একদিকে কল্লোলিনী তিলোত্তমা ব্রিটিশ শাসনে হয়ে উঠছে এক মহানগরী, অন্যদিকে চিন দেশ থেকে হাজারে হাজারে মানুষ মহাসমুদ্র পেরিয়ে এসে পৌঁছাচ্ছে সেই মহানগরীর তীরে। কালক্রমে কলকাতার বুকে গড়ে উঠছে এক নয়, দু'দুটি চিনাপাড়া। মধ্য কলকাতার টেরিটি বাজারের চিনে বসতি অপেক্ষাকৃত বেশি পুরনো হলেও, অচিরেই বাইপাসের ধারে অবস্থিত ট্যাংরাও নিজ গুণে হয়ে উঠেছে কলকাতার অন্যতম চৈনিক অঞ্চল। স্বাভাবিক ভাবেই সঙ্গে সঙ্গে হয়েছে চিনা খাবারের বিকাশ। ট্যাংরার চিনা পাড়ার প্রতিবেশীদের খাঁটি চিনা খাবারের স্বাদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যে বেশ কিছু পরিবার নিজেদের বাড়ি থেকেই শুরু করেছিল খাবার রাঁধা আর পরিবেশনের ব্যবসা। জনপ্রিয়তা বেড়েছে, কেউ কেউ সেই ব্যবসা বাড়িয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন আস্ত রেস্টুরেন্ট, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে রমরমিয়ে। আজ থাকল ট্যাংরার চিনেপাড়ার এমন কিছু জিভে জল আনা রেস্টুরেন্টের সন্ধান, যা কলকতাবাসীদের কাছে পরিচিত হলেও, দেশের বাকি প্রান্তের মানুষদের কাছে যথার্থই লুকানো সম্পদ, হিডেন জেমস।
কিমলি
কিমলির পথ চলার শুরু হল আমলে, বাকিদের তুলনায় বয়সে নেহাতই শিশু। কিন্তু তাই বলে স্বাদের দিক থেকে কোনও অংশে সে কম নয়। বাঘা বাঘা ওস্তাদদের মাত দিতে কিমলি সিদ্ধহস্ত। তবে এই কিম-লি কে গোলপার্কের কাছের কিমলির সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না। চাইনাটাউন ট্যাংরার কিম-লি একটি আদ্যোপান্ত পর্ক স্পেশালটি রেস্টুরেন্ট, মেনুতে শুয়োর মাংসের হরেক সম্ভার।
কী কী খাবেন : চার সিউ, পর্ক মিট বল সুপ, কাপ তাই নুডলস।
কোথায় : ৬০, মঠেস্বরতলা রোড, ট্যাংরা
আঃ লিউং
সিঙ্গারা চাউ। হ্যাঁ, আঃ লিউং এর খ্যাতি কিন্তু এই সিঙ্গারা চাউ দিয়েই শুরু। তবে জিনিসটি কিন্তু চাউ ভরা সিঙ্গারা, বা সিঙ্গারার প্লেটে ঘিয়ে ভাজা সিঙ্গারা নয়। আসলে জিনিসটি হল নরম তুলতুলে স্টিমড ওয়ান্টনের সঙ্গে ঝোল ঝোল নুডলসের এক বাটিতে মাখামাখি সহাবস্থান। ফলে প্রতি কামড়ে মোটা মোটা নুডলস, স্যুপ আর চিকেনের টুকরোর সঙ্গে মুখে এসে পড়বে মোমোর জাতভাইয়ের টুকরো টাকরা। খেয়ে আসুন, জিভে লেগে থাকবে। তবে যান সকাল সকাল, অনেক সময় ব্রেকফাস্টের সময়েই সব উড়ে যায়।
কী কী খাবেন : হাকা চাউ, সিঙ্গারা চাউ, মিক্সড ফ্রায়েড রাইস
কোথায় : ১১৯, ট্যাংরা
কাফুলক
