার যে কোন হোটেলে থাকতে পারেন। ৫০০০ টাকায় তিন দিন অনায়াসে কাটিয়ে আসতে পারবেন।
৪. টাকি
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাসনাবাদ পুলিশ স্টেশনের বসিরহাট সাব ডিভিশনের অন্তর্গত টাকি শহরটির এক অদ্ভুত সৌন্দর্য রয়েছে। অশান্ত মনকে শান্ত করতে এবং জীবনে কিছুটা সময় নিজের সাথে কাটাতে আপনি টাকিতে চলে আসতে পারেন। শীতল হাওয়ায় পরিপূর্ণ এই জায়গাটি ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য রোমাঞ্চ সৃষ্টি করে। কলকাতা থেকে টাকির দূরত্ব ৬৭ কিলোমিটার।
কোথায় কোথায় ঘুরবেন-
• টাকি ইকো পার্ক
• গোলপাতা ফরেস্ট
• পুবের বাড়ি
• টাকি রাজবাড়ি
• মিনি সুন্দরবন
থাকবার জায়গা-
হোটেল সোনার বাংলা, টাকি গেস্ট হাউস, আম্রপালি গেস্ট হাউস, টাকি উৎসব বাগানবাড়ি ইত্যাদি।
৫. বক্রেশ্বর
আপনি যদি আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী হন তাহলে বক্রেশ্বর আপনার জন্য একদম সঠিক জায়গা। পুরাণে উল্লিখিত বহু প্রাচীন মন্দির এখানে গড়ে উঠেছে, যেগুলির সম্পর্কে জানলে আপনার শরীরে শিহরণ জাগবে। ছাড়াও এখানে একটি উষ্ণ প্রস্রবণ রয়েছে। কলকাতা থেকে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার দূরে বক্রেশ্বর অবস্থিত।
কী কী দেখবেন
• মহিষমর্দিনী মন্দির
• বক্রেশ্বর মন্দির
• উষ্ণ প্রস্রবণ
কোথায় থাকবেন-
বক্রেশ্বরে থাকার জন্য গেস্ট হাউজ এবং হোটেল রয়েছে।
৬. তাজপুর
কলকাতা থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের তীরে মন্দারমনি ও শংকরপুরের মাঝে একটি ছোট্ট শহর হল তাজপুর। শহরের কর্মব্যস্ত জীবন থেকে ২/১ দিনের ছুটি পেতে ইউক্যালিপটাস, তামারিস্ক এবং ক্যাসুয়ারিনা গাছের এই নির্জন সমুদ্র সৈকতে চলে আসুন নির্জনতা উপভোগ করতে।
কী কী করবেন-
তাজপুর সমুদ্র সৈকতে বিভিন্ন রকম অ্যাডভেঞ্চারাস স্পোর্টস, মাছ ধরার আনন্দ, মৎস্য চাষ, মৎস্যচাষীদের গ্রাম, নেচার ক্যাম্প ইত্যাদির আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন-
পূর্ণি হোটেল এন্ড রিসোর্ট, তাজভিলা রিসোর্ট, লা মেকাও রিসোর্ট, তাজপুর রেসিডেন্সি ইত্যাদি।
তাহলে আর দেরি না করে কোথায় যাবেন সেই বিষয়ে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঝটপট প্ল্যানটা সেরে ফেলুন।