এবার নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখতে খুব বেশি দূরে আপনাকে যেতে হবে না চলে আসুন ছত্তিশগড়...

Tripoto

স্কুলজীবনে পড়ার বইতে আমরা নায়াগ্রা জলপ্রপাতের নাম প্রায় সকলেই শুনেছি | ছেলেবেলার সেই ভূগোল পাঠ্যের বইতে লেখা এই জলপ্রপাতের ছবি দেখে, এই জলপ্রপাত চাক্ষুষ করার ইচ্ছা সমস্ত শিশুমনকেই নাড়া দিয়ে যায়, তা বলাই বাহুল্য | তাই নয় কি? সেই রকমই, ভারতবর্ষের ছত্তিসগড় রাজ্যের বাস্তার জেলায় অবস্থিত চিত্রকূট জলপ্রপাত ভারতের নায়াগ্রা জলপ্রপাতের আখ্যায় ভূষিত।

এই বিখ্যাত জলপ্রপাত ও তার পারিপার্শ্বিক প্রকৃতির অজানা রহস্য সম্পর্কে জানতে হলে চলে আসুন ছত্তিশগড় | আর এই জায়গা ও এই জলপ্রপাত সম্বন্ধে যদি এখনও সেই ছেলেবেলার মতোই কৌতূহল জাগে, তাহলে একটি ছোট্ট ভ্রমণের মাধ্যমে চিনে নিন তথাকথিত অজানা এই চিত্রকূট জলপ্রপাতটিকে |

চিত্রকূট ফলস্ সম্পর্কিত কয়েকটি তথ্য:

জল আর বাষ্পমাখা পরিবেশ (ছবি সৌজন্যে: সঞ্চিতা সোনি)

Photo of Chitrakoot Falls, Tiratha, Chhattisgarh, India by Deya Das

ছত্তিশগড় রাজ্যের বাস্তার জেলার জগদলপুর নামে এক অঞ্চলের পশ্চিমাংশে এই জলপ্রপাতটির অবস্থান | এই রাজ্যের বিখ্যাত ইন্দ্রাবতী নদীর গতিপথ থেকেই উৎপত্তি এই চিত্রকূট জলপ্রপাতের | ভৌগোলিক সংজ্ঞায় horseshoe gorge অর্থাৎ অশ্বখুরাকৃতি সংকীর্ণ পথ পেরিয়ে নদীটি প্রায় ৯৫ ফুট উচ্চতা থেকে উলম্ব ভাবে পতিত হয়েছে; নদীর এই দৃশ্যপটটি প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ |

জগদলপুর থেকে মাত্র ৩৮ কিমি দূরত্বে অবস্থিত চিত্রকূট থেকে বর্ষাকালের ইন্দ্রাবতী নদীর ভয়ঙ্কর রূপটা যেমন তীব্রভাবে প্রত্যক্ষ হয় তেমনই বছরের অন্যান্য সময়েও নদীর শান্ত জলধারা ও আঁকা বাঁকা গতিপথ ও জলপ্রপাতের রূপে প্রবাহিত হওয়ার ছবিটা ও বেশ মোহময়ী |

প্রায় ৩০০ মিটার প্রশস্ত এই জলপ্রপাতটি বর্তমানে দর্শকদের মনোরঞ্জনের উপযোগী হয়ে উঠেছে | এটা বলাই বাহুল্য যে নদী নির্মিত ঝর্ণাধারার বহমানতার এই বাস্তব ছবিটা ছোটবেলায় মনের তৈরি ক্যানভাসের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর | স্থানীয় নৌকা চালকের সাহায্য নিয়ে আপনি সরাসরি পৌঁছে যেতে পারেন জলপ্রপাতের উৎপত্তিস্থল-এ | ইচ্ছা করলে এই ঝর্ণার জলে নিজেকে ভিজিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির প্রেমে নিজেকে হারিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তটা একেবারেই মন্দ হবে না |পড়ন্ত বিকেলে সূর্যাস্তের মলিন আলোয় মাখা জলপ্রপাতের রূপের সঙ্গে সঙ্গে সারাদিনের ঝকঝকে আলোর সঙ্গে বিপুল জলরাশির বিচ্ছুরণ আর প্রকৃতির এই রূপ জীবনের স্মৃতির পাতায় অমলিন থাকবে |

ভ্রমণের সেরা সময়:

ছত্তিসগড়-এর এই সুন্দর প্রাকৃতিক সৃজনী উপভোগ করার শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সময়টিকে | অর্থাৎ বর্ষাকালীন সময়, এই সময় ইন্দ্রাবতী নদীর প্রবাহমানতায় অতিরিক্ত পলি-মাটি জমা হলেও, প্রকৃতির ভয়ঙ্কর সুন্দর ও অবিশ্বাস্য রূপটির প্রত্যক্ষদর্শী থাকতে আপনাকে বর্ষাকালেই এখানে আসতে হবে |

