বেগম থেকে বেগমপুরী নাকি বেগুনি থেকে বেগমপুরী? চলুন দেখে নেওয়া যাক

Tripoto
Photo of বেগম থেকে বেগমপুরী নাকি বেগুনি থেকে বেগমপুরী? চলুন দেখে নেওয়া যাক 1/1 by Deya Das
বেগমপুরী শাড়ি (ছবি সংগৃহীত)

পুজো হোক কিংবা অনুষ্ঠান যে কোনও কিছুতেই বাঙালি মেয়েরা শাড়ি পরতে পিছুপা হয় না। সারা বছর বিভিন্ন ধরনের ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরার পরেও শাড়িতে কিন্তু নারীর সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়। শুধু তাই নয় একটু অন্যরকম পোশাকে দু'তিনটে প্রোফাইল পিকচার করার মতো ছবি তুলতেও অনেকে শাড়ি পরে থাকেন। ঢাকাই জামদানি, বালুচরী, বোমকাই, কাঞ্জিভরম, ভাগলপুরি সিল্ক, বেনারসির মতো বর্তমানে বেগমপুরী শাড়িও বেশ প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। শাড়ির কাজ বা নকশা দেখে এবং রংয়ের কারুকার্যতা কিন্তু সবসময় এই শাড়িকে পৃথক করে তুলেছে। তাহলে দেখা যাক এই বেগমপুরী শাড়ি আসলে কী? কোথা থেকে এসেছে?

বেগমপুরী শাড়ির উৎস:

তাঁতিরা শাড়ি বুনছেন (ছবি সংগৃহীত)

Photo of Bardhaman, West Bengal, India by Deya Das

হুগলি জেলার ছোট্ট শহর বেগমপুর। হাওড়া বর্ধমান লাইন ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলেই বেগমপুর স্টেশন। এই বেগমপুরে হ্যান্ডলুমের সুন্দর সুন্দর শাড়িগুলি তৈরি হয়, যা এখানকার জায়গার নামে অর্থাৎ বেগমপুরী শাড়ি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বেগমপুরের সমবায় সমিতির মাধ্যমে তাঁতশিল্পের রমরমা বিস্তার। বেগমপুরে খরসরাই বলে একটি গ্রাম রয়েছে, যেখানে তাঁতে আজও প্রাচীন পদ্ধতিতে কাপড় বোনা হয়ে থাকে। তাই পাওয়ারলুম ছেড়ে এখানে হ্যান্ডলুমের ওপরেই বেশি জোর দেওয়া হয়। তাতে একটু সময় সাপেক্ষ হলেও মান কিন্তু উন্নত থাকে। তবে কোথাও কোথাও উৎপাদন শক্তি বাড়ানোর জন্য পাওয়ারলুমও ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলা উভয় সমানভাবে এই কাপড় বুনন করে থাকেন।

বেগমপুরী শাড়ি তৈরির প্রস্তুতি পর্ব:

প্রস্তুতির পর্ব (ছবি সংগৃহীত)

Photo of বেগম থেকে বেগমপুরী নাকি বেগুনি থেকে বেগমপুরী? চলুন দেখে নেওয়া যাক by Deya Das

শহর থেকে প্রথমে সুতো নিয়ে আসা হয় এবং সেগুলিকে ছাড়িয়ে পরিশ্রুত জলে বিভিন্ন দ্রবণ এবং কাঁচা মিশ্রণ মিশিয়ে রং করা হয়। তারপর সেই সুতোগুলিকে রোদে শুকানো হয়। সুতো শুকিয়ে যাওয়ার পরে সেই সুতোগুলি বেগমপুরের বিভিন্ন তাঁতির ঘরে পাঠানো হয়। এরপর সুতোগুলিকে পরপর হ্যান্ডলুম বা পাওয়ারলুম মেশিনের সামনে সাজিয়ে রাখা হয়। তারপর হ্যান্ডলুম মেশিনের সাহায্যে কাপড় বুনন শুরু হয়। কাপড়ে যেই রকমের নকশা থাকবে তার ওপর নির্ভর করে পরপর রঙের সুতো সাজিয়ে বুনন প্রক্রিয়া চলতে থাকে। শেষ ধাপে কাপড়টিকে মাড় দেওয়া হয় এবং কাপড়ের মসৃণতা জন্য পরিষ্কার জল সেটিকে মোছা হয়।

বেগমপুরী শাড়ির বৈশিষ্ট্য:

• বেগমপুরী শাড়ি ওজনে অত্যন্ত হালকা, স্বচ্ছ এবং পরিধান করলে আরামদায়ক হয়।

• সাধারণ নকশাকাটা শাড়ি তৈরি করতে মোটামুটি এক থেকে দুইদিন সময় লাগে। কিন্তু নকশা খুব ভারী রকমের হয় তবে, তা তৈরি করতে পারে পাঁচ থেকে ছয় দিন সময় লাগে ।

• বেগমপুরী শাড়িতে বিভিন্ন রকমের পাড় দেখতে পাওয়া যায় যেমন- নকশা পাড়, গঙ্গা-যমুনা পাড়, মন্দির পাড় ইত্যাদি।

• তবে সাধারন পাড়ে দুটো রং কালো লাল মিশিয়ে প্রস্তুত করা হয়। সেটি মাঠপাড় নামে পরিচিত।

• এই শাড়িতে বিপরীত পাড়ের একটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় অর্থাৎ যাকে কন্ট্রাস্টিং পাড় বলা হয়; যেমন- লাল, বেগুনি, কমলা, কালো, সবুজ এবং আরও অনেক রঙের পাড় দেখতে পাওয়া যায় ।

• বেগমপুরী শাড়িতে বিভিন্ন ধরনের কাজ, যেমন- বিষ্ণুপুরি কাজ, পোড়ামাটির মন্দির ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যায়।

• বেগমপুরী শাড়িড় ভিতরে এবং শাড়ির পাড়ে কন্ট্রাস্ট শেড দেখতে পাওয়া যায়।

• খেজুরচুরির আঙ্গিকে বোনা হয় মূলত ধোনেখালি ঘরানার শাড়িগুলিকে।

বেগমপুরী শাড়ির যত্ন:

• প্রথমদিকে কয়েকবার এই শাড়ি ধোয়ার সময় ড্রাই ক্লিন করা দরকার।

• অবশ্যই ঠান্ডা জলে ধোয়া উচিত।

• ক্ষারবিহীন সার্ফ দিয়ে কাপড় কাচা প্রয়োজন।

• কাচার পরে কখনো নিংড়ানো উচিত নয়।

• ধোয়ার পর শাড়ি অবশ্যই ছায়ায় মেলে রাখতে হবে কারণ সূর্যের রশ্মি এই শাড়ির ক্ষতি করে।

• শুকানোর পর কুঁচকানো জায়গাটি ঠিক করার জন্য কাপড়টি টানাটানি করা উচিত নয়।

• কাচার পর বেশিক্ষণ শুকানোর প্রয়োজন হয় না।

• মধ্য থেকে হালকা তাপমাত্রায় শাড়িটি ইস্ত্রি করা প্রয়োজন।

• কাচার পর বেগমপুরী শাড়ি সাধারণত সংকুচিত হয়ে যায়। তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সংকুচিত হওয়া বেগমপুরী শাড়ির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন।