ভারত উন্নতশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও, এখনও ভারতের নিম্নবিত্ত মানুষদের মাথার উপর ছাদের অভাব লক্ষ করা যায় । প্রায় ৬৩ মিলিয়ন মানুষ অস্থায়ী ছাদের নিচে বাস করে । এই অস্থায়ী ছাদের নিচে থাকার জন্য এই মানুষগুলোকে বারবার নিজেদের বাসস্থান পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় । তবে এই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার সময় এসে গিয়েছে ।
বছর ২৩ এর তরুণী পেরালা মানসা রেড্ডি এই নিম্নবিত্ত মানুষদের স্থায়ী বাসস্থানের জন্য একটি অভাবনীয় বাড়ি নির্মাণ করছেন । একটা শুয়েজ পাইপের সাহায্যে নিম্নবিত্ত মানুষদের জন্য কম মূল্যে স্বপ্নের বাড়ি প্রস্তুত করে দিচ্ছেন । সম্প্রতি মানসা সংবাদমাধ্যম কে জানিয়েছেন, শুয়েজ পাইপ সাহায্যে নিজের ইচ্ছাঅনুযায়ী জায়গা বানিয়ে অনেক গুলি ঘর বানানো সম্ভব হবে । বর্তমানে একটা বেডরুম সহযোগে তার নব নির্মিত বাড়িটি একসঙ্গে তিনজন মানুষের বসবাসের উপযুক্ত । তিনি আরও জানান সঠিক নির্মাণপদ্ধতি ব্যবহার করে শৌচালয়, ডাইনিং হল এবং রান্নাঘর সহ ২ শয্যা এমনকি ৩ শয্যা বিশিষ্ট কক্ষ নির্মাণ করা যাবে ।
পেরালা মানসা রেড্ডি - পাঞ্জাবের লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারে স্নাতক তরুণী পেরালা মানসা রেড্ডি, পড়াশুনা শেষ করে সামনাভি কনস্ট্রাকশন নামে স্টার্টআপ শুরু করেন । সম্প্রতি একটি ইন্টারভিউতে তিনি জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা ছিল ভারতের প্রতিটা মানুষকে মাথাগোঁজার জন্য স্থায়ী ছাদের ব্যবস্থা করবেন । মূলত নিজের সেই ইচ্ছাকে সার্থক করার জন্যই তিনি এই স্টার্টআপ শুরু করেন। এই বাড়িগুলি বানাতে সময় লাগে মাত্র ১৫ থেকে ২০দিন । মানসার এই অভাবনীয় আবিষ্কার নিম্নবিত্তদের স্বল্প মূল্যের বাসস্থান নির্মাণের স্বপ্নকে পূর্ণ করেছে ।
কিন্তু মানসা শুয়েজ পাইপের সাহায্যে বাড়ি নির্মাণের ধারণাটা কীভাবে পেলেন?
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় তিনি ' OPod Tube Houses' সম্পর্কে বিশদে জ্ঞান লাভ করেন । এই Opod টিউব সহযোগে বাড়ি নির্মাণে পরিকল্পনা চিনের হংকং শহরে বেশ প্রচলিত । চিনে এই ধরণের বাড়ি প্রথম ডিজাইন এবং নির্মাণ করেন জেমস ল সাইবারটেকচার । চিনের এই ধারণাকে সঙ্গী করেই মানসা ভারতে এই ধরণের বাড়ি নির্মাণ করার অভিপ্রায় নেন ।
ভারতীয় আঙ্গিকে নির্মিত পড স্টাইল এই বাড়ি সম্পর্কে কিছু তথ্য -
২০২০ তে পরীক্ষা শেষ করে লক ডাউন পরবর্তী সময়ে মানসা তেলেঙ্গানার শুয়েজ পাইপের নির্মাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের কাছে লম্বা পাইপের অর্ডার দিয়েছিলেন । এই পাইপের সাহায্যে নিজের ইচ্ছামতো ডিজাইন করে Opod বাড়ি নির্মাণে কাজ শুরু করেন । একজন মানুষের উচ্চতা সম্পন্ন পড স্টাইল বাড়িগুলিতে তাপনিয়ন্ত্রণের জন্য সাদা রং ব্যবহার করা হয়েছে ।এই বাড়ি গুলিতে জানলা দরজা নির্মাণের ক্ষেত্রে আধুনিক ফ্রেমের ব্যবস্থা করা হয়েছে । এছাড়াও মানুষ নিজেদের ইচ্ছা এবং সামর্থ মতো ইলেকট্রিক সামগ্রীর আয়োজন করতে পারেন ; আর বাথরুমকে ও নিজের মতো সাজিয়ে তোলার জন্য বন্দোবস্ত রয়েছে ।
সম্প্রতি নব নির্মিত পড স্টাইল বাড়ি সম্পর্কে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন -' পড়াশোনা শেষ করে মায়ের থেকে ৫ লক্ষ টাকা ধার করে এই ১৬ ফিট প্রশস্ত এবং ৭ ফিট লম্বা বাড়ি নির্মাণ করেন । এই বাড়ির মধ্যে কুইন সাইজ গদির উপযুক্ত একটি শয়নকক্ষ, লিভিং রুম, শৌচাগার, এবং রান্নাঘর রয়েছে ।'
বর্তমান দিনে পড স্টাইল বাড়ির চাহিদা -
মানসার বিশ্বাস পরিযায়ী শ্রমিক, বাস্তুহারা মানুষদের জন্য এই বাড়িটি বসবাসের উপযুক্ত হয়ে উঠবে । সামনাভি কনস্ট্রাকশন নামক স্টার্টআপ কোম্পানি থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, ভবিষ্যতে ৩ বা ৪ কক্ষ বিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে । এই স্টার্টআপ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আরও জানান, ইতিমধ্যে তামিলনাড়ু, কেরালা, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য থেকে OPod স্টাইলে বাড়ি নির্মানের জন্য মোট ২০০ টি অর্ডার পেয়েছেন ।
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে মানসার এই প্রচেষ্টা একটা ধন্যবাদের অবশ্য যোগ্য । ট্রিপোটো বাংলার তরফ থেকে মানসার জন্য রইলো অনেক অভিনন্দন ।
বিঃদ্রঃ - আপনার শহরেও বাস্তুহারা মানুষদের স্থায়ী বাসস্থানের প্রয়োজন পড়লে নির্দ্বিধায় যোগাযোগ করতে পারেন - samnaviconstructions.com