গ্যাংটক বেড়াতে গিয়ে স্থানীয় খাবার খেতে আগ্রহী? খেয়ে দেখুন এম জি মার্গের এই সাতটি রেস্টুরেন্টে

Tripoto
Photo of গ্যাংটক বেড়াতে গিয়ে স্থানীয় খাবার খেতে আগ্রহী? খেয়ে দেখুন এম জি মার্গের এই সাতটি রেস্টুরেন্টে 1/1 by Aninda De
ছবি সংগৃহীত

বেড়াতে গিয়ে আসল মজা হচ্ছে সেই জায়গার নানাবিধ স্থানীয় ডিশ এবং খাবার দাবার চেখে দেখার মধ্যে। ভাত ডাল বা মাছ ভাজা তো পাবেন ঘরের চার দেওয়ালের ভেতরেই, কিন্তু গ্যাংটক গিয়ে যদি একটু মনের মতো মোমো আর থুকপা না খেলেন, তাহলে তো বেড়ানোটাই তো অর্ধেক রয়ে গেল।

তবে অনেক বলবেন মোমো থুকপা তো খেয়েছি ভুরি ভুরি, সত্যিকারের নতুন কিছুর সন্ধান থাকলে দিন! তাদের জন্যই রইল এই সাতটি নতুন রেস্টুরেন্টের খবর যেখানে আপনি পাবেন নানারকম নতুন কুইজিন বা চেনা খাবারেও অচেনা টুইস্ট!

মহাত্মা গান্ধী মার্গ - যেন গ্যাংটকের পার্ক স্ট্রিট

আমরা পশ্চিমবঙ্গ বা কলকতাবাসীরা শপিং আর খাওয়া দাওয়ার আদর্শ মেলবন্ধন বলতে কিন্তু বুঝি এস্প্ল্যানেড আর পার্ক স্ট্রিট চত্বর, যেখানে একদিকে যেমন পাবেন লেটেস্ট জুতো জামা , তেমনি তাক লাগানো একের পর এক আধুনিক রেস্টুরেন্ট। গ্যাংটকের মহাত্মা গান্ধী মার্গ বা এম.জি মার্গ সেরকমই ওখানকার প্রধান স্ট্রিট শপিং ক্যাপিটাল। আধুনিকতম জিনিসপত্র, পোশাক আশাক, পাবেন সব এবং পাশে থাকবে বিখ্যাত কিছু খাবার জায়গা যেখানে আপনি পাবেন মনমাতানো খাঁটি সিকিমিজ খাবারদাবার। গত ডিসেম্বর মাসে সিকিম ভ্রমনকালীন আমি ৩ দিন ছিলাম গ্যাংটকে, আর দুপুর আর রাতের খাওয়ার সেরেছি এম.জি মার্গে ঘুরে ঘুরেই, সে এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। দেখে নিন কোন কোন রেস্টুরেন্টে অবশ্যই যাওয়া উচিত।

১. নিমঠো

আমার সবথেকে ভাল লেগেছে নিমেঠোর খাবার। আর ব্যক্তিগতভাবে সবথেকে ভাল এমবিয়েন্সও আমি পেয়েছি এখানেই। রেস্টুরেন্টটি খাঁটি নেপালি কুইজিন সার্ভ করে আর নেপালিয়ানার ছাপ ভিতরের অঙ্গসজ্জাতেও। খাওয়াদাওয়ার আয়োজন হয় রাজকীয় মেজাজে, খাবার পরিবেশিত হয় কাঁসার থালা বাটিতে।

কী কী খাবেন : এখানে প্রথমেই ট্রাই করবেন নানা রকম থালি, যেমন থাকালি থালি বা সিকিম থালি বা নেপালি খাজা মিলের। প্রতিটি থালি আপনি ভেজ, চিকেন, মাটন বা পর্কের সাথে অর্ডার করতে পারেন। সঙ্গে থাকবে ভাত এবং নানা রকম আঞ্চলিক ডাল, শাক সবজি এবং তরকারি। এছাড়া এখানকার ঝোল মোমো (ঝাল ঝাল তরকারির ঝোলের ভেতরে মোমো), আলু সাধেকোর (একধরণের স্যালাড) স্বাদের মধ্যে আছে নতুনত্বের আভাস।

