বালি - ঈশ্বরের দেশ - ইন্দোনেশিয়ার ১৯০০০ দ্বীপের মধ্যে অন্যতম - প্রতিনিয়ত ভারতীয় পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আর হবে নাই বা কেন - বালি তে একাধারে রয়েছে অবিস্মরণীয় সমুদ্রতট, অসামান্য ভূপ্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সুবিশাল জলপ্রপাত, প্রাচীন সংস্কৃতি যা আজও বহমান এবং তার সঙ্গে আছে সুস্বাদু স্ট্রিট ফুডের হাতছানি।
এছাড়াও ঘরছাড়া বোহেমিয়ানদের কাছে বালির উবুদ খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, সম্পূর্ণ এলাকাটি। বিশ্ববিখ্যাত যোগ-কেন্দ্র হিসেবে এবং নানা সৃজনশীল কাজকারবারের মধ্যমণি হয়ে উঠছে উবুদ। উবুদের বিশ্বমানের সমুদ্রতট বা বিচ গুলোর স্ফটিকস্বচ্ছ জলরাশির পাশাপাশি আছে প্রচুর সার্ফিং স্পটস। এখানের সামুদ্রিক প্রাণীজ এবং উদ্ভিজ্জ সম্পদের কারণে স্নরকেলিং-ও খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই বালি শুধুমাত্র আর হানিমুন ডেস্টিনেশন বলে খ্যাত না - নতুন প্রজন্মের ব্যাকপ্যাকারদের কাছেও বালি সমানভাবেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
তাই আমিও চেয়েছিলাম এই সবকিছু নিজে ঘুরে দেখতে, কিন্তু পুরোটাই করতে চেয়েছিলাম খুব কম টাকায়। তাই আমি আমার বাজেট রেখেছিলাম মাত্র ৪০হাজার টাকা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি মাত্র ৩৫ হাজার টাকার মধ্যেই পুরো ট্রিপটা করে ফেলতে পারি। আপনিও জেনে নিন তা কীভাবে সম্ভব হল।
ফ্লাইট এবং যাতায়াত
কোথাও বেড়াতে যাওয়ার হলে, সে ডোমেস্টিক ডেস্টিনেশন হোক বা ইন্টারন্যাশনাল, আপনি যদি আগে থেকে প্ল্যান করে ফ্লাইট টিকিট কাটেন, তা প্রচুর কম দামে পাওয়া যাবে। আমি আমার বেড়াতে যাওয়ার প্রায় এক মাস আগে টিকিট পেয়েছিলাম ২০০০০ টাকায়, তবে আরেকটু ভালভাবে প্ল্যান করলে বালির টিকিট ১৪ হাজার টাকার আশেপাশে পাওয়া যায়।
বালির ভিতরে এদিক ওদিক যাওয়ার জন্যে আমি গোজেক বা গ্র্যাব (লোকাল কোথাও যাওয়ার ভাড়া ২০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে) ব্যবহার করি, সস্তাও, ব্যবহার করাও সহজ। এমনকি এয়ারপোর্ট থেকে যাওয়া আসার সময়ও আমি গোজেক ব্যবহার করেছিলাম, খরচ হয়েছিল ৪০ টাকা করে। ইচ্ছেমতো আপনি বাইসাইকেল বা স্কুটারও ভাড়া করতে পারেন। সারাদিনের স্কুটার ভাড়া ৩০০ টাকার কাছাকাছি।
থাকার ব্যবস্থা
ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম বড় সুবিধা হল যে আপনার চাহিদা মতো সবকিছুই পাওয়া যায় - একেবারে সুলভ কোন জায়গা থেকে একেবারে বিলাসবহুল। তাই ট্যুরিস্ট হিসাবে আপনি যে রকম জায়গায় থাকতে চান, এখানে সবকিছুই আপনি খুঁজে পাবেন। যেহেতু আমি সোলো ট্র্যাভেল করছিলাম তাই আমি থাকছিলাম ব্যাকপাকার হোস্টেলগুলোতে। সবরকম সুযোগ সুবিধা থাকার পাশাপাশি বিশ্বের নানা প্রান্তের বহু নতুন মানুষজনের সঙ্গে আমার এখানে পরিচয় হয়। ডর্মিটোরির বেড নিলে আপনার খরচ পড়তে পারে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। হ্যাঁ, মাত্র ১০০ টাকাতেও এখানে বেড পাবেন।
খাবারদাবার
