সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরি বিভিন্ন বাড়িগুলি দেখতে পারেন..

Tripoto
Photo of সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরি বিভিন্ন  বাড়িগুলি দেখতে পারেন.. 1/7 by Deya Das
ছবি সংগৃহীত

আজ ৫ই জুন; বিশ্ব পরিবেশ দিবস। গাছ লাগাও প্রাণ বাঁচাও বা একটি গাছ একটি প্রাণ স্লোগানে শুধু নয়, পরিবেশকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রতিটি মানুষকে সমানভাবে সচেতন হতে হবে। আর সেই কথা মাথায় রেখে বহু প্রাচীন যুগ থেকেই পরিবেশবান্ধব কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেগুলি কী কী জেনে নেওয়া যাক-

প্রকৃতির সঙ্গে ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। এটি ধর্মীয় রীতিনীতি,সংস্কৃতি, ও ঐতিহ্যকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। শুধু তাই নয়, স্থাপত্য, ভাস্কর্য এবং লোককাহিনীও ভারতীয়দের জীবনকে আরও বেশি করে উজ্জীবিত করে তুলেছে। তাই বহু যুগ ধরে অর্থশাস্ত্র, উপনিষদ, বেদ, রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি গ্রন্থের বিভিন্ন জায়গায় প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও সিন্ধু সভ্যতার নগর নির্মাণ এবং পয়ঃপ্রণালী পরিকল্পনা দেখেও স্পষ্ট বোঝা যেত সেই সময়ের মানুষ জীবনের সঙ্গে পরিবেশকে একইভাবে গুরুত্ব দিতেন।

Photo of সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরি বিভিন্ন  বাড়িগুলি দেখতে পারেন.. 2/7 by Deya Das

সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে পরিবেশকে স্বচ্ছ সুন্দরভাবে বাঁচিয়ে রাখতে এবং প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করতে কিন্তু শুধু এই যুগের মানুষ নয়, বহু আগে থেকে তার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেমন-

সবুজ রঙের বাড়ি:

Photo of সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরি বিভিন্ন  বাড়িগুলি দেখতে পারেন.. 3/7 by Deya Das

গত কয়েক দশক ধরে এইরকমের সবুজ বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য হল প্রাকৃতিক সম্পদের যথাসম্ভব কম অপচয়। এই ধরনের বাড়ি নির্মাণের সময় বিভিন্ন উপাদানগুলিকে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। পুনর্নবীকরণ শক্তির ব্যবহার করা হয়। শুধু তাই নয়, বাড়ি নির্মাণস্থলে যে সমস্ত সহজলভ্য দ্রব্য পাওয়া যায় তাই দিয়েই বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। বাড়ির ভিতরে ন্যূনতম শক্তির ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। বর্জ্য পদার্থ, জল নিষ্কাশন-এর জন্য যথেষ্ট ভাল বন্দোবস্ত থাকে। গৃহের ভিতর আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বায়ু চলাচল, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, আলোর ব্যবস্থা সবকিছুই করা হয়। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রেখে, প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় কমাতে কমানোর জন্য শুধু বাড়িটি তৈরি করা হয় না, বাড়ির ভিতরতি যে সমস্ত দ্রব্য দিয়ে সজ্জিত হয় সেগুলিও পরিবেশের মান নির্ধারক।

অজন্তা গুহা:

Photo of সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরি বিভিন্ন  বাড়িগুলি দেখতে পারেন.. 4/7 by Deya Das

ভারতবর্ষের সবচেয়ে প্রাচীন গুহা অজন্তায় পাথর কেটে এমন ২৯ টি নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে স্থপতি নির্মাণকারীরা হাতে-কলমে প্রাকৃতিক সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে শিখিয়েছেন। গুহাগুলিতে ভোল্টেজ সিলিং নির্মাণ করা হয়েছে, যার ফলে সূর্যরশ্মি যখন সেগুলির উপর এসে পতিত হয় তখন তা থেকে সূর্যরশ্মি নির্গত হয়ে সম্পূর্ণ প্রার্থনা ঘরগুলোকে আলোকিত করে তোলে। শুধু তাই নয়, এই প্রার্থনা ঘরগুলির মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদকে এমন ভাবে কাজ করানো হচ্ছে, যা থেকে ঘরগুলির উষ্ণ বাতাস শীতল বাতাসে পরিণত হয়ে আশেপাশে সমস্ত ঘরগুলি কেউ শীতল করে দেয়।

