সামনেই তো বড়দিন... কোথা থেকে কিনবেন বড়দিনের কেক? আপনাদের জন্য রইল সেইসব খুঁটিনাটি হদিশ

Tripoto
Photo of সামনেই তো বড়দিন... কোথা থেকে কিনবেন বড়দিনের কেক? আপনাদের জন্য রইল সেইসব খুঁটিনাটি হদিশ 1/1 by Aninda De
সকলের প্রিয় খ্রিস্টমাস স্পেশাল ফ্রুট কেক (ছবি সংগৃহীত)

কথায় বলে, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। কিন্তু বাঙালি শুধু নিজেদের উৎসবেই মেতে ওঠে না, নতুন যা কিছুর কাছাকাছি এসেছে, তাকেই সে আপন করে নিয়েছে। কলোনিয়াল ব্রিটিশ শাসনের ফাঁকে ফাঁকে কলকাতার হাতে খড়ি হয়েছিল যীশুখ্রিষ্ঠের জন্মদিনে 'ক্রিসমাস' উদযাপনের। আর বাঙালি মানেই মিষ্টিমুখ, তাই পিছিয়ে না থেকে আমরা আপন করে নিয়েছি বড়দিনের কেকের উন্মাদনাও। বড়দিনের সময়েও শীতের কলকাতা আলোয় ঝলমলে হয়ে মেতে ওঠার পাশাপাশি তাই আর এক আকর্ষণ হল কলকাতার ঐতিহ্যশালী দোকানগুলো থেকে বাড়িতে বাড়িতে কেকে নিয়ে যাওয়া এবং গোটা পরিবারের সঙ্গে একসাথে খাওয়া। খ্রিস্টমাসের সময় গোটা ডিসেম্বর মাস জুড়ে কলকাতার বিভিন্ন বেকারির বাইরে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পরার আগে জেনে নিন কোন কোন দোকানের কী কী কেক এই বছরে অবশ্যই খেয়ে দেখা দরকার।

বর্তমান বছরে করোনা পরিস্থিতির ফলে দোকানগুলোর খোলা থাকার সময়, বা কোন কোন কেক পাওয়া যাবে, তার পরিবর্তন হতে পারে। তাই সবথেকে ভাল হয় দোকানগুলোতে যাওয়ার আগে ফোন করে কথা বলে নিলে। সাধারণ সময়েও অন্তত ৪৮-৭২ ঘণ্টা আগে অর্ডার দিয়ে রাখা ভাল, যাতে আপনি ঠিক সময়ে আপনার মনপসন্দ কেকটি পেয়ে যান।

ফ্লুরিস

বড়দিনে বহু মানুষই আসেন কেকের সন্ধানে (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Flury's Bakery, Park Street, Park Street area, Kolkata, West Bengal, India by Aninda De

কলকাতার আইকনিক হেরিটেজ দোকানগুলোর মধ্যে ফ্লুরিসকে প্রায় সব বাঙালিই এক ডাকে চেনে। পার্ক স্ট্রিট-এর স্বর্ণযুগের নিদর্শন এখনও বজায় রাখা রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ফ্লুরিস একেবারে প্রথম সারিতেই। ফ্লুরিসে আপনি সারা বছর ধরেই বিভিন্ন রকম পেস্ট্রি, প্যাটিস, এবং নানারকম টুকিটাকি পাবেন, কিন্তু ক্রিস্টমাসের সময় তৈরি এনাদের প্লাম কেক, ফ্রুট কেক, প্লেন খ্রিস্টমাস কেক, রাম এন্ড রেসিন কেক প্রচন্ড পরিমাণেই জনপ্রিয়। দামের দিক থেকে একটু উপরের দিকে হলেও, কোয়ালিটির দিক থেকে কোনও দ্বিমত থাকতে পারে না। সময় থাকতে থাকতে চলে যান ফ্লুরিসে, আর যতক্ষণ না আপনার কেক প্যাক হয়ে আসছে, এক কাপ দার্জিলিং চা খেতে খেতে বড় কাঁচের জানলার পাশের টেবিলে বসে পার্ক স্ট্রিটের জনসমাগম দেখতে দেখতে কাটিয়ে নিন মনোরম কিছুক্ষণ।