ইন্দোনেশিয়ার খাবার নিয়ে লিখতে বসলে বোধহয় একটা আস্ত বই লিখতে হবে। পৃথিবীর অন্যতম সুস্বাদু, সুলভ এবং অকৃত্রিম খাবার আপনি পাবেন এখানে। এবং খাবারে কতরকম বৈচিত্র্য। ইনস্টা-ফ্রেন্ডলি ভেগান ক্যাফে থেকে বিফ-স্পেশাল ওয়ারুং, সবই আছে একসাথে। আমি এখানে বেশ কিছু ভারতীয় রেস্টুরেন্ট ও দেখেছিলাম, কিন্তু যাওয়া হয়নি। আমি ব্যস্ত ছিলাম এখানকার বিভিন্ন ওয়ারুং-এ গিয়ে খেতে। মাত্র ৫০ টাকায় পাবেন ভাত, চিকেন, পর্ক কারী এবং নানারকম গ্রেভি।
আইল্যান্ড হপিং
ইন্দোনেশিয়া বেড়াতে যাওয়ার অন্যতম আকর্ষণ হল এখানকার নানা সুন্দর সুন্দর নির্জন দ্বীপ গুলি থেকে ঘুরে আসা। নাইটলাইফ হোক, বা রোম্যান্টিক ছুটি কাটাতে হোক, নুসা বা গিলি দ্বীপের কোনো তুলনা হয়না। কোন দ্বীপে আপনি যাবেন তার ওপর নির্ভর করে বোট বা ফেরি রাইডের জন্যে খরচ পড়বে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।
বালিতে করার মতো অন্যান্য অ্যাক্টিভিটি
বালি গেলে বালির নাইটলাইফ এক্সপেরিয়েন্স করা আবশ্যক। এবং বেশিরভাগ জায়গাতেই তা করা যায় বিনামূল্যে। সেমিনিয়াক এর লা ফ্যাভেলা, বা পটেটোহেড বা লা প্লানচা-র মতন বিচক্লাবগুলো আমার খুব পছন্দ হয়েছিল। ক্যাঙ্গুর ওল্ড ম্যান্স সূর্যাস্তের সময় হয়ে ওঠে মোহময়ী। প্রবেশ বিনামূল্যে, তবে অ্যালকোহলের জন্যে আপনাকে চার্জ দিতে হবে।
নুসা লেমবঙ্গনে আপনি স্কুবা ডাইভিং বা স্নরকেলিং করতে পারেন, আপনার সাথে সাঁতার কাটবে সামুদ্রিক মানটা রে। কোন সময়ে ডাইভ করছেন বা কি ধরণের ডাইভ করছেন তার উপর নির্ভর করে খরচ হতে পারে ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা।
মনে রাখবেন, প্রতিটি জায়গাতেই আপনি দরদাম করতে পারবেন। ভাল করে বারগেন করতে পারলে আপনি হয়তো দাম কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারবেন, তারপরেও বিক্রেতারা লাভ করতে সক্ষম। আর যদি সুভেনিয়ার কেনাকাটা করতে ইচ্ছে হয়, তাহলে চলে আসুন উবুদ আর্ট মার্কেটে। এই বিশাল রঙচঙে মার্কেটে আপনি যা চান, যা খুঁজবেন, ঠিক পেয়ে যাবেন, সবই ঝোলানো আছে ডিসপ্লেতে। কিনুন, বা যদি শুধু উইন্ডো শপিং-ও করতে চান, তাহলে এই জায়গার জুড়ি মেলা ভার।
বালিনীজ স্পা ও এখানকার অন্যতম আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য। অনেক হাইক করার পর শেষ দিন আমি রিল্যাক্স করার জন্যে স্পা নিই। এবং মাত্র ৫০০ টাকায় দেড় ঘন্টার এই স্পা এতটাই ভালো, যে এটা কিছুতেই মিস করা যায় না।
তবে ইন্দোনেশিয়ার নানা জায়গায় ভ্রমণ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখা বিনামূল্যে সম্ভব হলেও এখানকার বিভিন্ন জলপ্রপাত, মন্দির বা নুসা পেনিদার ডায়মন্ড বীচের মতন নির্জন দ্বীপ ভ্রমণ করার সময় কিছু অর্থ ডোনেট করতে পারেন, যা জায়গাগুলির সংরক্ষণ এবং উন্নতিসাধনে ব্যয় হয়। বেশি না, জায়গাপ্রতি ১০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যেই তা করা সম্ভব।
অবশ্যই পড়ুন: বালি শপিং
আর এইভাবেই আমি বালিতে ৯ দিন কাটিয়ে এসেছিলাম, মাত্র ৩৫ হাজার টাকার ভিতরেই। আপনিও ঘুরে আসুন, এবং আমাদেরকে জানান আপনার অভিজ্ঞতা।