২. দ্য ড্রাগন ওক

চৈনিক রান্নায় খুব উঁচু আঁচে রান্না করার জন্য ব্যবহৃত হয় ওক নামক একধরনের লোহার কড়ার, আর চিন জাপান তিব্বত জুড়ে কান পাতলেই শোনা যায় ভাল ড্রাগন আর মন্দ ড্রাগনের গল্প। ড্রাগন ওকে তাই মূলত পাওয়া যায় চিনা এবং জাপানি খাবার দাবার। তবে চিন্তা করবেন না, এই চিনা ও জাপানি খাবারের স্বাদ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের চিনা দোকানের খাবারের মতো নয়, বরং অনেকটাই অথেন্টিক খাবারদাবার পাবেন এখানে।

কী কী খাবেন : ড্রাগন ওকের মেনুর পাতায় পাতায় রয়েছে পদের নাম, দাম এবং সঙ্গে ছবি। তাই রূপ পছন্দ হলে তবেই বেছে নিতে পারেন মনের মতো খাবার। আমি এখানে খেয়ে দেখেছি থুকপা (এক ধরণের নুডল স্যুপ), মালা চিকেন (চীনেবাদাম দিয়ে করা একধরনের স্যালাড জাতীয় ঠান্ডা চিকেন ডিশ) পর্ক ইন কিউমিন সস, জাপানি শুশি (মাছ আর ভাত, তবে জাপানি স্টাইলে)।

এছাড়া পাবেন জাপানি স্টাইলে বেনতো বক্স মিল। আর আছে মন মাতানো কিছু ককটেল, হুইস্কি সওয়ার, পিনাকোলাডা, ব্লাডি ম্যারি এবং অন্যান্য। জমজমাট এই রেস্টুরেন্টটি আমার খুবই ভাল লেগেছে।

৩. শাফল মোমোস

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শাফল মোমো পুরো গ্যাংটক জুড়ে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এই রহস্যের পিছনে ওদের ব্রান্ডিং আর প্যাকেজিং তো আছেই, সঙ্গে রয়েছে ওদের তৈরি মোমোগুলোতে স্বাদের টুইস্ট। আর সঙ্গে রয়েছে পিনাট সস, সেসেমে বা তিলের সস, টমেটো সস, আর সবথেকে আকর্ষণীয় ছুরপি সস। ছুরপি একধরণের তিব্বতি চিজ, হার্ড এবং সফ্ট দুরকম ছুরপি পাওয়া যায়। সফ্ট ছুরপির সস বা তরকারি বেশ উপাদেয়।

কী কী খাবেন : ভেজ মোমো চাইলে খেতে পারেন মাশরুম বা পালংশাকের মোমো। আমার সবথেকে ভাল লেগেছে আলু-চিজ আর আলু-বাটার মোমো। একেবারে মন ভাল করে দেওয়া ব্যাপার। নন ভেজে আছে চিকেন, প্ৰণ, বিফ বা পর্কের মোমো। আপনি বললে মোমোগুলোকে ওরা নানারকম সসে প্যান ফ্রাই করেও সার্ভ করে। বিকেলের স্ন্যাক হিসেবে এই মোমোগুলো বেশ ভালো, পেট ভরায়, খেতেও বেশ অন্যরকম আর খরচাও বেশি নয়।

৪. টেস্ট অফ তিবেত

গ্যাংটক যাওয়ার আগে, আমি বিভিন্ন পেটুক বন্ধুদের মুখে শুনেছিলাম টেস্ট অফ তিবেটের কথা। একডাকে সবাই চেনে এমন এক জায়গা এবং বহু বছর ধরে এই রেস্টুরেন্টটি দেশ বিদেশের বহু অথিতির পেটপুজোর দায়িত্ব বহন করে চলেছে। তবে সাবধান, যেহেতু এটি প্রচন্ড জনপ্রিয়, তাই এদের খাবারও ফুরিয়ে যায় বেশ জলদি জলদি। এখানে খেতে চাইলে পৌঁছে যান সন্ধে ৭টার আগেই। (গ্যাংটকের বেশিরভাগ দোকানপাট কিন্তু ৮টা বা ৮.৩০টার মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়, এই ব্যাপারটি মাথায় রাখবেন।

কী কী খাবেন : স্প্রিং রোল, অবশ্যই। এরককম নরম, তুলতুলে আবরণ, আর ভেতরে পুরু মাংসের আস্তরণ দিয়ে তৈরি স্প্রিং রোল অন্য কোথাও খাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়নি। সাথ থাকুক ওয়ান্টন সুপ, মিক্সড গ্যাথুক (থুকপার মতন আর এক ধরণের নুডল স্যুপ), শ্যাফালে (মাংসের পুর ভরা কচুরির মতন খাবার) আর শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে কয়েক পেগ ওল্ড মঙ্ক।