আর কী কী খেতে পারেন : বাবা পেস্ট্রি, চকোলেট শর্ট ব্রেড, ডোমিনো সাবলি কুকিজ

কোথায় : ১৮ এ, পার্ক স্ট্রিট, কলকাতা

সালডান্হা বেকারি

ট্রাডিশনাল বিভিন্ন কেকের সম্ভার (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Saldanha Bakery, Nawab Abdur Rahman Street, Haji Md. Mohsin Square, Esplanade, Taltala, Kolkata, West Bengal, India by Aninda De

মধ্য কলকাতার বিভিন্ন গলি পেরিয়ে সালডান্হা বেকারিতে গিয়ে পৌঁছনোও যেন এক অ্যাডভেঞ্চারের সমান। বিভিন্ন কেকের দোকান, যেমন ক্যাথলিন বা কেকস্ বা স্কাইলাইন শহরের বিভিন্ন কোণে একের পর এক শাখা খুলেছে, সালডান্হা কিন্তু মন দিয়েছে একটাই কাজে, আরও ভালো কেক তৈরিতে। এনাদেরও ফ্রুট কেক, প্লেন কেক, ওয়ালনাট কেক বিখ্যাত। যদি সরাসরি দোকানে যান, তাহলে পাবেন নিৰ্দিষ্ট ওজন ও সাইজের কেক, অন্যথায় আপনি অর্ডার দিলে পাবেন নিজের পছন্দমতো মাপ, ওজন এবং উপাদানের কেক। ওয়েলেসলির এক কোণে লুকিয়ে থাকা এই কেকের দোকান সত্যি কলকাতার এক লুকিয়ে থাকা রত্ন। কেকের নিরিখে রিচ এক্স-মাস কেক মাস্ট ট্রাই।

আর কী কী খাবেন : স্পঞ্জ কেক, রেনবো কেক, চিকেন এনভেলপ, চিকেন কিশ, টুনা স্যান্ডউইচ (তবে সবকিছুই আগে থেকে অর্ডার দিয়ে রাখা ভাল)

কোথায় : ১৯, নবাব আব্দুর রহমান স্ট্রিট, কলকাতা ১৬

নাহুমস্ বেকারি

বেকারিতে বাহারি কেকের পসার (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Nahoum and Sons Private Limited Confectioners, Bertram Street, New Market Area, Dharmatala, Taltala, Kolkata, West Bengal, India by Aninda De

তিলোত্তমা কলকাতা সংস্কৃতিগত দিক থেকে সত্যি অদ্বিতীয়। একসময় ব্রিটিশ প্রতিপত্তি সত্ত্বেও এই শহরেই বেড়ে উঠেছিল ছোট ছোট গ্রিক, আর্মেনিয়ান, ইহুদি ও আলাদা আলাদা অ্যাংলো ইন্ডিয়ান জনগোষ্ঠী। সেই ইহুদি জনগোষ্ঠী নিঃশেষিত হয়ে আসা কিছু পড়ে থাকা ঐতিহ্যের অন্যতম হল নিউ মার্কেট বা হগ সাহেবের মার্কেটের নাহুমসে্র কেকের দোকান। হেরিটেজ হিসেবে বলুন বা জনপ্রিয়তার নিরিখে, কেক বলতে বনেদী কলকাতা এখনও একনামে নাহুমস্-কেই চেনে। ১৯০২ সালে স্থাপিত এই দোকানে এখনও শতাধিক বছরের পুরনো রেসিপির মাধ্যমেই মিষ্টি বা নোনতা মুখরোচক খাবারগুলো তৈরি হয়। খ্রিস্টমাসের সময় অর্ডার না দিয়ে সরাসরি পাউন্ড কেক, প্লাম কেক, ফ্রুট কেক, বা স্পেশাল ফ্রুট কেক কিনতে গেলে কিন্তু সকাল থেকেই দাঁড়াতে হতে পারে ১০০ জনের লাইনে। খ্রিস্টমাসে সান্তা ক্লজের আগমনের মতোই বড়দিনের নাহুমসে্র কেক খাওয়া কলকাতার আপন এক ট্র্যাডিশন।

