হাম্পি থেকে নজর সরিয়ে চলুন একবার ঘুরে আসা যাক অসমের এইসব ধ্বংসস্তূপগুলো থেকে

Tripoto

সাধারণ সমুদ্র সৈকত ও পাহাড়ের হাতছানির পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী পর্যটনস্থানগুলো এখন টুরিস্টদের কাছে বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ইয়াং জেনেরেশনের কাছে অবশ্য কর্ণাটকের হাম্পি অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র একথা বলা যায়।

কিন্তু আপনি যদি হাম্পির আগাগোড়া ঘুুরে থাকেন এবং বর্তমানে হাম্পির সীমানার বাইরে প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের খোঁজ করে থাকেন, তাহলে আপনাকে জানিয়ে রাখি অসমের শিবসাগর থেকে ঠিক ৪ কিমি দূরে অভূতপূর্ব কিছু ধ্বংসস্তূপ আছে যা এখনও লোকচক্ষুর অন্তরালেই রয়ে গেছে, ফলে সেখানে পর্যটকদের সংখ্যাও বেশ কম। এই স্থানে ঘুরতে ঘুরতে আপনি নিজের চোখেই দেখতে পাবেন অহমিয়া স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। চলুন ঘুরে দেখে নেওয়া যাক তলাতল ঘর।

Photo of হাম্পি থেকে নজর সরিয়ে চলুন একবার ঘুরে আসা যাক অসমের এইসব ধ্বংসস্তূপগুলো থেকে 1/1 by Saheli Bera
ধ্বংসস্তূপের নমুনা (ছবি উইকিমডিয়া কমন্স)

১। কেন তলাতল ঘর দেখবেন? কী এই স্থানটির বিশেষত্ব?

স্থাপত্যের আদি নিদর্শন (উইকিমিডিয়া কমন্স)

Photo of Talatal Ghar, Duboroni Ali Road, Joysagar, Dicial Dhulia Gaon, Assam, India by Saheli Bera

নিমন্ত্রণ রেস্তরাঁ, ফান্সি আলি

লোভনীয় খাবার (ছবি : নিমন্ত্রণ রেস্তোরাঁ)

Photo of Nimantran Restaurant, Fancy Ali, Gar-Ali, Jorhat, Assam, India by Saheli Bera
Photo of Suruchi (Hotel MD'S Continental), Marwari Patty, Fancy Ali, Gar-Ali, Jorhat, Assam, India by Saheli Bera

গিব্বন ইকো ক্যাম্প, মারিয়ানি- দুজনের থাকার ভাড়া ৯০০ টাকা প্রতি রাত। খাবারের বন্দোবস্ত সেক্ষেত্রে আলাদা।

Photo of GIBBON ECO CAMP, MARIANI, JORHAT, Assam, India by Saheli Bera

এখানকার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হল দেশের সবচেয়ে বড় এবং উৎকৃষ্ট অহমিয়া মনুমেন্টের অবস্থান। স্থাপত্যশিল্পগুলো ১৭৫১ সালে নির্মিত এবং সেই সময় এই মনুমেন্ট মিলটারি বেস হিসেবে ব্যবহার করা হত। সবথেকে প্রাচীন মনুমেন্টটি মাটির নিচ থেকে প্রায় ৩ তলা পর্যন্ত গভীর ছিল এবং মাটির নিচ ও ওপর মিলিয়ে ঘরগুলোকে 'কারেং ঘর' বলা হয়ে থাকত। অনেকে আবার এই পুরো এলাকাটিকেই রংপুর প্রাসাদ হিসেবেও চিনত। বর্তমানে পর্যটকরা একতলা, দোতলা এবং কারেং ঘরের তিনতলা ও চারতলাতে যে অবশেষ পরে আছে তা দেখতে পারেন। তলাতল ঘরের মাটির নিচে যে ধ্বংসাবশেষ আছে তা পর্যটকদের জন্য নিষিদ্ধ। ঐতিহাসিকভাবে প্রসিদ্ধ এই স্থানটি ঘুরে দেখতে দেখতে পর্যটকেরা নিঃসন্দেহে পাবেন সুপ্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপত্য-শৈলীর আভাস।

ভগ্নাবশেষের অংশ (ছবি : উইকিমিডিয়া কমন্স)

Photo of হাম্পি থেকে নজর সরিয়ে চলুন একবার ঘুরে আসা যাক অসমের এইসব ধ্বংসস্তূপগুলো থেকে by Saheli Bera

২। দেখে নিন পৃথিবীর বৃহত্তম নদী-দ্বীপ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছোঁয়া নদী ব-দ্বীপ ঘিরে (উইকিমিডিয়া কমন্স)