৫. বেকার্স ক্যাফে

বন্ধুবান্ধবরা সদলবলে আড্ডা দিতে চান একসাথে, পাহাড়ের ভিউ দেখতে দেখতে? নাকি ধোঁয়াওঠা কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে ডুবে যেতে চান প্রিয়জনের সাথে গভীর কথোপকথনে? তাহলে চলে আসুন বেকার্স ক্যাফেতে আর অর্ডার করুন নানারকম চা, কফি, কেক, পেস্ট্রি, প্যাটি আর স্ন্যাকসের। আর জানলার ওপারে দূরে আকাশ জুড়ে ভেসে থাকবে বরফে ঘেরা হিমালয়ের মায়াবী রূপ।

কী কী খাবেন : বিভিন্ন রকমের সসেজ তো রয়েছেই, এছাড়া আপনি অর্ডার করতে পারেন, প্যানকেক, বার্গার, স্যুপ এবং আরও অনেক কিছুই।

৬. হামরো ভানসা ঘর

ছিমছাম ঘরোয়া পরিবেশের মধ্যে একটু রোজকার নেপালি খাবার খেতে চাইলে ঢুঁ মারতে পারেন হামরো ভানসা ঘরে। নামটি নেপালি, বাংলা করলে মনে দাঁড়ায় আমাদের রান্নাঘর। আর নেপালি এবং বাঙালি কুইজিনের ভেতরে আছে অনেকটাই মিল। তাই ঘরের স্বাদ মিস করলে, এখানে এলেই পাবেন একটু চেনা আশ্বাস।

কী কী খাবেন : অর্ডার করতে পারেন সাদা ভাত এবং নেপালি স্টাইলে রাঁধা চিকেন বা মটন করি। স্টার্টারের মধ্যে খেতে পারেন মটন কারচি মারচি বা মটন সেকুয়া। সাধেকো ভাল লাগলে এখানে পাবেন ওয়াই ওয়াই সাধেকো, যা এখানকার বাচ্চাদের খুবই পছন্দের। ডিম আর সসেজ দিয়ে তৈরি ককটেল নুডলটাও বেশ সুন্দর খেতে।

৭. মু কিমচি

নেপালি আর চাইনিজ খাবারের ভিড়ে যদি আরও আনকোরা নতুন কিছুর পরখ করতে চান, তাহলে পৌঁছে যেতে পারেন এম জি মার্গের একপ্রান্তের ছোট্ট রেস্টুরেন্ট মু কিমচিতে। মু কিমচি একটি কোরিয়ান রেস্টুরেন্ট এবং এখানকার ডেকোরেশন, মেনু, খাবারদাবার এবং পরিবেশনের মধ্যেও কোরিয়ান ছাপ স্পষ্ট। মেনুতে সবকটি ডিশের নাম কোরিয়ানে লেখা আছে দেখে ভয় পাবেন না, প্রতিটি নামের সাথে বিস্তারিত ভাবে বিবরণ দেওয়া আছে, যা দেখে পছন্দ মতন পদ নির্বাচন করতে পারবেন।

কী কী খাবেন : অবশ্যই খেয়ে দেখবেন বিবিমবাপ, এটি কোরিয়দের জাতীয় ডিশের মতন। একটি বড় বাটিতে মধ্যে থাকে ভাত এবং তার চারিদিকে থরে থরে সাজানো থাকে নানারকম মাংস, শাক, গাজর কুঁচি ইত্যাদি, ওপরে দিয়ে দেওয়া হয় ডিমের পোচ, আর পাশে থাকে কিমচি, বাঁধাকপি কুঁচিয়ে তৈরি একপ্রকার ঝাল ঝাল আচার যা কোরিয়ানদের ফেভারিট। সঙ্গে পাবেন নানা রকম অথেন্টিক কোরিয়ান নুডলস (রমিউন বা নেং মিওন), স্টার্টারস (খামজা টুইগিম - সয় সস দিয়ে আলু ভাজা বা ডাক পকুম - কোরিয়ান ঝাল ঝাল সস দিয়ে চিকেন ও ভেজিটেবলস) এবং সাইড ডিশ (এদের পর্ক রিবস খুবই টেস্টি)।

স্পেশাল টিপ : কোনও কারণে এম জি মার্গ না যেতে পারলেও চিন্তা নেই। উপপাই বা চিত্ত ডেলিভারি সার্ভিস ব্যবহার করে আপনি নিজের হোটেল রুমে খাবার ডেলিভারি করাতে পারেন।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।