বয়সের দিক থেকে আরেক নবীন সদস্য, তবে অল্প দিনেই শহরের ভোজনরসিকদের মনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে কাফুলক। ছিমছাম ডেকোরেশন, মানানসই সার্ভিস আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ইন্টিরিয়র ছাড়াও যেটা মনে দাগ রেখে যায় সেটা হল এখানকার খাবার। আড়ম্বর নেই, হয়তো প্লেটিং নিয়ে মাথাব্যথা নেই, কিন্তু স্বাদের দিক থেকে নেই কোনও নালিশের জায়গা। বিগত বেশ কিছু বছরে কাফুলকে নানা ধরনের ভোজনরসিক ক্লাবের ভোজ-আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং কাউকেই নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়নি। আগামিদিনে চায়নাটাউনের স্টার রেস্টুরেন্ট হওয়ার দাবি রাখে আজকের কাফুলক।
কী কী খাবেন : চিকেন ড্রামস্টিক, প্ৰণ কাটলেট, গার্লিক স্টিম ফিশ ফিলে, চিকেন সেজওয়ান চাউ।
কোথায় : ৪৭, নিউ ট্যাংরা রোড
গোল্ডেন জয়
ট্যাংরার চাইনাটাউনের বিগ থ্রির মধ্যে গোল্ডেন জয় অন্যতম। আছে আলাদা ফ্যামিলি এবং জেন্টস সেকশন। আছে আস্ত গোটা বোতল পানীয় অর্ডার দেওয়ার সুযোগ। মেনুতে আছে বহু পুরনো রেসিপি, যা পুরোনো কলকাতার স্বর্ণযুগকে মনে করিয়ে দেয়। বন্ধু বান্ধব বা সপরিবারে যাওয়ার মতো আদর্শ জমজমাট জায়গা গোল্ডেন জয়। এদের প্রতি ডিশে খাবারের পরিমাণ থাকে প্রচুর পরিমাণে, তাই অর্ডার করার সময় একটু বুঝেশুনে আনতে বলাই ভাল।
কী কী খাবেন : ফিশ সুই মাই, রোস্ট ডাক, চিকেন ড্রাগন রোল, ড্রাগন আইস, শ্রিম্প কেক, প্ৰণ থাই ফ্রায়েড রাইস।
কোথায় : ট্যাংরা ৫০/১, তপসিয়া, মঠেশ্বরতলা রোড।
বিগ বস
অনেকের মতে বিগ বস সত্যি এই এলাকার বিগ বস। চক্ষু কর্ণের বিবাদ ভঞ্জনের উপায়? বিগ বসে গুছিয়ে বসে চর্ব্য চস্য লেহ্য পেয় সাবাড় করে তুল্য মূল্য বিচার করা। একসাথে বসে এটা ওটা খেতে খেতে আড্ডা দেওয়ার মতো জায়গা বিগ বস। ক্লাসিক চাইনাটাউনের রেস্টুরেন্টের মটন এখানেও অল্প দামে প্রচুর পরিমাণে খাবার পাওয়া যায়, সব কটি ফুল ডিশ একসাথে ৩ বা ৪ জন মিলে খেতে পারবেন। উপরি পাওনা এদের নিজস্ব পার্কিং স্পেস আর উঁচুদরের সার্ভিস।
কী কী খাবেন : লুৎ মি চিকেন, ড্রামস অফ হেভেন, চিলি মটন, মিক্সড ফ্রায়েড মি ফুন, কুং পাও চিকেন, হুনান ফিশ।
কোথায় : ৫৪ সি, মঠেশ্বরতলা রোড, ট্যাংরা
বেজিং
ট্যাংরার আরেক পাওয়ারহাউস পারফর্মার এই বেজিং রেস্টুরেন্ট। সন্ধেবেলার দিকে গেলে দেখবেন বেশ পরিপাটি স্নিগ্ধ রূপ, কিন্তু রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও প্রাণোচ্ছল হয়ে ওঠে বেজিং। কলকাতা ট্যাংরা-চাইনিজ ঘরানার অন্যতম আদি পিঠস্থান বেজিং রেস্টুরেন্ট। ডেকোরেশন বা এমবিয়েন্স বিচারে খুব হাই ফাই বা ফ্যান্সি না হলেও, খাবার গুণে বেজিং এখনও চায়নাটাউনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ খাবার জায়গা।
কী কী খাবেন : ব্ল্যাক পেপার ল্যাম্ব, সাংহাই চিকেন, চিলি গার্লিক পেপার ফিশ, ড্রাই চিলি ক্র্যাব ক্ল, মিক্সড ক্যান্টোনিজ নুডলস।
কোথায় : ১০৫, গোল্ডেন আম্পায়ারের উল্টোদিকে, তপসিয়া এন রোড।