Photo of হাম্পি থেকে নজর সরিয়ে চলুন একবার ঘুরে আসা যাক অসমের এইসব ধ্বংসস্তূপগুলো থেকে by Saheli Bera

জোড়হাট থেকে সামান্য একটু দূরত্বে এটি অবস্থিত। ফেরি করে অনায়াসেই পৌঁছে যাবেন মাজুলি দ্বীপে, যেটি পৃথিবীর বৃহত্তম নদীর ক্ষয়কাজের ফলে তৈরি হওয়া একটি দ্বীপ হিসেবে চিহ্নিত। এই বিশাল দ্বীপটি পবিত্র ব্রহ্মপুত্র নদীর বুক জুড়ে প্রায় ৩৫২ বর্গকিমি স্থানজুড়ে প্রসারিত। প্রায় ১৫০টি গ্রাম এবং ১৫০০০০ জনসংখ্যা নিয়ে গড়ে ওঠা মাজুলি দ্বীপ, প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটককে আকর্ষণ করে। মূলত এখানকার বাস্তুতন্ত্র অনবদ্য। মাজুলি দ্বীপে কিন্তু আপনি পায়ে হেঁটেই ঘুরে দেখে নিতে পারেন আশপাশের গ্রামগুলো, আলাপচারিতাও চলতে পারে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে, আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির খুঁটিনাটি তথ্য জোগাড় করার সঙ্গে সঙ্গে বিরল প্রজাতির পরিযায়ী পাখির সন্ধানও পাবেন এমনটা বলা যায়। আমি কথা দিতে পারি, এই নির্জন দ্বীপের অসাধারণ সৌন্দর্যের প্রেমে না পড়ে আপনি থাকতে পারবেন না।

৩। দিনের বেলা ঘুরে আসুন কাজিরাঙা ন্যাশনাল ফরেস্ট থেকে

একশৃঙ্গ বিশিষ্ট গণ্ডার (ছবি : উইকিমিডিয়া কমন্স)

Photo of হাম্পি থেকে নজর সরিয়ে চলুন একবার ঘুরে আসা যাক অসমের এইসব ধ্বংসস্তূপগুলো থেকে by Saheli Bera

একশৃঙ্গ গণ্ডারের সন্ধান একমাত্র এই ন্যাশনাল ফরেস্টেই পাওয়া যায়।কাজিরাঙা ন্যাশনাল ফরেস্ট দেশের মধ্যে অন্যতম গুরত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী অভয়ারাণ্য। প্রায় ২৫০০টি গণ্ডার ছাড়াও কাজিরাঙাতে সুরক্ষিত এলাকায় বাঘের সংখ্যা সর্বাধিক ঘনত্বে পাওয়া যায়। ইউনেস্কো কর্তৃক একে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, এই অভয়ারাণ্যে রয়েছে হাতি, বুনো মোষ এবং হরিণের বিভিন্ন প্রজাতিও।

৪। কাইফলাংসো জলপ্রপাতের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন

জলপ্রপাতের ছবি (সৌজন্যে : স্ন্যাপওয়ার)

Photo of হাম্পি থেকে নজর সরিয়ে চলুন একবার ঘুরে আসা যাক অসমের এইসব ধ্বংসস্তূপগুলো থেকে by Saheli Bera

এই এলাকাতে কাইফলাংসো জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই জলপ্রপাতকে অনেকে কাকোচাং জলপ্রপাত হিসেবেও চিনে থাকে। এই জলপ্রপাত থেকে দেওপাহাড় ধ্বংসস্তূপ দেখতে পাওয়া যায়, প্রত্নতাত্বিকভাবে যা গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। এই জলপ্রপাতের অদম্য ধারা কফি ও রাবার জমির মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং এর চারপাশের এলাকা বন্ধু ও আত্মীয় পরিজনদের সাথে পিকনিক করার জন্য এক আদর্শ জায়গা।

৫। ঘুরে আসুন আসামের বিখ্যাত চা বাগান থেকে

অসমের চা-বাগিচা ( ছবিঁ : সংগৃহীত)

Photo of হাম্পি থেকে নজর সরিয়ে চলুন একবার ঘুরে আসা যাক অসমের এইসব ধ্বংসস্তূপগুলো থেকে by Saheli Bera

অসম রাজ্য থেকে সারা পৃথিবীতে খুব উৎকৃষ্ট মানের চা রপ্তানি করা হয়ে থাকে। সুতরাং চা বাগানে একবার ঢু না দিলে অসমে ঘুরতে আসার বিষয়টা যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আপনি চলে যেতে পারেন সিন্নামরা চা বাগানে, যা অসমের সবচেয়ে পুরনো চা বাগান। এখানে ১৮৫০ সাল থেকে এখানে বিভিন্ন রকমের, উৎকৃষ্ট মানের চা উৎপাদন হয়ে থাকে। এই চা বাগান ঘুরে আপনি জেনে নিতে পারেন চা উৎপাদন পদ্ধতির বিভিন্ন ধাপ।