তবে, জলপ্রপাত ছাড়াও পারিপার্শ্বিক প্রাকৃতিক দৃশ্যাবল প্রাণভোরে উপভোগ করার জন্য এবং প্রকৃতির বিভিন্ন রূপ কে ক্যামেরা বন্দি করার জন্য অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী মাসটি ভ্রমণের পক্ষে আদর্শ | ভ্রমণের জন্য প্রকৃতি প্রেমিক মানুষ সাধারণত ঠান্ডার সময় টিকেই বেছে নেন |

কভাবে পৌছেবেন:

১. বিমানে – চিত্রকূট ফলস পৌঁছানোর নিকটতম বিমানবন্দরটি ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুর-এ অবস্থিত |বিমানবন্দর থেকে এই জলপ্রপাতের দূরত্ব প্রায় ২৮৪ কিমি | বিমানবন্দর পৌঁছে ১টা ট্যাক্সি ভাড়া করে ৫ ঘন্টার দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান গন্তব্যে |

২. ট্রেনে – চিত্রকূট জলপ্রপাত পৌঁছানোর জন্য নিকটবর্তী রেল স্টেশনটি হলো জগদলপুর | এই স্টেশনটি কিরান্দুল থেকে ট্রেনে করে বিশাখাপত্তনম-এর যাত্রার পথে অবস্থিত| স্টেশন থেকে একটা ছোট গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যান গন্তব্যে |

৩. সড়কপথে – পর্যটকরা ইচ্ছা করলে সড়কপথ ধরে প্রকৃতির বিভিন্ন রূপ দর্শন করতে করতে পৌঁছে যেতে পারেন চিত্রকূট | দিল্লি থেকে জগদলপুরের দূরত্ব প্রায় ১৪৫০ কিমি, সড়কপথে গন্তব্যে পৌঁছতে আপনার সময় লাগবে ২০ ঘণ্টার মতো | এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, যাত্রা পথে আপনার সঙ্গী হতে চলেছে কয়েকটি প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক স্থান - যেমন গোয়ালিয়র, এবং ঝাঁসি শহর | এরপর, বালাঘাট-এর পাহাড় ও জঙ্গল পরিবেষ্ঠিত রাস্তা অনুসরণ করে আরও ঘন্টা পাঁচেক দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান চিত্রকূট |

জগদলপুরের ট্যাক্সি ভাড়ার খরচ:

জগদলপুর স্টেশন থেকে চিত্রকূট-এর হোটেল পর্যন্ত ট্যাক্সি ভাড়ার খরচ ৫০০ টাকার মতো | আর জগদলপুর থেকে চিত্রকূট পৌঁছনো ও তিরাথগরঃ ফলস মিলিয়ে ১ দিনের ট্যাক্সি সহযোগে ভ্রমণের খরচ প্রায় ৩০০০ টাকা |

কোথায় থাকবেন:

দান্দামি লাক্সারি রিসর্ট:

চিত্রকূট ফলস ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটি আরও রমণীয় করে তুলতে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন দান্দামি লাক্সারি রিসর্টে| এই রিসর্টটি জগদলপুর শহর থেকে প্রায় ৩০ কিমি দূরত্বে অবস্থিত | রিসর্ট-এর ১০১ নং রুম থেকে আপনি সাক্ষাৎ দর্শন পেতে পারেন চিত্রকূট জলপ্রপাতের|হোটেলের রুমে বসে প্রকৃতির অকৃত্রিম মহিমায় অভিষিক্ত হতে চাইলে আপনাকে আসতেই হবে এই রিসর্ট-এ |

পর্যটকদের উদ্দেশ্যে হোটেলটি তে প্রায় ১৬টি দুই সজ্জা বিশিষ্ট কটেজ এবং ১৩ টি বিলাসবহুল তাঁবুর ব্যবস্থা রয়েছে | এছাড়াও, অন্যান্য সুবিধা যেমন লন্ড্রি পরিষেবা, রেস্টুরেন্টের স্যাটেলাইট টিভি ইত্যাদি রয়েছে | হোটেলে থেকে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য অভিজ্ঞ এবং স্থানীয় পথপ্রদর্শকের সুবিধাও রয়েছে |

জায়গাটি লোকালয় থেকে অনেকটাই দূরে অবস্থিত, তাই পর্যটকদের মোবাইল অসংযোগের কারণে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় | তবে, BSNL-এর নেটওয়ার্কের সাহায্যে আপনি এখান থেকে আপনার পরিবার-এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন |

খরচ:

• এই রিসর্টে একজনের রাত্রিবাসের খরচ প্রায় ২০০০ টাকা |

• আর দুজন মানুষের রাত্রিবাসের খরচ পড়বে ২৫০০ টাকা |

রিসর্টের ঠিকানা:

জগদলপুর থেকে ৩০ কিমি দূরত্বে অবস্থিত এই রিসোর্টের ঠিকানা হলো - বার্সোর রোড , চিত্রকূট , ছত্তিশগড় |

চিত্রকূট জলপ্রপাত ও অন্যান্য আকর্ষণ:

১. জলপ্রপাত ভ্রমণ ও রামধনু দর্শন:

সন্ধে নামার ঠিক আগে জলপ্রপাতের রূপটা সঙ্গে কোনো স্বর্গীয় দৃশ্যের সাথে তুলনা করা যায় |পড়ন্ত বিকেলে রামধনুর সাতটি রঙের আভায় বিকশিত হওয়া জলপ্রপাতের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে চাইলে চলে আসতে পারেন চিত্রকূটে | ভাগ্যশালী হয়ে থাকলে আপনিও এই স্বর্গীয় মুহূর্তের সাক্ষী হতে পারেন |

২. জলপ্রপাতের থেকে নির্মিত জলাধার এ নৌকোবিহার ও স্নান:

চিত্রকূট ফলসে্র এক মোহময়ী সৌন্দর্য (ছবি অসীম চৌধুরী)

Photo of এবার নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখতে খুব বেশি দূরে আপনাকে যেতে হবে না চলে আসুন ছত্তিশগড়... by Deya Das

আপনার বেড়ানোর অভিজ্ঞতাটি আরও আকর্ষক করে তুলতে চিত্রকূট জলপ্রপাত থেকে নিৰ্মায়মান এই জলধারাতে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে পারেন | নদীর পরিষ্কার ও স্বচ্ছ জলে একটা হালকা ডুব দিয়ে পরিচয় করে নিতেই পারেন জলজ প্রাণীদের সাথে | কিংবা নৌকাচালকদের সাহায্যে পৌঁছে যেতে পারেন জলপ্রপাতের উৎপত্তিস্থল, আর অঝোর ধারার জলে প্রিয়জনের সাথে ভিজে যাওয়ার মতো রোমান্টিক মুহুর্তকে ক্যামেরাবন্দি করে নিতে পারেন |

৩. কাঞ্জর ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের অন্তর্বর্তী তীর্থগড়:

জলপ্রপাত দর্শন - দুৰ্ভাগ্যবশত, এই ছত্তিশগড় রাজ্যটি এখনও তেমনভাবে পর্যটন স্থান হিসেবে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি | যদি আপনার একটু অফ বিট ট্যুর পছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে এই রাজ্যটি পরিদর্শন করে দেখতে পারেন | একই ট্রিপে চিত্রকূটের সঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন তীর্থগড় জলপ্রপাত | জগদলপুর থেকে এই তীর্থগর জলপ্রপাতের দূরত্ব প্রায় ৩৬ কিমি | প্রকৃতির অনন্য লীলাখেলার এই অকৃত্রিম দৃশ্য আস্বাদন করতে মাত্র ৬ কিমি পথ অতিক্রম করে পৌঁছে যেতে পারেন কাঞ্জর ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের নিকটবর্তী এই তীর্থগড় জলপ্রপাত|

৪. কুটুমসার গুহার রহস্য সন্ধান:

রহস্যে ঘেরা কুটুমসার গুহা (ছবি সৌজন্যে : অসীম চৌধুরী)

Photo of এবার নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখতে খুব বেশি দূরে আপনাকে যেতে হবে না চলে আসুন ছত্তিশগড়... by Deya Das

কুটুমসার গুহাটি কাঞ্জর ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের এক্কেবারে গভীরে অবস্থিত | স্থানীয় জনমত অনুসারে, প্রায় দুই দশক প্রাচীন এই ৩০০ মিটার অঞ্চল বেষ্টিত গুহাটি এশিয়ার বৃহত্তম ও বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তর গুহার শিরোপা পেয়েছে | এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, বর্ষাকালীন সময় অর্থাৎ জুন থেকে অগাস্ট পর্যন্ত সময়টিতে বৃষ্টি ও জল জমে থাকার কারণে এই গুহাটি ভ্রমণ করার সুযোগ থাকে না | তাই বর্ষাকালীন সময় ছাড়া, অন্য যেকোনো সময় ভারতীয় তথা বিশ্বের এই অনন্য নিদর্শন টি পর্যবেক্ষণ করে, গুহার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তার অজানা রহস্যের সন্ধান খুঁজে পেতে পারেন |

৫. কৈলাশ গুহা ভ্রমণ:

কাঞ্জর ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে মধ্যস্থ আরেকটি বিখ্যাত ভ্রমণ স্থান হলো কৈলাশ গুহা | এই গুহাটি প্রায় ১০০ মিটার লম্বা অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত | এই গুহার এক্কেবারে গভীরে চুনামাটির গঠনে শিবলিঙ্গ স্থাপিত রয়েছে | স্থানীয় লোকাচার অনুযায়ী, এই স্থানটির একটি আধ্যত্মিক মাহাত্ম রয়েছে | দেশের সমস্ত হিন্দু ধার্মিকগণ শুধুমাত্র এই শিবলিঙ্গ দর্শনের জন্য এই স্থানটি ভ্রমণ-এর জন্য বারংবার আসেন |

Photo of এবার নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখতে খুব বেশি দূরে আপনাকে যেতে হবে না চলে আসুন ছত্তিশগড়... by Deya Das

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন

(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)