কোব পদ্ধতি:

Photo of সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরি বিভিন্ন  বাড়িগুলি দেখতে পারেন.. 5/7 by Deya Das

প্রাচীন প্রাচীন যুগের গৃহনির্মাণের জন্য আরেকটি অন্যতম উপাদান হল কোব (Cob)। এটি জল, বিভিন্ন রকমের মৃত্তিকা এবং খড়ের মিশ্রণ। কবরের মাধ্যমে ঘরে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত দেওয়াল খাঁজকাটা ছাদ এমনভাবে গৃহ নির্মাণ করা হয়, যা শীতল অঞ্চলে গৃহকে গরম রাখতে সাহায্য করে। লাহোল এবং স্পিতি অঞ্চলে এইরকম ঐতিহ্যবাহী ঘর দেখতে পাওয়া যায়। এই অঞ্চলে কিছু কাদা মাটির ঘর দেখা যায় যেগুলি তাপকে ধরে রাখতে সাহায্য করে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে বেশকিছু এই ধরনের গৃহ দেখতে পাওয়া যায় তবে এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল- স্পিতির কাদা মাটি দিয়ে তৈরি ৯৯৬ সিই মঠটি। এইভাবে নির্মিত ঘরগুলির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এইগুলি পরিবেশ বান্ধব এবং ভূমিকম্প প্রতিরোধী।

ইগলু:

Photo of সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরি বিভিন্ন  বাড়িগুলি দেখতে পারেন.. 6/7 by Deya Das

প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে ইগলু এক প্রকার গৃহ নির্মাণের পদ্ধতি। বরফের টুকরোগুলিকে গম্বুজ আকারের সাজিয়ে তৈরি করা হয় এই গৃহ। এই গৃহগুলি সামনে একটি ছোট দরজা থাকে এবং ঘরের ছাদে একটি ভেন্টিলেশন থাকে যেটি ঘরের তাকে বাইরে বের করে দেয় তাতে বরফের চাঙ্গর গলে যায় না।

বাঁশের বাড়ি:

Photo of সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরি বিভিন্ন  বাড়িগুলি দেখতে পারেন.. 7/7 by Deya Das

পরিবেশবান্ধব বাড়ি তৈরি করার জন্য বাঁশ একটি অন্যতম উপাদান। এই বাঁশ দিয়ে তৈরি বাড়িগুলি তুলনামূলক টেকসই হয় এবং জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা খুব ভাল হয়। ঘরগুলো অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা থাকে আর প্রাকৃতিক শক্তিকে পুনর্নবীকরনে সাহায্য করে। আছেন কাল থেকে শুধু ভারতবর্ষ নয় চিনেও এই রকমের বাড়ি নির্মাণ করা হয়।

বাওলি:

প্রাচীন ও মধ্যযুগের স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম একটি উদাহরণ হল বাওলি, যা ধাপ কূপ নামে পরিচিত। বাওলি মূলত মনুষ্যসৃষ্ট একটি ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণের পদ্ধতি। ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় যখন জল সংকট দেখা দিয়েছিল তখন এই বাওলিড় মাধ্যমে সেই অঞ্চলের বাসিন্দারা পানীয় জল এবং নিত্যদিনের কাজের জল সংরক্ষণ করত। হরপ্পা সভ্যতায় এই বাওলি প্রক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায়।

উপরিউক্ত প্রতিটি পদ্ধতি কিন্তু পরিবেশকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, পরিবেশের বাস্তুতন্ত্রকেও সমানভাবে বজায় রাখে। আর তাই হয়ত এই সমস্ত কিছুর উপর নির্ভর করে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ছাড়পত্র কবিতায় লিখেছেন-

“এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি

নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।