স্থানীয় সুস্বাদু খাবার

যেহেতু তালাতল ঘর এখনও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি, তাই ভোজনরসিকদের জন্য এখানে তেমন কোনও হোটেল বা রেস্তোরাঁ নেই। তবে স্থানীয় সমস্ত রকম পদের স্বাদ নিতে আপনি সোজা চলে যেতে পারেন জোড়হাটে। বিভিন্ন ধরনের অথেনটিক অসমীয় পদ যেমন খর, মাসর, টেঙ্গা, লাক্সা, পইতাভাত এবং পিটিকা পেয়ে যাবেন। তবে আপনার যদি স্থানীয় পদ নিয়ে খুব বেশি পরীক্ষা নিরীক্ষা করা পছন্দের না হয়ে থাকে, আপনি নর্থ ইন্ডিয়ান বা চাইনিস মেনু দিয়েও নিজেকে তৃপ্ত করে নিতে পারেন। কব্জি ডুবিয়ে খাওয়াদাওয়া করার জন্য অবশ্যই ঘুরে আসুন নিজের জায়গাগুলি থেকে

উড স্মোক ক্যাফে, কুশল নগর

তন্দুরি খাবার (ছবি : উড স্মোক ক্যাফে)

Photo of হাম্পি থেকে নজর সরিয়ে চলুন একবার ঘুরে আসা যাক অসমের এইসব ধ্বংসস্তূপগুলো থেকে by Saheli Bera

বেলে অ্যাঁয়মিস, গড়ালি

সুস্বাদু মোমো (ছবি : উইকিমিডিয়া কমন্স)

Photo of হাম্পি থেকে নজর সরিয়ে চলুন একবার ঘুরে আসা যাক অসমের এইসব ধ্বংসস্তূপগুলো থেকে by Saheli Bera

কখন যাবেন

উষ্ণ ও আর্দ্র গ্রীষ্মকাল এবং বর্ষাতে ভারি বৃষ্টিপাত এই জায়গা ভ্রমণের জন্য একদমই উপযুক্ত নয়। বুঝতেই পারছেন শীতকাল হল সবচেয়ে ভাল সময় তলাতল ঘর যাওয়ার জন্য। মোটামুটিভাবে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত আপনি ঘুরতে যেতে পারেন।

এখানকার তাপমাত্রা ৭ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।

কীভাবে পৌঁছবেন

দিল্লি থেকে তলাতল ঘর আপনি অনেকভাবে পৌঁছে যেতে পারেন

বিমানপথে - জোড়হাটের সবচেয়ে নিকটতম বিমানবন্দর হল রওরিয়াহ এয়ারপোর্ট। দিল্লি থেকে সরাসরি এখানে পৌঁছে যাওয়ার বিমান পেয়ে যাবেন ৬৫০০ টাকার মধ্যে। পৌঁছতে সময় লাগে মোটামুটি ৩ঘণ্টা মতো। বিমানবন্দরে নেমে ক্যাব ভাড়া করে আপনি ২ ঘণ্টার মধ্যে (৬৫ কিমি) পৌঁছে যাবেন তলাতল ঘরে।

কাছাকাছি ঘুরে দেখা

এখানকার বেশিরভাগ হোটেল বা লজে আপনি প্রিপেড বা পোস্টপেড ট্যাক্সি ভাড়া করে নিতে পারবেন আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে দেখে নেওয়ার জন্য।

থাকবেন কোথায় ?

Photo of হাম্পি থেকে নজর সরিয়ে চলুন একবার ঘুরে আসা যাক অসমের এইসব ধ্বংসস্তূপগুলো থেকে by Saheli Bera

তলাতল ঘরের সংলগ্ন এলাকাতে আপনি তেমন কোন থাকার বন্দবস্ত পাবেন না। কিন্তু সবচেয়ে কাছের বড়ো ও জমজমাট শহর জোড়হাটে আপনি থাকার জন্যও সব রকম বাজেটের মধ্যে সুব্যবস্থা পেয়ে যাবেন।কয়েকটি ভাল থাকার জায়গা হল

ঠেঙ্গাল মানর, জোড়হাট - ব্রেকফাস্ট সহ দুজনের থাকার ভাড়া ৭৫০০ টাকা প্রতি রাত

সুরুচি হোটেল MD’S কন্টিনেন্টাল, মারয়ারী পোটটি- ব্রেকফাস্ট সহ দুজনের থাকার ভাড়া ৩২০০ টাকা প্রতি রাত।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন।

(এটি একটি অনুবাদকৃত/অনুলিখিত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)