আর কী কী খাবেন : চিকেন পাফ, চিকেন প্যান্থারাস, মার্জিপ্যান, রামবল, লেমন টার্ট, ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক

কোথায় : নিউ মার্কেটের ভিতরে, কলকাতা

দ্য বেকারি, ললিত গ্রেট ইস্টার্ন

খ্রিস্টমাস স্পেশাল কেক (ছবি সংগৃহীত)

Photo of The Lalit Great Eastern, Old Court House Street, Chowringhee North, Bow Barracks, Kolkata, West Bengal, India by Aninda De

আভিজাত্যের মোড়কে আবৃত গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলের বেকারির নামজশ এককালে ছিল সর্বজনবিদিত। শীতকাল হলেই শহরের ভিড় ঢলে পড়তো ডালহৌসি স্কোয়ারের পাশের পাশে। এদের ডান্ডি কেক, রেনবো কেকের স্বাদ এখনো লেগে আছে আমাদের বাবা কাকাদের মুখে। বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পরে বর্তমানে ললিত গ্রুপের তত্ত্বাবধানে ললিত গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলের বিভিন্ন কেক এবং বেকড আইটেমস আবার জনপ্রিয়তা খুঁজে পাচ্ছে। এঁদের একটি শাখা নিউ মার্কেটের মধ্যেই অবস্থিত। ওখানেই পেয়ে যাবেন নানান মনকাড়া কেক এবং নোনতা আইটেম। ক্রিস্টমাসের সময়ে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় প্লাম কেক, রিচ ফ্রুট কেক এবং চকোলেট কেক।

আর কী কী খাবেন : ট্রাফল কেক, বাটারস্কচ পেস্ট্রি, রিচ চকোলেট কেক, পাইনাপেল পেস্ট্রি

কোথায় : ১-৩ ওল্ড কোর্টহাউস স্ট্রিট, ডালহৌসি স্কোয়ার, কলকাতা

( শাখা : নিউ মার্কেটের ভিতরে )

বাহারি কেকের সম্ভার (ছবি সংগৃহীত)

Photo of সামনেই তো বড়দিন... কোথা থেকে কিনবেন বড়দিনের কেক? আপনাদের জন্য রইল সেইসব খুঁটিনাটি হদিশ by Aninda De

নিউ মার্কেটের ভিতরেই আছে ইম্পিরিয়াল বেকারি এবং মল্লিক বেকারি। তালিকার অন্যান্য দোকানগুলোর মতো জনপ্ৰিয় না হলেও, কম দামে ভাল কেক খেতে চাইলে এই দোকানগুলোতেও একবার ঢুঁ মারতে পারেন। শুধু বড়দিনের কেক নয়, এখানে পাবেন নানারকম বিস্কুট, ক্রীম রোল, কুকিজ, প্যাটিস বা পাফ।

কোনো কারণে যদি আপনি এই জায়গা গুলি থেকে কেক কিনতে না পারেন, তাহলে দুঃখ পাবেন না। সারা কলকাতা জুড়ে ছোট বড় বিভিন্ন কেকের দোকান খ্রিস্টমাসের সময়ে হরেক রকম বিশেষ কেকের পশরা সাজিয়ে বসে। কুকি জার, ক্যাথলিন, কেকস, স্কাইলাইন কনফেকশনারি, সকলেই ভাল কেক বানান এবং হেরিটেজ না হলেও প্রচন্ড জনপ্রিয়। তাই দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত সোসাইটি হোক, বা উত্তর কলকাতার বনেদি পাড়া, রাম কেক, প্লাম কেক, রিচ ফ্রুট কেকের দুনিয়ায় গোটা কলকাতা মেতে ওঠে মিঠে শীত মেখে বড়দিনের আনন্দে। তাই কেক খান, কেক খাওয়ান, আর শুরু হোক নতুন বছরের শুভারম্ভের প্রতীক্ষা।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন