আমাদের প্রত্যেকের জীবনে বাবা শব্দটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। জায়গা অনুযায়ী এই ডাকের ভিন্নতা থাকলেও, পিতা শব্দটির দায়িত্ববোধ কিন্তু আলাদা নয়। তিনি এমন একজন মানুষ যিনি সারাদিন সমস্ত বাধাবিঘ্নতাকে পেরিয়ে সংসারের জন্য নিঃশব্দে সব কাজ করে চলেন। একটি পুরো সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েও হাসিমুখে রাত্রিবেলা বাড়ির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন। প্রত্যেকটি মানুষের চাহিদা পূরণ, সন্তানের জীবনের মেরুদন্ড হিসেবে যার আত্মত্যাগ ও বলিদান সবথেকে বেশি, এই বছর পিতৃ দিবসে তাকেই আমরা সম্মান জানাতে চাই।
পিতৃ দিবসের সূচনালগ্ন-
মাতৃ দিবসের পাশাপাশি পিতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আনুমানিক ১৯০৮ সালের ৫ই জুলাই আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের গির্জায় এটি প্রথম পালিত হয়। অন্যদিকে ধরা হয়, ওয়াশিংটনের সনোরা স্মার্ট ডড নামে এক মহিলার মাথাতেও এই ধরনের একটি অনুষ্ঠানের চিন্তা ভাবনা আসে। পরবর্তীকালে, ডডের কথা মাথায় রেখেই ১৯১০ সালে ১৯শে জুলাই পিতৃ দিবস পালন করা হয়। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সাড়ম্বরে পিতৃ দিবস পালন করতে দেখা যায়। বর্তমানে প্রায় ৫২টি দেশে প্রতি বছর জুলাই মাসে তৃতীয় রবিবার পিতৃ দিবস পালন করা হয়।
আমাদের মত সাধারণ মানুষের জীবনের পিতার যে প্রভাব রয়েছে, বহুকাল পূর্বে পৌরাণিক কাহিনীতেও কিন্তু তাদের সেই মূল্যবোধ, দায়িত্বগ্রহণ করতে দেখা গিয়েছে। সেইরকমই পৌরাণিক ইতিহাসের কিছু বিখ্যাত পিতা চরিত্রকে আজ আমরা তুলে ধরব।
পৌরাণিক পিতা-
১. দশরথ-
অযোধ্যার রাজা রামচন্দ্রের পিতা দশরথ। তিন রানী এবং চার পুত্রসন্তান নিয়ে তিনি ইতিহাসের পাতায় আজও জাজ্বল্যমান। যিনি নিজের সম্মান এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র রামচন্দ্রকে ১৪ বছরের জন্য বনবাসে পাঠিয়েছিলেন।
২. পবন দেব-
মলয় পর্বতে বানর কেশরী ও তার স্ত্রী অঞ্জনার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন মহাবীর হনুমান। তিনি ছিলেন পবন দেবের ঔরসজাত সন্তান। শুধু তাই নয়, হনুমানের পালিত পিতা পবন দেব হওয়ায় মহাবীর হনুমান পবনপুত্র নামে পরিচিত।
৩. মহাদেব শিব-
ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী, ঋষি কাশ্যপের কন্যা মনসা হলেও, তিনি দেবাদিদেব মহাদেবের পালিত কন্যা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। শিবের পত্নী মাতা চন্ডী প্রথমে মনসাকে মেনে নিতে না পারলেও পরবর্তীতে তাঁর স্বামীর অনুরোধে মনসাকে নিজের কন্যার সম্মান দেন। মনসামঙ্গল কাব্য অনুযায়ী, মর্তে নিজের পুজো প্রচলনের জন্য মনসা শিবভক্ত চাঁদ সওদাগরের হাত থেকে পুজো গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের বরিশাল জেলার গৈলা গ্রামে মধ্যযুগের কবি বিজয় গুপ্তের প্রতিষ্ঠিত মনসা মন্দির রয়েছে, যা দুই বাংলাতে সমানভাবে জনপ্রিয়।
৪. রাজর্ষি জনক-
হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ-এর এক অন্যতম নারী চরিত্র সীতা মহারাজা জনক-এর পালিত কন্যা। তাই তাঁর অন্য একটি নাম জানকী।
৫. রাজর্ষি ধ্রুপদ-
পাঞ্চাল রাজ্যের কন্যা রাজা দ্রুপদের কন্যা দ্রৌপদী, যিনি পাঞ্চালী নামেও পরিচিত। এছাড়াও হিন্দু মহাকাব্য মহাভারতের প্রধান চরিত্র পঞ্চপান্ডবের সহধর্মিনী হলেন দ্রৌপদী।
৬. রাজা শূরসেন-
মহাকাব্যের এক অন্যতম চরিত্র কুন্তী ছিলেন যাদববংশীয় রাজা শূরসেনের কন্যা। তবে পুরাণ অনুযায়ী, কুন্তী- ভোজ ছিলেন কুন্তীর পালিত পিতা।
৭. নীলধ্বজ-
মহাভারতে অর্জুনের অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়াটির গতিরুদ্ধ করেছিল প্রবীর। এই প্রবীর ছিলেন নীলধ্বজের পুত্র।
উপরিউক্ত পুরাণের এই চরিত্রগুলি প্রত্যেকেই স্বমহিমায় পিতার ধর্ম পালন করেছিলেন। কখনও কখনও নিজের প্রতিশ্রুতি রাখতে বা নিজের সম্মান রক্ষার্থে এই সমস্ত পিতারা নিজের সন্তানের প্রতি অবিচার করলেও, পুরাণে তাঁদের ভালবাসা এবং স্নেহময় আবেগ কিন্তু একজন সাধারন পিতার মতই দেখানো হয়েছে।