অতীতে মানুষ একস্থান থেকে অন্য কোনও স্থানে ভ্রমণের জন্য নদী পেরিয়ে কিংবা গভীর অরণ্যে গাছ-পালা কেটে রাস্তা করে নিতেন। ব্রিটিশ শাসনকালে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্যে ভারতে ব্রিজ নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয় । পরবর্তীকালে এই প্রযুক্তিবিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে ভারতে নদী, সাগর এমনকি বর্তমান দিনে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে সংযোগকারী ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে হাওড়া এবং কলকাতা জেলা সংযোগকারী ব্রিজটি হল হাওড়া ব্রিজ । এই ব্রিজটি ১৯৪৩ সালে হুগলী নদীর বুকে নির্মাণ করা হয় । এই ব্রিজ ভারতের চতুর্থ ব্যস্ততম ব্রিজ হিসেবে পরিচিত । তৎকালীন প্রযুক্তিবিদ্যার সহযোগিতায় নির্মিত এই ব্রিজটি ভূমিকম্প নিরোধক ।
এই ব্রিজটিতে কোনও রকম নাটবোল্ট ব্যবহার করা হয়নি এবং নদীর উপর সম্পূর্ণ ব্রিজটি শুধু মাত্র স্টিলের সাহায্যে নির্মাণ করা হয়েছে ।
ভারতে সাগরের বুকে নির্মিত এই রেল ব্রিজটি প্রায় ১০০ বছরের প্রাচীন এবং রেল ব্রিজ লাগোয়া রোড ব্রিজটি ও প্রায় ২কিমি লম্বা । পাম্বান ব্রিজটি মূলত পাম্বান আইল্যান্ড এবং ভারতের স্থলভাগের সঙ্গে সংযোগকারী ব্রিজ। ব্রিজ থেকে সমুদ্র অঞ্চলের একটা অসাধারণ দৃশ্যর সাক্ষী থাকতে পারেন ।
১৯১৪ সালে নির্মিত এই ব্রিজটি ভারতের প্রথম সমুদ্র-ব্রিজ হিসেবে পরিচিত ।
মেঘালয়ে অবস্থিত এই ব্রিজটি নদীর উপর দুইটি পাহাড়কে সংযোগ করেছে । এছাড়াও ভারত এবং বাংলাদেশ সীমান্তে জাদুকাটা নদীর উপর নির্মিত এই ব্রিজটি সীমান্তবর্তী অঞ্চলের প্রধান সড়কে পরিণত হয়েছে । এই ব্রিজটি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ব্রিজগুলির মধ্যে অন্যতম।
আরব সাগরের উপর গঠিত এই ব্রিজটি বান্দ্রা এবং মুম্বাই শহরের পশ্চিমে অবস্থিত ওয়ার্লি এবং সেন্ট্রাল মুম্বইকে সংযুক্ত করেছে । ৫-৬ কিমি লম্বা এই ব্রিজটি সান ফ্রান্সসিস্কোর গোল্ডেন গেটের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে । রাজীব গান্ধী সি লিঙ্ক এর সাহায্যে ন্যূনতম সময়ে বান্দ্রা থেকে ওয়ার্লি পৌঁছে যাওয়া যায় ।এই ব্রিজ থেকে আরব সাগরের সূর্যাস্তের একটা অসাধারণ দৃশ্যর প্রত্যক্ষদর্শী থাকতে পারেন ।
ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর গঠিত প্রায় ৩কিমি লম্বা কোলিয়া ভমরা সেতুটি অসমের তেজপুর নিকটবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ।এই ব্রিজটি শনিতপুরে নদীর উত্তরপ্রান্ত থেকে দক্ষিণপ্রান্তকে সংযোগ করেছে । সূর্যাস্তের পর এখানে প্রকৃতি বর্ণময় রূপে প্রকাশিত হয় । ব্রিজ নির্মাণের সময় এখানে ২৭টি ফাউন্ডেশন নির্মাণ করা হয়। এই ব্রিজে সবমিলিয়ে মোট ২৫টি উন্মুক্ত প্রাচীর রয়েছে ।
লোহিত নদীর অববাহিকায় নির্মিত ধোলা সাদিয়া ব্রিজটি ভারতের দীর্ঘতম রোড ব্রিজ হিসেবে পরিচিত । এই ব্রিজটি ব্রহ্মপুত্র নদী তীরবর্তী রাজ্য অসম এবং অরুণাচল প্রদেশকে সংযোগ করেছে । প্রায় ৯কিমি দীর্ঘ এই ব্রিজটি ২০১৭ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করেন ।
বিহার রাজ্যে গঙ্গা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত এই সেতুটি দীর্ঘতম নদী ব্রিজ নামে পরিচিত । প্রায় ৫.৫৭৫ কিমি লম্বা এই সেতুটি পাটনা এবং হাজীপুর শহরকে সংযোগ করেছে ।
বর্তমান দিনে জম্মু কাশ্মীর থেকে বারামুল্লা অঞ্চলকে সংযোগ করার জন্য চেনাব ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে । চেনাব নদীর ৩৫৯ মিটার উপর এই ব্রিজটি পৃথিবীর উচ্চতম রেল ব্রিজ হিসেবে ভবিষ্যতে পরিচিত পাবে । পরবর্তী কালে এই রেল ব্রিজের সঙ্গে যাতাযাত ও সুলভ হবে ।প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, ২০২২ সালে এই ব্রিজের শুভ উদ্বোধন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।